ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

৩০ দিন পেরিয়ে

প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিএনপির চেয়াপারসনের দায়িত্ব পালনের পর থেকে এই প্রথম নিজ কার্যালয়েই এক মাস সময় অবস্থান করলেন বেগম খালেদা জিয়া। রাজধানীর গুলশানে নিজ কার্যালয়েই ৩০ দিন পার করলেন তিনি। এসময়ে কখনো পুলিশি বেষ্টনিতে অবরুদ্ধ, কখনো বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

এরইমধ্যে ইন্তেকাল করেছেন তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। ছেলের শোক কাটতে না কাটতেই গত শুক্রবার গভীর রাতে কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। একে একে বিচ্ছিন্ন করা হয় ডিস লাইন, ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগ। তারপর কয়েকটি মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কও বন্ধ করা হয় খালেদার কার্যালয়ে ও আশপাশের এলাকায়।

ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। কার্যালয়ের যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকায় কর্মকর্তাদের দাফতরিক কাজ-কর্মও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সোমবার পর্যন্ত এসবের সংযোগ দেওয়া হয়নি। তবে প্রায় ২০ ঘণ্টা পর শনিবার রাতেই বিদ্যুতের সংযোগ পুনরায় স্থাপন করা হয়।

এদিকে হঠাৎ করেই বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বেড়েছে। কার্যালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে অঘোষিত বিধিনিষেধ দেখা গেছে। চাইলেও যে কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না গায়েন্দা পুলিশ।

প্রতিদিনের মত গত ৩ জানুয়ারি (শনিবার) রাত সাড়ে আটটার দিকে গুলশানের নিজ কার্যালয়ে আসেন খালেদা জিয়া। সেখানে দলের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলেন তিনি। পরে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অসুস্থ হওয়ার খবর জানতে পারেন। তাকে দেখার জন্য নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে চান খালেদা জিয়া। নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তার পথ আটকায়।

রাত পৌঁনে ১২টার দিকে খালেদা জিয়া বাসায় যাওয়ার জন্য পুলিশকে ব্যারিকেড সরাতে বলেন। কিন্তু তা না সরানোয় কিছুক্ষণ গাড়িতে অপেক্ষা করে আবারও কার্যালয়ের দোতলায় যান তিনি। এরপর সেখানেই তার রাত কাটে। পরের দিন কার্যালয়ের মেইন গেইটে ঝুলানো হয় তালা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তল্লাশি চালিয়ে মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ। দুই শতাধিক পুলিশ দিয়ে পুরো গুলশান এলাকা কর্ডন করে রাখে। এখনো পল্টন কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। কোনো নেতাকর্মীকে সেখানে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।

এদিকে ৪ জানুয়ারি সকালে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে বিএনপি নেত্রীর কার্যালয় ঘিরে পুলিশি নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়। সড়কের দুই মাথায় বসানো হয় দুটি তল্লাশি চৌকি। ওই সড়কে পুলিশ সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ রাখে। কার্যালয়ের পাশেই বড় আকারের দুটো গাড়ি আড়াআড়িভাবে রেখে বেরুনোর পথও আটকে দেওয়া হয়। র‌্যাব, পুলিশের সাঁজোয়া যানও প্রস্তুত ছিল। শুরু থেকে কার্যালয়ের বাইরে রাস্তায় মোট ১১টি বালু ও ইটের ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়।

পর্যায়ক্রমে সেগুলো সরিয়ে নেয়া হয়। সর্বশেষ কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় পুলিশের দুটি পিকআপ ও একটি জলকামান আড়াআড়িভাবে রাখা ছিল। যা ১৮ জানুয়ারি রোববার গভীর রাতে সরানো হয়। টানা ১৬দিন পর অবরুদ্ধ মুক্ত হন খালেদা জিয়া।

গত ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে গুলশান কার্যালয় থেকে আবারও বের হওয়ার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা গেট খুলে দেয়ার দাবিতে শ্লোগান দিলে দুই দফা পেপার স্প্রে করে পুলিশ। পরে খালেদা জিয়া প্রায় ৪৫ মিনিট পর গাড়ি থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। সমাবেশ করতে না দেয়ায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন তিনি।

খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেয়ার সময়েও পেপার প্রে করে পুলিশ। এতে তিনি সহ মহিলা দলের দশজন অসুস্থ হন। তিন দিন অসুস্থ ছিলেন খালেদা জিয়া। মূল ফটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার কারণে তিনি বের হতে পারেননি। পরে সেখান থেকেই সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

এ সময়ের মধ্যে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও আত্মীয় স্বজনরা মাঝে মাঝে খাবার নিয়ে আসেন। অবরোধ পরিস্থিতি কাযালয়ের ভেতরেই বসে মনিটর করেন তিনি। এই ১৬ দিনে তার সাথে কেউ দেখা করতে পেরেছে, কেউ পারেনি। কখনো তালা খোলা হয়েছে, কখনো লাগানোর ঘটনা ঘটেছে।

গত ৩ জানুয়ারি থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন এই কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। তার সাথে কার্যালয়ে রয়েছেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুব আলম ডিউ, নিরাপত্তা সমন্বয়কারী কর্ণেল (অব:) আব্দুল মজিদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান ছাড়াও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় নিয়োজিত সিএসএফ’র সদস্যরা।

এদিকে গত শুক্রবার রাত ২টা ৩৭ মিনিটে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পর্যায়ক্রমে ডিশ লাইন, ইন্টারনেট ও টেলিফোন লাইনের সংযোগও কেটে দেয়া হয়। সোমবার পর্যন্ত গুলশান কার্যালয়ের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তথ্য-যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো পুনঃস্থাপিত হয়নি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান জানিয়েছেন, কার্যালয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় আমরা সব ধরণের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। খবরাখবর আহরণে আমাদের একমাত্র মাধ্যম এখন পত্র-পত্রিকা। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো পড়েন বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া।

সান্তনা জানাতে মাঝে মধ্যে বিশিষ্টজন ও মেহমানরা ছেলের শোকে কাতর বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন।

এমএম/এএ/আরআই