নকল ইলেক্ট্রনিক কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা
অবাধ আমদানি ও কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কারসাজির ফলে নিম্নমানের ইলেকট্রনিক পণ্যে ভরে যাচ্ছে দেশের বাজার। এসব নিম্নমানের পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। মানহীন এসব ইলেকট্রনিক পণ্যের কার্যক্ষমতা ও স্থায়িত্ব একেবারেই কম। অধিকাংশ আমদানি পণ্যের কোনো ওয়ারেন্টি দেয়া হয় না। ক্রয়ের কিছুদিনের মধ্যেই মেশিনারি, ফ্রিজ হয়ে পড়ছে অচল। অভিযোগ দিলেও সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি ও বাজারজাতকরণ এবং স্থানীয়ভাবে সংযোজনে এখন পর্যন্ত সঠিক নীতিমালা করা হয়নি। বাংলাদেশে ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিনসহ যেসব ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি হয় সেগুলোর ৮০ শতাংশই আসে বিনা ব্র্যান্ডে (কোন কোম্পানির পণ্য তা লেখা থাকে না)। পরে আমদানিকারকরা ইচ্ছেমতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম বসিয়ে সেগুলো বাজারজাত করে। বিনা ব্র্যান্ডের এসব পণ্য যখন শোরুমে তোলা হয়, তখন কোনোটি প্যানাসনিক, কোনোটি সনি আবার কোনোটি স্যামসাং অথবা দেশি কোনো ব্র্যান্ডের হয়ে ক্রেতার হাতে যাচ্ছে। তবে বাস্তবে এগুলোর কোনোটিই এসব কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য নয়।
অন্যদিকে চীন থেকে পণ্য আমদানি করে লোগো ও স্টিকার পরিবর্তন করে দেশি পণ্য হিসেবে বাজারজাত করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব পণ্যের সেবার মান খুব খারাপ। ওয়ারেন্টি সেবা দেয়ার কথা বলে বিক্রি করে পরবর্তীতে সেই সেবা নিয়ে টালবাহানা করা হয়। বিশেষ করে মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, এসি ও হোম এপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে অভিযোগ বেশি।
দেশি মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী আমানুল্লাহ বলেন, ‘ভাই আর কয়েন না। আগে জানলে এই ভুল করি। কি সমস্যা প্রশ্ন করতেই ক্ষেপে গিয়ে তিনি বলেন, চলন্ত অবস্থায় স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়, তেল বেশি খায়, গতি ওঠে না- আর কি বলবো। বারবার সার্ভিস করাইতে করাইতে পকেট ফতুর হয়া গেলো। বিক্রি করতে চাইলে অর্ধেক দামেও কেউ নিতে চায় না।’
বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশনার ও মোটরসাইকেল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশে সাড়ে ৭শ প্রকারের ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ এবং ৮৬ ধরনের আধাপ্রস্তুত পণ্য আমদানি হয়ে আসছে। এর বাইরে শিশুদের জন্য ইলেট্রনিক সামগ্রী আমদানি হয়েছে সাড়ে ৮শ কোটি টাকার।
জানা গেছে, বিদেশি পণ্য ভালো মনে করে চড়া দাম দিয়ে কিনেও লোকসানের মুখে পড়ছেন ভোক্তারা। ভালো কোম্পানির লোগো ব্যবহার করে মূলত নকল পণ্য বিক্রির হিড়িক চলছে। ক্রেতাদের পক্ষে এসবের মান বিচার করা সম্ভব নয়। সরকারকেই এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। নিম্নমানের পণ্য দেশে প্রবেশ করতে না পারলে সব ক্রেতাই উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিম্নমানের পণ্য প্রবেশ রোধ সম্ভব। শুধুমাত্র ট্রেডিং করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লুটে নেয়ার মানসিকতা থেকেই একশ্রেণির আমদানিকারক বিদেশ থেকে পণ্য এনে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাজারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমাদের দেশে সব সময় ভোক্তারাই প্রতারিত ও ঠকে আসছেন। সরকারিভাবে বা কোনো সংস্থা থেকে মোবাইল টিমের মাধ্যমে এসব নিম্নমানের পণ্য নির্ধারণ করার জন্য নজরদারি খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ ঠকানোর ব্যবসা থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।
এমএ/জেএইচ/আরআইপি