এ কেমন প্রতারণা
পত্রিকায় প্রকাশিত মানবিক আবেদনের প্রতি এবার নজর পড়েছে প্রতারক চক্রগুলোর। প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে পত্রিকায় প্রকাশিত মানবিক আবেদনে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে সাহায্য দেয়ার আশ্বাস দিচ্ছে তারা। বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ১৭শ’ টাকা মূল্যের একটি ফরম তুলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিলেই সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকার সাহায্য পাওয়া যাবে।
প্রতারক চক্রে লোভনীয় এসব কথা শুনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসা সহজ সরল মানুষগুলো।
গত বুধবার রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর বাবা আব্দুল গফুরের সঙ্গে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রতারক চক্রের ওই ফাঁদে পড়লেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছেন তিনি।
আব্দুল গফুর জানান, গত মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) আমার মেয়ের সাহায্যের আবেদন চেয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে একটি সংবাদ বের হয়। এরপর বিকেলে গ্রামীণফোন (০১৭০৯৬৯০১৮৮) থেকে ফোন করে বলা হয়, আমি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের হিসাব শাখা থেকে বলছি। পত্রিকায় দেখলাম আপনার মেয়ের চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন। সেটি দেখেই ফোন করলাম। আপনি একটা কাজ করেন সন্ধ্যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামনে এসে এই নম্বরে ফোন করে আমার সঙ্গে দেখা করেন। এখান থেকে আপনাকে দুই লাখ টাকা সহযোগিতা করা সম্ভব। সেই আলাপ করবো। তবে তিনি নাম বলেননি।
সেদিন আর তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন নি আব্দুল গফুর। পরদিন দুপুর ১২টায় ওই নম্বর থেকে আবার কল আসে আব্দুল গফুরের মোবাইল ফোনে। বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি ফরম তুলে আজকে দুপুরের মধ্যে জমা দিলে আড়াই লাখ টাকা পাবেন। কালকের মধ্যেই টাকাটা পেয়ে যাবেন। ফরমটির দাম ১৭শ’ টাকা।
এরপর তিনি বাংলালিংক অপারেটরের একটি ফোন (০১৯৯৪০৫৫০৪৬) নম্বর দেন আব্দুল গফুরকে। বলা হয়, এ নম্বরে কথা বলে সচিবালয়ে গিয়ে ফরমটি তুলবেন এবং আমার কথা বলবেন। এ সময় আব্দুল গফুর তার নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, তামিম। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের হিসাব শাখায় কাজ করেন। আইডি নং ০৭।
কিছুক্ষণ পর তামিমের দেয়া সেই (০১৯৯৪০৫৫০৪৬) নম্বরে ফোন করেন আব্দুল গফুর। এ সময় তাকে বলা হয়, ১০ মিনিট পর ফোন করেন। ১০ মিনিট পর ফোন করে তামিমের পরিচয়ে কথা বললে তিনি বলেন, তামিম সাহেব তো আমাদের অফিসে এসেছেন। তিনি চারটি ফরম তুললেন। আপনার ফরমটি সম্ভবত তিনি নেননি। আপনি এসে নিয়ে যান। তা না হলে তামিম সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন।
এরপর তামিমের নম্বরে ফোন করা হলে তিনি বলেন, চারটি ফরম তোলার পর আমার কাছে টাকা শেষ হয়ে গেছে। আপনি যদি এই নম্বরে টাকাটা (১৭শ’) বিকাশ করেন তাহলে তুলে নিয়ে যেতে পারবো। আর আপনি কাল সকালেই রোগীর এক কপি ছবি ও হাসপাতালের কাগজপত্র ফটোকপি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে এসে আমাকে ফোন করবেন। আমি ভেতর থেকে এসে আপনাকে নিয়ে যাব।
তাদের সঙ্গে কথোপোকথন শেষ করেই আব্দুল গফুর জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে বিষয়টি জানান। এরপর জাগো নিউজের পরিচয় দিয়ে ওই দুটি ফোন নম্বরে কথা বললে তাদের দু`জনের কথা মধ্যে গড়মিল পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচয় দানকারীর নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, নামের দরকার নাই তো। টাকার প্রয়োজন হলে ওই লোককে (আব্দুল গফুরকে) ১৭শ’ টাকা দিয়ে একটি ফরম তুলে সেটি পূরণ করে জমা দিতে হবে।
কত টাকা সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে ওই পাশ থেকে বলা হয়, সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা।
ফরমের দাম এত কেন জানতে চাইলে বলা হয়, পরে কথা বলছি। এরপর থেকে ওই ফোন (০১৯৯৪০৫৫০৪৬) নম্বরে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। যা এখনো বন্ধ রয়েছে (শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা)। এছাড়া তামিমের নম্বরে (০১৭০৯৬৯০১৮৮) ফোন করলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
তাদের সন্দেহজনক কথা শুনে আব্দুল গফুর আর ফরমের জন্য টাকা বিকাশ করেননি। তিনি বলেন, এটি মনে হয় প্রতারণা।
আব্দুল গফুর জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, ওইদিনের পর থেকে ওই নম্বর দুটি থেকে আর কল আসেনি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, অল্পের জন্য আল্লাহ ঝামেলা থেকে বাঁচালেন।
এমএএস/আরএস/পিআর