ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

বদলে যাচ্ছে শাহজালালের রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার সিস্টেম

প্রকাশিত: ০৬:০৪ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বদলে যাচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার সিস্টেম। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে রাডার প্রতিস্থাপনের দরপত্র যাচাই বাছাইয়ের কার্যক্রম। দু‘জন উচ্চ মাপের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চলছে এই কার্যক্রম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একটি সূত্র জানিয়েছে, যেভাবে কাজ চলছে তাতে চলতি বছরের মধ্যেই শাহজালালে নতুন ও আধুনিক রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

সূত্র আরো জানায়, রাডারের জন্য দেয়া আন্তর্জাতিক দরপত্রে বিশ্বের নামি-দামি চারটি কোম্পানী অংশ নেয়। প্রাথমিক বাছাইয়ে ২টি দর প্রস্তাব অযোগ্য বিবেচিত হয়। বাকি ২টি প্রতিষ্ঠান কারিগরি মূল্যায়নের জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়।

বিধি মোতাবেক তাদের বেবিচক ও পিপিপি সেলের সমন্বয়ে গঠিত একটি ডি-ব্রিফিং সেশনে উপস্থিত হতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই বৈঠকে একটি কোম্পানি উপস্থিত হতে পারেনি। পরবর্তীতে তারা উপস্থিত হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও সেটি নাকচ হয়ে যায়। এই অবস্থায় যে কোন সময় শাহজালাল বিমানবন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাডার টাওয়ারের কার্যাদেশ দেয়া হতে পারে বলে জাগো নিউজকে জানান সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, চরম ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাডার ব্যবস্থা। দ্রুত প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার স্থাপন না করলে যে কোন মুহর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে উড়োজাহাজ চলাচল ব্যবস্থা কিংবা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল।

জানাগেছে শাহজালালের বিদ্যমান রাডারটি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডারের সমন্বয়ে গঠিত। ফরাসি সরকারের অনুদানে ১৯৮৪ সালে প্রাইমারি রাডার এবং ১৯৮৬ সালে সেকেন্ডারি রাডার (১০ বৎসর আয়ুষ্কাল সম্পন্ন) স্থাপন করা হয়। ১৯৮৭ সালে ৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং ১৯৯৪ সালে ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা ও ২০০৮ সালে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্তমান রাডারটি আপগ্রেড করা হয়েছে। কিন্তু আধুনিক চাহিদার বিপরীতে বিদ্যমান রাডার ব্যবস্থাটি এখন আর তাল মিলাতে পারছে না।

এ কারণে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল পিপিপি‘র (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মাধ্যমে রাডার ব্যবস্থাপনার প্রকল্প সম্পন্নের জন্য একটি আনসলিসিটেড প্রস্তাব পায়। তারই ভিত্তিতে এবং এককালীন বিপুল পরিমান আর্থিক ব্যয়ের সাশ্রয় বিবেচনা করে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অগ্রাধিধকার ভিত্তিতে নতুন রাডারসহ এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের এই প্রকল্পটি পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী সিএএবি কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ৩ অক্টোবর দরপত্রের স্পেসিফিকেশন তৈরীর জন্য পিপিপি অফিসের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক কয়েকটি কমিটি করে দেয়। কমিটি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থার সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে দরপত্রের স্পেসিফিকেশন দাখিল করে।

দীর্ঘ ৭ মাস ধরে সিএএবি, পিপিপি সেল, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন প্রতিনিধিরা দরপত্রের ডক্যুমেন্ট প্রস্তুত করেন। ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ রিকোয়েস্ট ফর ইন্টারেস্ট প্রকাশিত হয়। এতে ১০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে। গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন দরপত্রটির ডক্যুমেন্টের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এরপর গত বছরের ৮ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়।

গত ২২ জুন দেশ-বিদেশের মোট ৪ টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব জমা দেয়। এরমধ্যে মেসার্স এরোনেস ইন্টান্যাশনাল ফ্রান্সের থ্যালেস, মেসার্স করিম অ্যসোসিয়েটস্ কানাডার রেথিয়ন, উইংস্ এভিয়েশন স্পেনের ইন্দ্রা এবং চতুর্থ প্রতিষ্ঠান মেসার্স গেকী তাদের প্রস্তাবে তোশিবার রাডার স্থাপনের প্রস্তাব জমা দেয়।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের গাইড লাইন্স অনুযায়ী ২০১৭ সালের মধ্যে বিশ্বের সব বিমান বন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এয়ার ট্রাফ্রিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম) ব্যবস্থাকে বাধ্যতামূলকভাবে যুগোপযুগী করার জন্য সিএএবি এই প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রাডার স্থাপন, ওয়াইড এরিয়া মাল্টিলেটারেশন (ডব্লিউএএম) ও এডিএস-বি স্থাপন, এটিএস সেন্টার আপগ্রেড, কন্ট্রোল টাওয়ার বিল্ডিং স্থাপন, ভিএইচএস, এক্সটেন্ডেট ভিএইচএস, এইচএফ, মাস্টার ক্লক, আরসিএজি, রেকর্ডিং সিস্টেম, ভিসিসিএস স্থাপন করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সর্বাধুনিক রাডার ও কন্ট্রোল টাওয়ার স্থাপনের এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরাধীন পিপিপি সেলের প্রথম আনসলিসিটেড প্রকল্প। পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিএএবি এর কোন অর্থ ব্যয় হবে না বরং আগামী ২০ বছরে সরকার ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করতে পারবে।

যারা প্রকল্পটির কার্যাদেশ পাবে তাদেরকে আগামী ১০ বছর  খরচসহ লাভের একটি অংশ দেয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ সরকারের ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে আরো এক ধাপ। নিরাপদ হবে দেশের আকাশ সীমা এবং বিমান চলাচল ব্যবস্থা।

আরএম/এমএমজেড/এমএস