২০ বছরেও উদঘাটন হয়নি সালমান শাহের মৃত্যুরহস্য
বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। ২০ বছর আগে (৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬) মারা গেলেও এখনো তার জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি। জনপ্রিয় এ চিত্রনায়কের মৃত্যুর ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো উদঘাটন হয়নি মৃত্যুটি অপমৃত্যু ছিল না হত্যাকাণ্ড? সিআইডি ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে অপমৃত্যু উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করলেও সালমান শাহর মা নীলুফার চৌধুরী নারাজি দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সর্বশেষ সালমান শাহর মায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য র্যাব-৩ কে নির্দেশ দেন আদালত। পুনঃতদন্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ একটি রিভিশন দাখিল করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন এবং মামলাটি র্যাব তদন্ত করতে পারবে না বলে রায় দেন। আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন সালমান শাহর আইনজীবীরা।
সালমান শাহর আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ র্যাবকে পুনঃতদন্ত দেওয়ার বিরুদ্ধে যে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন, তা রাষ্ট্রপক্ষ করতে পারে না। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবুও একই কথা বলেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, র্যাবকে পুনঃতদন্ত দেওয়ার বিরুদ্ধে আমরা আদালতে একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছিলাম। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। আদেশ অনুযায়ী মামলাটি বর্তমানে র্যাব তদন্ত করতে পারবে না।
সালমান শাহর মা নীলুফার চৌধুরী বলেন, এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ হত্যা মামলার সঠিক বিচার আমি চাই এবং দেশবাসীও চায়। আজ হোক কাল হোক এ হত্যা মামলার বিচার অবশ্যই হবে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা করেন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন করেন তিনি। পরে অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়। পরে সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন।
পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এর পর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবেই উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন আবারো প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন তিনি। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আদালত নারাজি আবেদনটি মঞ্জুর করে র্যাবকে তদন্তভার প্রদান করেন।
মামলাটিতে র্যাবকে তদন্ত দেওয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা দায়ের করে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র্যাব মামলাটি আর তদন্ত করতে পারবে না বলে আদেশ দেন।
জেএ/আরএস/পিআর