ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

পার্কে হকার পুনর্বাসন নিয়ে বেকায়দায় ডিএসসিসি

প্রকাশিত: ০৪:০৬ এএম, ০৮ নভেম্বর ২০১৬

গুলিস্তান পার্কে হকার পুনর্বাসন নিয়ে নগরবাসীসহ পরিবেশবাদীদের আপত্তিতে বেকায়দায় পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এমন অবস্থায় কর্পোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা হকারদের মানবিক বিষয়টি তুলে ধরে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে পরিবেশবাদীরা সম্মত না হলে বিকল্প চিন্তা করতে হবে সংস্থাটির।  

পরিবেশবাদীরা বলছেন, পার্ক রক্ষায় যে কোনো পদক্ষেপে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা। নগরবাসী তাদের নিজের প্রয়োজনেই এটি বাস্তবায়ন করবেন। বিষয়টি নিয়ে মেয়র তাদের সঙ্গে বসলেও তারা এমন প্রস্তাবে সাড়া দেবেন না।

সম্প্রতি গুলিস্তানে ফুটপাতের অবৈধ হকার উচ্ছেদ করতে গিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে। এ সময় বাধা দেয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে আটক করে নিয়ে আসেন। পরে বিক্ষুব্ধ হকাররা দলবল নিয়ে নগরভবনে চলে যান। এ সময় কেউ কেউ মেয়রের দফতরে ঢুকে পড়েন। পরে মেয়রের নেতৃত্বে নগরভবনের কর্মচারী এবং মহানগর ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠিসোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন। এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়েন সংস্থার মেয়র সাঈদ খোকন।

park

সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তান। কিন্তু এ স্থানটিতে ফুটপাত থেকে শুরু করে রাস্তা পর্যন্ত হকাররা দখল করে দোকান বসিয়ে দেন। বিভিন্ন সময়ে অভিযান করেও তাদের উচ্ছেদ করা যায় না। অভিযান শেষে আগের মতো আবার দখল করে রাস্তায় বসে যান। এ থেকে মুক্তি পেতে গুলিস্তানের হকারদের পুনর্বাসন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য ২ হাজার ৫০৬ জন হকারের তালিকা করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে সব হকারদের গুলিস্তানের নাট্যমঞ্চের পাশে পুনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত নেন মেয়র সাঈদ খোকন।

সাঈদ খোকনের এমন উদ্যোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবেশবাদীরা। তারা পার্কটি রক্ষা করতে আইনি পদক্ষেপের হুশিয়ারিও দিয়েছেন। প্রতিবাদে মানববন্ধনও করেছে বেশ কয়েকটি পরিবেশ সংগঠন। স্মারকলিপির মাধ্যমে তারা মেয়রকে এমন উদ্যোগ থেকে সরে আসতেও আহ্বান জানিয়েছেন। এরপর অনেকটা থমকে গেছে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিল্লাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা আমাদের একেবারেই প্রাথমিক প্রস্তাব। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছি। সবাইকে নিয়ে বসবো। পরিবেশবাদীদের ডাকা হবে। মতামত না নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে না।’

পরিবেশবাদীদের আপত্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিবেশ ? মানুষকে নিয়েইতো আমাদের পরিবেশ। তাদের চিন্তাও করতে হয়। যাই হোক এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। মেয়র সাহেব সবাইকে নিয়ে বসবেন। সবাই সম্মতি দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও সুন্দরবন রক্ষা কমিটির সদস্য শরীফ জামিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘কর্পোরেশন যদি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে কোর্টের আদেশ অমান্য করা হবে। এটা কোনোভাবেই আইননসিদ্ধ নয়। তারা মাঝে-মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেন যা সত্যিই ক্ষতিকর।’

তিনি বলেন, এমনিতেই ঢাকায় মাঠ, পার্ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থানের অভাব রয়েছে। নামমাত্র যে কয়টি রয়েছে সেগুলো রক্ষার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু যে জায়গায় তারা এগুলো রক্ষা করবেন -সে জায়গায় তারা তা ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা শুধু পরিবেশবাদীরা নয়, সচেতন নগরবাসীরাও বাস্তবায়ন করতে দেবেন না। মেয়রকে এ উদ্যোগ থেকে সরে আসতেই হবে।’

park

জানতে চাইলে ডিএসসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। অলরেডি প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এখনো অফিসিয়াল কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নোট হয়নি। যদি উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে বসতে হবে। হকারদের সিদ্ধান্ত জানতে হবে। বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এখনো কারো সঙ্গে বসা হয়নি। তাছাড়া এরই মধ্যে প্রতিবাদও শুরু হয়ে গেছে। মেয়র দেশের বাইরে আছেন। তিনি এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।    

জানা গেছে, শুধু গুলিস্তানের এই পার্কটি নয়, এর আগেও পার্ক কেটে পার্কিং করার উদ্যোগ নিয়েছিল ডিএসসিসি। গত বছরের শুরুর দিকে সচিবালয়সংলগ্ন ঐতিহাকি ওসমানী উদ্যানটির কিছু অংশের গাছ কেটে মাটির নিচে একটি পার্কিং নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। সে সময় কর্পোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরিবেশবাদীদের বিশাল একটি অংশের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। কিন্তু তাদের সম্মতি না পেয়ে অবশেষে সে উদ্যোগ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় সংস্থাটি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিজস্ব মালিকানাধীন গুলিস্তানের এ পার্কটি একমাত্র দখলমুক্ত পার্ক। নগরীর প্রাণকেন্দ্রের এ পার্কটির আয়তন ৩ দশমিক ৫০ একর। অন্যান্য পার্ক ব্যবহারের অনুপযোগী হলেও এ পার্কটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠে এলাকার বাসিন্দারা ব্যায়াম করতে আসেন এখানে।  

এমএসএস/জেডএ/পিআর

আরও পড়ুন