আদালত থেকে আসামি পলায়ন : পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
ঢাকার আদালত থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। পুলিশের হেফাজত থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে এই বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে। অপরদিকে ক্ষুণ্ন হচ্ছে আদালতের ভাবমূর্তিও।
পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এজন্য বার বার আসামি পালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের দাবি, কিছু সদস্যের অসতর্কতার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঢাকার আদালত থেকে আট আসামি পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়েছে। এর মধ্যে দুজন আত্মসমর্পণ করলেও বাকি ছয়জন এখনো পলাতক।
ঘটনা-১
গতকাল রোববার বিকেলে ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে পালিয়ে যান রাজধানীর বাড্ডায় গারো তরুণী ধর্ষণের প্রধান আসামি রুবেল। ঘটনার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বাড্ডা থানার এসআই এমরান উল হাসান ও কনস্টেবল দীপক চন্দ্র পোদ্দারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাতেই কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন বাড্ডা থানার এসআই এমরান উল হাসান।
ঘটনা-২
২০১৬ সালের ১১ আগস্ট কেরানীগঞ্জের শিশু পরাগ অপহরণ মামলার মূল আসামি মোক্তার হোসেন ওরফে ল্যাংড়া আমির ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজতখানা থেকে পালিয়ে যায়। এর আগে ১০ আগস্ট একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়।
ঘটনা-৩
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ থেকে জামিন বাতিলের খবর শুনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের হত্যা মামলার চার আসামি পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার পর কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। এখন পর্যন্ত কোনও আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জুবায়ের হত্যা মামলায় ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪।
ঘটনা-৪
দুর্নীতির মামলায় ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হকের আদালতে জামিন নিতে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। জামিন বাতিলের খবর শুনে কাঠগড়া থেকে পালিয়ে যান অধ্যাপক আতিয়ার রহমান ও প্রভাষক মো. মশিউর রহমান। পরে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ঘটনায় দুদক পরিচালক সৈয়দ তাহসিমুল হক ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর শাহবাগ থানায় মামলা করেন।
ঢাকা আদালতের ডিসি প্রসিকিউশন (ডিসি) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, পুলিশ বাহিনীকে এ ধরনের ঘটনার ব্যাপারে আরো সতর্ক হতে হবে। যেন এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হয়।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, কিছু পুলিশ সদস্যের অবহেলার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট থানা এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর গাফিলতির কারণে আদালত থেকে বার বার আসামি পালিয়ে যাচ্ছে। এতে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে জন্য পুলিশকে আরো সতর্ক থাকতে হবে।’
জেএ/জেএইচ/এবিএস