শাহজালালে কন্ট্রোল টাওয়ার স্থাপনে জটিলতা কাটছেই না
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার স্থাপন প্রক্রিয়ায় জটিলতা বেড়েই চলছে। অদৃশ্য শক্তির কারণে বার বার থেমে যাচ্ছে রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার স্থাপন কাজ। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জটিলতার কারণে কাজ থেমে থাকায় বছর বছর বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়। ২০১২ সালে যে প্রকল্প ৭৫০ কোটি টাকায় শেষ করার কথা ছিল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর কমিশন বাণিজ্যের কারণে ২০১৬ সালে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকায়। ফলে গত চার বছরে ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও একশ্রেণির ব্যবসায়ীর সমন্বয়ে এ চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রটি শুধু রাডার নিয়েই ষড়যন্ত্র করছে না, তারা বিমানবন্দরের উন্নয়ন নিয়েও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দ্বিতীয় রানওয়ে, তৃতীয় টার্মিনাল, কার্গো ভিলেজসহ সব ধরনের উন্নয়ন কাজে চক্রটি নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে।
বেবিচক ও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানিয়েছে, ২০১২ সালে মন্ত্রিসভা কমিটি বেবিচকের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ৩৩০ কোটি টাকার ব্যয় অনুমোদন করে। তবে প্রস্তাবনায় বছরে ৭৬ কোটি টাকা করে ১০ বছরে ৭৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে একাধিক এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জাগো নিউজকে বলেন, আধুনিক রাডার স্টেশন না থাকায় সরকারের প্রতি বছর গড়ে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি অপচয় হচ্ছে। আর এ পুরো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ।
তবে জটিলতার কথা অস্বীকার করে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, পিপিপির আওতায় রাডার স্থাপন প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় বাড়েনি, যা বেড়েছে তা ১০ বছর ধরে পরিশোধ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল ব্যয়।
তিনি আরো বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের ব্যয় মূল্যায়ন প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এজন্য আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) থেকে একজন বিশেষজ্ঞ নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি আইকাও টিসিবি এক্সটার্নাল এক্সপার্ট। তিনি এরই মধ্যে প্রকল্প ব্যয় যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি বিভাগের পরিচালক উইং কমান্ডার জিয়া উল কবীর বলেন, বর্তমান রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার সিস্টেম অনেক পুরনো হওয়ায় এয়ারলাইন্সের গতিবিধি বা তথ্য পেতে সমস্যা হচ্ছে।
নতুন সমুদ্রসীমায় কোনো এয়ারক্রাফট প্রবেশ করলেও তা রাডারে ধরা পড়ছে না। নতুন রাডার প্রতিস্থাপন হলে বর্ধিত সমুদ্রসীমার ওপর দিয়ে কোনো এয়ারক্রাফট প্রবেশ করলেই তার ওপর চার্জ আরোপ করা যাবে।
উল্লেখ্য, সমুদ্রসীমা বেড়ে যাওয়ায় শুধু বিদেশি এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ওভারফ্লাইং নেভিগেশন ফি পাচ্ছে না সরকার। কারণ বর্তমান রাডার সিস্টেম বর্ধিত সমুদ্রসীমার ওপর দিয়ে যেসব এয়ারক্রাফট যাচ্ছে সেগুলো স্ক্যান করতে পারছে না।
ফলে সংশ্লিষ্ট এয়ারক্রাফটের ওপর কোনো চার্জও ধরা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, দেশের বর্তমান আকাশসীমার ব্যবহার করা অনেক এয়ারক্রাফটের অবস্থানও ধরতে পারছে না বিদ্যমান রাডার সিস্টেম, যা একটি দেশের জন্য চরম হুমকির।
আরএম/এএইচ/পিআর