ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগই সবচেয়ে বেশি

প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কাজী রিয়াজুল হক। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব। মানবাধিকার কমিশনের করণীয়সহ নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। তুলে ধরেন গুরুত্বপূর্ণ মতামত। বলেন, আইনি সীমাবদ্ধতার কারণেই কমিশন এগোতে পারছে না। কমিশনকে গতিশীল করতে আইনি কাঠামোর পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

জাগো নিউজ : নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন এক মাস পেরুলো। কেমন দেখছেন কমিশনকে?

রিয়াজুল হক : চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব নেয়ার আগে আমি কমিশনে ছয় বছর সার্বক্ষণিক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বলতে পারেন আমি পুনর্গঠিত এই কমিশনের সঙ্গে শুরু থেকেই জড়িত। এই কমিশন গঠন হওয়ার পর বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এর মধ্যে সন্ত্রাস দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা এবং মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পায়। চলমান সময়ে জঙ্গিবাদ অর্থাৎ উগ্রপন্থার বিষয়টি আরো ভাবিয়ে তুলেছে। উগ্র মতবাদ মোকাবেলা শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এর বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। কমিশন এই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে।  

জাগো নিউজ : কমিশনের উন্নয়নে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

রিয়াজুল হক : মানবাধিকারের বিষয়টি যেখানে গুরুত্ব পায় সেই সব সেক্টর নিয়ে ইতোমধ্যেই বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। যেমন- সমাজের নারীরা বিভিন্ন কারণেই নির্যাতন, হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন। কমিশন নারীদের অধিকার রক্ষায় কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি সমাজের বিশেষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। একইভাবে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং শিশুদের অধিকার রক্ষায় কমিশন নতুন কৌশলে কাজ করছে।

Kazr-Riazul-Hoq

জাগো নিউজ : আগের কমিশনের সঙ্গে তুলনা করা হলে কি বলবেন?

রিয়াজুল হক : আগের কমিশনের বিষয়ভিত্তিক কমিটিসমূহের মধ্যে শুধু শিশু অধিকার কমিটি বিভিন্ন এনজিও/আইএনজিও ও সরকারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে শিশু আইন, শিশু শ্রম, শিশু অধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান কমিশনের অন্য সদস্যরা এ ব্যাপারে আন্তরিক। তারা স্ব-স্ব জায়গায় অনেক দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন।

জাগো নিউজ : কমিশনে কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছেন কিনা?

রিয়াজুল হক : আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে ইচ্ছা থাকলেও সবক্ষেত্রে একইভাবে এগোতে পারছি না। কমিশনের আইনের পরিবর্তন প্রত্যাশা করছি। কমিশনকে অধিকতর কার্যকরী ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে এ নিয়ে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্তও নিয়েছি।

জাগো নিউজ : তার মানে আইনের বলে যতটুকু ক্ষমতা দেয়া আছে, তা যথেষ্ট নয়?

রিয়াজুল হক : হ্যাঁ। আমি আগেই বলেছি কমিশনকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকরী করতে আইনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

Kazr-Riazul-Hoq

জাগো নিউজ : যদি বিষয়টা ব্যাখ্যা করে বলতেন?

রিয়াজুল হক : যেমন কমিশনের আইনের ১২নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আসলে আমরা তদন্ত করতে পারব এবং তদন্তে প্রমাণিত অভিযুক্তদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ/পরামর্শ জানাতে পারব। কিন্তু ১৮ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, আইনে যাই বলা থাকুক না কেন, যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষেত্রে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আসে তখন সরকারের কাছে প্রতিবেদন চাইব। অভিযোগ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধেই আছে। কিন্তু তুলনা করে বললে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগই সবচেয়ে বেশি। তাদের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ আসে এবং অভিযোগগুলো খুবই স্পর্শকাতর।

জাগো নিউজ : আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ! তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

রিয়াজুল হক : হ্যাঁ, সাধারণ মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন অভিযোগ অন্তরায় বলে আমি মনে করি। কিন্তু আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে না পারলে আমরা এগোতে পারব না। এর সঙ্গে আরো কিছু দুর্বলতা আছে। আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অর্থাৎ প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল ও বাজেট পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া প্রাপ্ত বাজেট থেকে ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রেও প্রশাসনিক দুর্বলতা যথাসময়ে ও যথাযথভাবে কমিশনের কাজে বিলম্ব ঘটায়।

জাগো নিউজ : আইনি সীমাবদ্ধতা এবং আর্থিক ঘাটতি দুটোর মধ্যে কোনটিকে অধিক গুরুত্ব দেবেন?

রিয়াজুল হক : আমি দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। একটি সমাধান করে আরেকটি অবহেলা করলে কোনো লাভ হবে না।

Kazr-Riazul-Hoq

জাগো নিউজ : এই সমস্যাগুলো সমাধানে কমিশন ইতিপূর্বে কোনো উদ্যোগ নিয়েছিল কিনা?

রিয়াজুল হক : ইতিপূর্বে সমস্যাগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু তা বিক্ষিপ্তভাবে। এবার কাঠামোগত পদ্ধতিতে সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই। আইন পরিবর্তন করতে গেলে অবশ্যই একটি সিস্টেমের মধ্য দিয়ে করতে হবে। আমরা সেই সিস্টেম মতে এগোতে চাই।
এর আগে সমস্যা সমাধানের বিষয়টি শুধু বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। এবার আমরা বক্তব্য থেকে কার্যক্ষেত্রে আনতে চাই।

জাগো নিউজ : যেটুকু ক্ষমতা কমিশনকে দেয়া আছে, সেটুকুর যথাযথ প্রয়োগ কি কমিশন করতে পারে?

রিয়াজুল হক : সাধ্যের মধ্যে থেকে ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করছি। সমস্যা অনেক। এরপরও যে কমিশন করছে না, তা কিন্তু নয়। দায়িত্ব নেয়ার ১০০ দিনের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর মধ্য দিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারের উচ্চ মহলে এ আলোচনা করব। আশা করছি এক বছরের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে পাব।

১৬ কোটি মানুষের দেশ। ঢাকায় বসে সারাদেশের সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। ক্ষমতা প্রয়োগ করতে গেলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাখা অফিস করা উচিত। আগামী মাসেই রাঙ্গামাটি ও খুলনায় দুটি আঞ্চলিক অফিস খোলা হবে। পর্যায়ক্রমে আগামী এক বছরের মধ্যে সব বিভাগীয় শহর এবং দুই বছরের মধ্যে সব বড় জেলায় আঞ্চলিক অফিস খোলা হবে। তবে এটা নির্ভর করছে প্রয়োজনীয় জনবল ও বাজেট প্রাপ্তির ওপর।

এএসএস/জেএইচ/পিআর

আরও পড়ুন