সবাই যখন ঘুমায় তখন ওরা ময়লা পরিষ্কারে ব্যস্ত
‘রাত দুইটায় কামে আহি। এই শহরের সবাই যখন ঘুমায় তখন আমি ফকিরেরপুল পানির ট্যাংকির পশ্চিম পাশের রাস্তা থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত থাকি। একার পক্ষে এতো ময়লা পরিষ্কার করা কষ্টকর হয়। কিন্তু কি করুম, স্যারেরা লোক বাড়ায় না। বরং উল্টা রাত ১টা থেকে কাজে আইতে কয়। ৩০ বছর ধইরা এই একই কাম করতাছি। ঈদের দিনেও ছুটি থাকে না।’ কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী।
সোমবার কাকডাকা ভোরে পুরানা পল্টন থানার সামনে দিয়ে ময়লার স্তুপ ভর্তি ঠেলাগাড়ি নিয়ে দ্রুতপায়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। মধ্যবয়সী এ পরিচ্ছন্ন কর্মীর পরিধেয় শার্টে সিটি কর্পোরেশনের জ্যাকেট, রঙ্গিন লুঙ্গি হাটু অবধি বাধা, পায়ে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল, হাতে চকচকে সোনালী রংয়ের ঘড়ি, গলায় রুপালী মোটা চেন ও হাতে ব্রেসলেট।
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে প্রথমে কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। একটু এগিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নাম জানতে চাইলে চিকন সুরে বললেন, মানিক ১। বুঝতে অসুবিধা হওয়ায় আবার নাম জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, স্যার এই এলাকায় দু`জন মানিক কাজ করে। আমাকে সবাই ‘মানিক ১’ নামে চিনে।
তিনি জানান, গত ৩০ বছর যাবত সিটি কর্পোরেশন চাকরি করছেন। পরিবার নিয়ে টিকাটুলী গর্ভমেন্ট কোয়ার্টারে থাকেন। আগে মাস্টার রোলে চাকরি করলেও ৭/৮ বছর আগে নিয়মিত হন।
মানিক আরো বলেন, ‘এই শহরে মানুষ রাস্তাঘাট নোংরা করে বেশি। শিক্ষিত মানুষরাও জায়গা মতো ময়লা ফালায় না। ময়লা পরিস্কার করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়।’
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নকর্মীদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করা থাকে। অসুস্থ থাকলেও সুপারভাইজাররা ছাড় দেন না, কাজের জবাবদিহিতা চাওয়া হয় বলেও জানান মানিক-১।
তিনি বলেন, ‘এই যে সাত সকালে ঢাকার রাস্তাঘাট পরিষ্কার দেখেন সেগুলো সরাতে রাত ২টা থেকে কাজ শুরু করি। রাত ১টায় বাসা থেকে বের হয়ে আসতে হয়।’
ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে মানিক হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। পর বলেন, আমাদের কথা তো কেউ জানতে চায় না। এক সময় স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছোট একটা বাসায় থাকতেন। এখন সবাই বড় হয়েছে, বিয়ে করে আলাদা থাকছে।
ময়লা পরিষ্কারের কাজ করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে মানিক জানান, ‘বয়স অইতাছে, অহন আর জানে কুলায় না। কিন্তু না করে উপায় নেই। চাকরি না করলে না খাইয়া থাকতে অইবো।’
এমইউ/আরএস/এমএস