ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

গরিব মানুষ কি বিচার পাবে না : প্রশ্ন হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ০৩:৪৯ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৬

২২ বছর আগের এক হত্যা মামলায় ১৬ বছর কারাভোগ করার পর শিপনকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিনা বিচারে কারাবন্দি থাকায় হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে তাকে জামিন দেন। একইসঙ্গে শিপনকে সব আইনি সহায়তা দিতে লিগ্যাল এইড কার্যালয়কে নির্দেশ এবং ঢাকার বিচারিক আদালতকে (পরিবেশ আপিল আদালত) ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়।   

মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
 
এ সময় আদালত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বিচার দেরি করায় তদন্ত কর্মকর্তা ও পিপিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আইন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটা ভালো লক্ষণ নয়। তাহলে গরিব মানুষ কি বিচার পাবে না?’

আদালত বলেন, ‘সংবিধানের ২৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু এ ঘটনা রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগের জন্য শুধুই লজ্জাজনক নয়, সংবিধানেরও লঙ্ঘন। এর দায় রাষ্ট্র ও বিচার বিভাগে। আদালত বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) এর দায় এড়াতে পারে না। তেমনি বিচারকও ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারেন না। একটি সভ্য দেশে এভাবে চলতে পারে না’।  
 
আদালত বিচার প্রক্রিয়ার বিলম্ব নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, হত্যার ঘটনায় ১৯৯৪ সালের ২৫ অক্টোবর সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। পরের বছর ১০ মে ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০০ সালের ৭ নভেম্বর এ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ২০০১ সালের ২২ নভেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য দায়রা আদালতে যায়।

২০০২ সালের ২৪ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাদী সাক্ষ্য দিয়েছেন। সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এর অর্থ গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে কোনো সাক্ষ্য নেয়া হয়নি।

আদালত বলেন, মামলার নথি থেকে দেখা যায়, প্রধান আসামি আমির হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের জন্য পিপি ২০১০ সালের ১৪ জুন আদালতে আবেদন করেন। যদিও আদালত কোনো আদেশ না দিয়ে আবেদনটি নথিতে রেখেছেন। এ অবস্থায় বিষয়টি আমাদের সামনে এসেছে।

আদালত বলেন, নথি থেকে দেখা যায়, পিপি বারবার সময় নিয়েছেন। এতে বিচার বিলম্বিত হয়েছে। আদালত এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম জহিরুল হকের কাছে জানতে চান, এই ব্যর্থতার দায় কার? জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম জহিরুল হক বলেন, এটা দায়িত্বহীনতা।
 
মামলা বাতিলের কোনো আবেদন  না থাকায় আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন। আদেশে আরো বলা হয়, এই মামলার পিপি মামলা নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নেবে। যদি নতুন করে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়া যায় তাহলে নথিতে যা আছে তার ভিত্তিতেই আদালত মামলা নিষ্পত্তি করবে। আদালতের আদেশে চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিককেও ধন্যবাদ জানানো হয় এমন একটি প্রতিবেদন প্রচার করার জন্য।

মাহতাব হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম নিষ্পত্তি না হওয়ায় এবং ১৬ বছর ধরে আসামি কারাগারে থাকা নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ একটি সংবাদ প্রচার করে। ওই প্রতিবেদনের অনুলিখন ও সিডি গত ৩০ অক্টোবর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে। এরপর ওইদিন এক আদেশে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় ওই মামলার নথি তলব করেন। একইসঙ্গে ওই মামলায় ১৬ বছর ধরে কারাগারে থাকা শিপনকে আগামী ৮ নভেম্বর হাইকোর্টে হাজির করতে কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্তবর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি ওই আসামিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

মঙ্গলবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষ শিপনকে হাইকোর্টে হাজির করা হয়। এর আগেই ঢাকার আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। বেলা ১১টায় মামলার শুনানি শুরু হয়। এ সময় অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে আদালতকে বলেন, শিপনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। সে জানিয়েছে, ঘটনার (হত্যা) পর বাদীপক্ষ তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে তার হাত কেটে দিয়েছে। এ সময় আদালত শিপনের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে চান।

শিপন আদালতকে জানান, ঘটনার পর বাদী তাকে বাড়ি থেকে ডেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। এরপর তার হাতের কব্জি (বাম হাত) কেটে দেয়। এ সময় তার বাম হাত উঁচিয়ে আদালতকে দেখান। এ পর্যায়ে আদালত তার (শিপন) কাছে জানতে চান, পিতামাতা বা ভাইবোন কেউ আছে কী না? কারাগারে তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতো কী না। তার বাবা-মা কি করতেন?

জবাবে শিপন বলেন, তার বাবা মা এবং বোন আছেন। তবে তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতো না। তিনি বলেন, মা বাবা নিশ্চয়ই বেঁচে আছেন। মারা গেলে খবর পেতাম।

এরপর আদালত কক্ষে উপস্থিত আইনজীবীদের কাছে আদালত জানতে চান, এ পর্যায়ে মামলাটি বাতিল করা যায় কী না? আদালতে উপস্থিত অ্যাডভোকেট সৈয়দ মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী আদালতে আইনগত বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। তারা সকলে বলেন, আইন অনুযায়ী আদালত এ আসামির (শিপন) ক্ষেত্রে মামলা বাতিল করতে পারেন।

এফএইচ/ওআর/আরআইপি

আরও পড়ুন