‘আমি বেঁচে আছি দেশবাসীকে জানাতে হবে’
পরিস্থিতি যেদিকেই যাক গণতন্ত্রের স্বার্থে, শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে আমাকে কথা বলতে হবে। আমি বেঁচে আছি দেশবাসীকে জানিয়ে দিতে হবে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত শেখ হাসিনার তৎকালীন বাসভবন সুধা সদনে বসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেছিলেন, নেত্রী বিবিসি থেকে আপনার সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি নিষেধ করে দিয়েছি।
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সাক্ষাৎকার দিব’ উত্তরে আব্দুল জলিল বলেন, ‘নেত্রী আপনি আহত, আপনার কান দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। এই মুহূর্তে আপনার কারো সঙ্গে কথা বলা ঠিক হবে না। পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে আমরা বুঝে উঠতে পারছি না।’
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিস্থিতি যেদিকেই যাক গণতন্ত্রের স্বার্থে, শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে আমাকে কথা বলতে হবে। আমি যে বেচেঁ আছি দেশবাসীকে জানিয়ে দিতে হবে।’
শেখ হাসিনার উদ্যোগের ফলে আব্দুল জলিল যোগাযোগ করেন। তার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লন্ডন বিবিসি অফিস থেকে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। একপর্যায়ে বিবিসির ঢাকা অফিসের প্রতিবেদক কাদির কল্লোল সন্ধান পান তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের। তার মোবাইল ফোনে ঢাকা অফিস থেকে যোগাযোগ করেন বিবিসির এ প্রতিবেদক।
জলিল বললেন, শেখ হাসিনা গুরুতর আহত। প্রতিবেদক বললেন, বিবিসি শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার নিতে চায়।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে এক রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপাতত শেখ হাসিনা কোথায় আছেন সেই সন্ধান কাউকে জানানো যাবে না। তাদের ভেতরে তখনো বিপদের আশঙ্কা কাজ করছিল। সবাই দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন। কখন কি ঘটে। তাই নেত্রীর প্রকৃত অবস্থান ও অবস্থা জানানো উচিত হবে না। অবস্থা বুঝে পরে শেখ হাসিনা কেমন আছেন তা নেতাকর্মীসহ পুরো দেশবাসীকে অবহিত করা হবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেন।
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এই মুহূর্তে দেশবাসীর ভেতরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে। আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী দিশেহারা। এক মুহূর্তেও আমাকে দেরি করা ঠিক হবে না। আমি বেঁচে আছি, ভালো আছি দেশবাসীকে তা জানাতে হবে। না হয় গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হতে পারে। দেশে গৃহযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। আমি এটা হতে দিতে পারি না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি কোথাও যাব না। শত শত নেতাকর্মী আহত রেখে আমি শুধু নিজের জন্য বিদেশে যেতে পারব না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘২১ আগস্ট ২০০৪ তৎকালীন সরকারের অব্যাহত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ ছিল আওয়ামী লীগের। শেখ হাসিনা ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মৃত্যুপুরী থেকে নেত্রীকে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি। শেখ হাসিনা ওখান থেকে কোনোভাবেই আসবেন না। এ হামলার পরে আমরা যখন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ভাবছি, শেখ হাসিনা তখন এসব কিছুর ঊর্ধ্বে চিন্তা করছিলেন।’
শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া যাবে না। হরতাল কর্মসূচি দেওয়া যাবে না। আগে আহতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত ও নিহতদের দাফন সম্পন্ন করতে হবে।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২১ আগস্টের পরে নেত্রী আমাদের সবাইকে ডেকে শুধু এটুকু বলেছেন, তোমরা সবাই হাসপাতালে যাও। কে কোন হাসপাতালে আছে, কার অবস্থা কেমন দেখে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত কর। আর আমাকে তথ্য দিয়ে আপডেট রাখ।
তিনি বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) কিছুক্ষণ পর পরই খোঁজ নিতেন আমাদের কাছ থেকে আহত কার অবস্থা কেমন।
উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
এইউএ/জেএইচ/আরএস