ইগুরে ফাঁসিত ঝুলানি অউক : খাদিজার মা
বাড়ির বাইরে থেকেই শোনা যাচ্ছিল কান্নার আওয়াজ। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের সান্ত্বনায়ও থামছিলো না খাদিজা আক্তার নার্গিসের মা মনোয়ারা বেগমের আর্তনাদ। পাশে সাংবাদিকদের পেয়ে তার ক্ষোভ জানানোর ভাষাও যেন জড়িয়ে যাচ্ছিলো।
সাংবাদিকদের সান্ত্বনা পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার মনিরে (খাদিজা) হক্কলের (সবার) সামনে জেলান (যেভাবে) কুবাইয়া মারছে, ইগুরে (তাকে) হক্কলের সামনে ফাঁসিত ঝুলানি অউক (হোক)। আমি আর কিচু চাই না। আফনারা, আমার মনির লাগি হক্কলে দোয়া করবা।’
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) প্রধান ফটকের সামনে থেকে যখন সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়ার জন্য দরদাম হচ্ছিল, তখন আউসা গ্রামের কথা বলতেই চালক বুঝে ফেলেন খাদিজার বাড়ির যাত্রী আমরা। শাবি থেকে আট কিলোমিটার দূরের পথ আউসা গ্রামে নেমে রাস্তার পাশে থাকা মুদি দোকানিকে জিজ্ঞেস করতেই খাদিজার বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দিলেন। পাকা রাস্তা থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই খাদিজার বাড়ি।
বাড়ির ভেতরে যেতেই পরিচয় পেয়ে খাদিজার চাচাতো ভাই নোমান বসার জন্য চেয়ার দিয়ে বললেন, ‘চাচির (খাদিজার মা) কান্দন তো থামের না।’
কিছুক্ষণ পরে খাদিজার মায়ের সাক্ষাৎ পাওয়া গেলে তিনি বদরুলের ফাঁসি দাবি করেন। বলেন, ‘ইগুর (বদরুল) ফাঁসিত চাই, আমি আর কোচতা (কিছুই) চাই না।’
খাদিজার মার সঙ্গে কথা বলার সময় ভেতর থেকে খাদিজার খালাতো বোনের আহাজারি শোনা যাচ্ছিলো। তিনি বার বার বলছিলেন, ‘আমার বোন ইগুতারে এমনে কিলাকান মারতে ফারলো।’ (আমার বোনকে তারা কীভাবে মারতে পারলো)
খাদিজার খালাতো বোন জামাই বাবুল আহমেদ বলেন, ‘সিলেটের হক্কল নেতারাই দেখাত আইছইন।’
হামলার ঘটনায় নির্বাক খাদিজার চাচাতো ভাই নূর আহমেদ একবাক্যে জানান, ‘আমার দাবি এক্কানই ফাঁসি অউক ইগুর।’ একই সুরে খাদিজার ফুফা মোহাম্মদ সুমন আহমেদ বলেন, ‘আমিও ফাঁসি চাই ইগুর।’
এদিকে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের ওপর হামলার ঘটনায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মিত শিক্ষার্থী বদরুল আলমের বিচার দাবিতে উত্তাল সিলেট নগরী। আজ বৃহস্পতিবারও পৃথক আন্দোলন কর্মসূচি থেকে খাদিজার ওপর হামলার মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের দাবি জানানো হয়েছে।
খাদিজার নিজ এলাকা সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসা গ্রাম এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীও নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন।
আরএস/পিআর