ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

একজন সফল নারী উদ্যোক্তার গল্প

প্রকাশিত: ১২:২৩ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৬

একজন সফল নারী উদ্যোক্তা আইনুন নাহার। এই ‘সফল উদ্যোক্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পেছনে রয়েছে নিজের পরিশ্রম এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে আইনুন নাহারকে, তবে কখনোই দমে যাননি তিনি। সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাত্র দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পোশাক তৈরির ব্যবসা শুরু করেছিলেন। সেই ব্যবসার পুঁজি এখন প্রায় অর্ধ-কোটি টাকা। তার প্রতিষ্ঠানে তৈরি বেডশিট, মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, ওয়ান-পিস, ছেলেদের পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে দেশ-বিদেশে। এই সফল উদ্যোক্তা আইনুন নাহার সম্প্রতি মুখোমুখি হয়েছেন জাগো নিউজের। শুনিয়েছেন তার সফলতার গল্প। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত


জাগো নিউজ : আজকে আপনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা, এর শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।
আইনুন নাহার : ২০০৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিন পাই। এই সেলাই মেশিন দিয়ে খুব ছোট পরিসরে ঘরে বসে গ্রামের বিভিন্ন জনের পোশাকের কাজ শুরু করি। এভাবে কাজ করে সামান্য আয় হতে থাকে। এই আয় থেকে কিছু টাকা জমিয়ে দুই হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করি পোশাক তৈরির ব্যবসা। ২০০৭ সালের দিকে আরো দুটি মেশিন কিনে নিয়ে আসি। আর ব্যবসাও মোটামুটি শুরু হয়, সে সময়  তিনজন কর্মী নিয়োগ দিই। প্রথম দিকে চুক্তিতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, নার্সিং হোমের ইউনিফর্মের অর্ডার নিয়ে তা তৈরি করে দিতাম। অর্ডারের মালামাল নিখুঁতভাবে এবং সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতাম। এতে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে পাশাপাশি বেশ অর্ডারও পেতে শুরু করি।

জাগো নিউজ : এই পরিসর বর্তমানে কেমন বেড়েছে?
আইনুন নাহার : অনেকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছি। আজ আমি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। এখন আমার কারখানায় ৩০টি মেশিনে প্রায় ৭০ জনের মতো কর্মী কাজ করছেন। বর্তমানে ব্যবসায় প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ আছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমার পণ্য সরবরাহ করি। এছাড়া ময়মনসিংহ ও ঢাকায় নিজস্ব শোরুম আছে। আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত মেলায় অংশগ্রহণ করি। পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য গত জুনে একটি মেলায় অংশগ্রহণ করতে চীনে গিয়েছিলাম।

জাগো নিউজ : একজন নারী হয়েও এতো কঠোর পরিশ্রম করছেন কীভাবে?
আইনুন নাহার : ২০১০ সালে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে ময়মনসিংহ জেলার সফল আন্তকর্মী নারী হিসেবে পুরস্কার, ২০১৩ সালে মহিলাবিষয়ক অধিদফতর থেকে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে শ্রেষ্ঠ ‘জয়িতা’ পুরস্কার, ২০১৫ সালে ঢাকায় যুবমেলা পুরস্কার ও ২০১৬ সালে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে আঞ্চলিক পুরস্কার পেয়েছি। এসব পুরস্কার আমার কাজে স্বীকৃতি এবং গতি বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আরো পরিশ্রম করার আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

nahar

জাগো নিউজ : আপনার ব্যবসায়িক পরিসর কীভাবে বেড়েছে?
আইনুন নাহার : ২০০৮ সালের দিকে ঋণের এক লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর কাজ শুরু করি। এ সময় কিছু কাঁচামাল কিনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করতে থাকি। বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি দরে পণ্য বিক্রি করি। এতে ব্যবসার পরিসর আরো বাড়তে থাকে এবং এই সময়ের মধ্যে আমার ৭টি মেশিন হয় এবং ১৮-২০ জন কর্মী কাজ করে। আমার আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য পুঁজি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ঋণ নেয়ার জন্য ব্যাংকে যাওয়ার সাহস পাইনি। তবে পরবর্তীতে যুব উন্নয়ন থেকেই আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে। এছাড়া স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আমার কাজ দেখে সন্তুষ্ট হয়ে তিনি নিজ উদ্যোগে কোনো জামানত ছাড়াই এক লাখ টাকা ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর আমি অনেক নারীকে প্রশিক্ষণ দেই এবং তারা যাতে হারিয়ে না যায় এ জন্য ময়মনসিংহ জেলা নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন ফোরাম নামে একটি সমিতি তৈরি করি। এছাড়া যখন অতিরিক্ত কাজের অর্ডার থাকে তখন যেন তাদের সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পারি এবং একটি ইউনিটি থাকে এই উদ্দেশ্যে সমিতি প্রতিষ্ঠা করা। এই সমিতি থেকেই আমার মতোই ২৫-৩০ জন নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছেন। তারা এখন নিজেই প্রতিষ্ঠান দিয়ে পণ্য তৈরি করে ব্যবসা করছেন। বর্তমানে অনেক ব্যাংকেই নারীদের সহায়তায় হাত বাড়িয়েছি। আমি নিজে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।

জাগো নিউজ : আপনি প্রধানত কী কী পণ্য তৈরি করেন?
আইনুন নাহার : আমার পণ্যর মধ্যে সাধারণত বেডশিট, নকশীকাঁথা, মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, ওয়ান-পিস, ছেলেদের পাঞ্জাবি, পাটের তৈরি বিভিন্ন ব্যাগ, পুতুল ও শো-পিস তৈরি করছি। সব পণ্যেরই গুণগত মান রয়েছে।

জাগো নিউজ : নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ?
আইনুন নাহার : স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব। আমি একা বড় হতে চাই না; আশপাশের নারীদেরও সফল দেখতে চাই।

জাগো নিউজ : একজন নারী হিসেবে ব্যবসা করতে এসে কি কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সন্মুখীন হয়েছেন?
আইনুন নাহার : প্রথম দিকে লোকজন বলতো, আমি সেলাইয়ের কাজ করি বলে আমার ছেলেমেয়ে মানুষ হবে না। অনেকেই এ কাজ কটু দৃষ্টিতে দেখতো। আমি এসব কাজ করি বলে এক সময় আমার ছেলেমেয়ে লজ্জা পেতো। ছেলেমেয়েরা ভাবতো, আম্মু সেলাইয়ের কাজ করে। পাড়ার অনেকেই তাদের বলতো, তোর আম্মু কিসব সেলাইয়ের কাজ করে। তবে আমি অনেক আন্তবিশ্বাসী ছিলাম যে, আমি কাজে সফল হবোই এবং ছেলেমেয়েদের মানুষ করবো। আমার ছেলে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আমার মেয়ে ময়মনসিংহ সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ছে। এখন আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে নিয়ে গর্ব করে।

জাগো নিউজ : সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি কার সহযোগিতা পেয়েছেন?
আইনুন নাহার : প্রতিটি কাজে আমার স্বামী আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। সব সময় তিনি আমার পাশে থেকে  সাহস জুগিয়েছেন। তার সহযোগিতায় আজ আমি এই জায়গায় আসতে পেরেছি।

জাগো নিউজ : জাগো নিউজকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আইনুন নাহার : জাগো নিউজকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

এএস/বিএ/এবিএস