ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে শত শত বন্দি কয়েদি হাজতিদের জন্য বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতটি হবে অন্যরকম একটি রাত। শুক্রবার ভোরের আলো ফোটার আগেই কয়েদি হাজতিদের কেউ কেউ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছাড়বেন। সকাল ৬টায় প্রথম প্রিজন ভ্যানটি কয়েদি-হাজতিদের নিয়ে স্থানান্তরিত কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবে।
শুক্রবার ভোর থেকে বন্দি স্থানান্তর শুরু হলেও মূলত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই বিদায় প্রস্তুুতি শুরু হয়ে গেছে। শুক্রবার সকালে যাদের পাঠানো হবে তাদের পাঠানোর লক্ষ্যে গুণতি রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপস্থিত হওয়াসহ বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করা হবে। এখন এ কয়েদিরা ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় রয়েছেন।
কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে ইতোমধ্যেই বন্দি স্থানান্তরের বিষয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) কারা অধিদফতরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে সার্বিক প্রস্তুুতি সম্পর্কিত পূর্ব নির্ধারিত সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে বন্দি স্থানান্তরের চূড়ান্ত পরিকল্পনা প্রণয়নে উপস্থিত সকলেই তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদি ও হাজতিসহ ছয় সহস্রাধিক বন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে দুই ডজনেরও বেশি শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধী, হত্যা, ডাকাতি মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছেন।
সূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট থেকে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে বন্দি পৌঁছানোর মূল দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। দুই ডজনেরও বেশি প্রিজনযোগে কয়েদি হাজতিদের পাঠানো হবে। পুলিশকে নিরাপত্তা প্রদানে র্যাব ও বিজিবিরা পথে সহায়তা প্রদান করবে। ইতোমধ্যেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বেশ কিছুসংখ্যক কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেরানীগঞ্জ কারাগারে কাজ শুরু করেছেন। গত দেড় সপ্তাহ যাবত প্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ সেখানে পাঠানোর কাজ সম্পন্ন হয়। বৃহস্পতিবার বাবুর্চিসহ অর্ধশতাধিক জনবল কেরানীগঞ্জ চলে গেছেন।
কারা অধিদফতরের এআইজি প্রিজন (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, বন্দি স্থানান্তরের ব্যাপারে চূড়ান্ত পরিকল্পনা ও সর্বাত্মক প্রস্তুুুতি শেষ হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে। ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জে বন্দি পৌঁছানোর মূল দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ। পথে র্যাব ও বিজিবি তাদের সহায়তা করবে।
বর্তমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি ১৮০ বছরের পুরোনো। ইতিহাস ঘেটে জানা গেছে, এক সময় এ কারাগারে মোগল দুর্গ ছিল। ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত এটি কোতোয়ালী পুলিশ স্টেশনের অংশ ছিল। ১৯শ’ শতকের শুরুতে এটিকে কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের স্মৃতি জড়িত।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে এই কারাগারে হত্যা করা হয়।
এমইউ/এসএইচএস/পিআর