অনুসন্ধান এবার নতুন জামায়াত আমিরের বিরুদ্ধে
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ পাঁচ নেতার ফাঁসি কার্যকর করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এবার তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে নতুন জামায়াত আমিরের বিরুদ্ধে। এখনো আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষমায় জামায়াতের শীর্ষ আরো তিন নেতার আপিল। সঙ্গে সঙ্গে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।
এবার দলীয় কার্যক্রম নিয়ে কোণঠাসা সদ্য নির্বাচিত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির মকবুল আহমাদ। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন কিনা সেই বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য অনুসন্ধান চলছে। মকবুলের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান করার পর যদি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তবেই তার বিষয়ে চূড়ান্ত তদন্ত শুরু করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
নতুন আমিরের অপরাধ তদন্তের বিষয়ে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান জাগো নিউজকে বলেন, সদ্য নির্বাচিত জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদের নাম ওই এলাকার রাজাকারদের তালিকায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, বিবিসির সংবাদকর্মী আমাকে এ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল তাদেরও এই বিষয়টি বলেছি।
তিনি বলেন, দু-একটি অনলাইন পত্রিকায় খবর প্রকাশ পেয়েছে মকবুল আহমাদ ১৯৭১ সালে ফেনী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আমরা কোনো পত্রপাত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই অনুসন্ধান চালাই। পত্রিকা ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করে। তাই মকবুল আহমাদের দ্বারা যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয়েছে কি না সে বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করার পর যদি তার বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় তখন সেক্ষেত্রে তার বিষয়ে চূড়ান্ত তদন্ত শুরু করা হতে পারে।
তদন্ত সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তা মো. সানাউল হক জাগো নিউজকে বলেন, নবনির্বাচিত জামায়াত আমির মকবুল আহমাদের নাম ওই এলাকার রাজাকারদের তালিকায় রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এখনো পর্যন্ত নেই। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুযায়ী কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা সংস্থার পক্ষ থেকে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালাই। যদি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তবেই আমাদের পক্ষ থেকে তার (অপরাধের) বিষয়ে চূড়ান্ত তদন্ত শুরু করা হয়।
সানাউল হক আরো বলেন, মকবুল আহমাদের মানবতাবিরোধী অপরাধ অনুসন্ধানের জন্য একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি হলেন এসএসপি নুরুল ইসলাম। তিনি প্রাথমিক (প্রিলিমিনারি) অনুসন্ধান শুরু করেছেন। তার অনুসন্ধান শেষে চূড়ান্ত তদন্ত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, অনেকে মনে করতে পারেন জামায়াতের নতুন আমির নির্বাচিত হওয়ার কারণেই ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চালাচ্ছে। বিষয়টা এমন নয়, আর অপরাধ অনুসন্ধান মানেই তদন্ত নয়। কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেলেই তদন্ত শুরু করা হবে।
প্রসঙ্গত, মকবুল আহমাদ গত ৬ বছর ধরে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি দলটির আমির হিসেবে নির্বাচিত হন এবং আমির হিসেবে দায়িত্ব পালনের শপথ নেন।
এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও জামায়াতের নির্বাহী সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ৯০ বছর দণ্ড পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচার চলাকালীন সময়ে দলটির সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেন।
বর্তমানে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ, সিনিয়র নায়েবে আমির আব্দুস সোবহান এবং জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
এফএইচ/এসএইচএস/এবিএস