ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বিদায়ের সুর
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাজছে বিদায়ের সুর। কেরানীগঞ্জ কারাগারে নির্বিঘ্নে বন্দি স্থানান্তরের লক্ষে বন্ধ করা হয়েছে স্বজনদের সাক্ষাৎ। কারাগারের আশপাশের কেন্টিনেও ঝুলছে তালা। বুধবার সরেজমিনে ঘুরে ও কারা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) থেকে পরবর্তী চারদিনের জন্য সকল বন্দির সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কোর্ট পুলিশকে নতুন করে কোনো বন্দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে না পাঠাতে চিঠি দেয়া হয়েছে। মুমূর্ষু ছাড়া কোনো রোগীকে না পাঠাতেও অলিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা সূত্র।
কারা অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বুধবার জাগো নিউজকে জানান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নির্বিঘ্নে বন্দি স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয় সভা ডাকা হয়েছে।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার থেকে বন্দি সাক্ষাৎ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও বুধবার দুপুরের পর থেকেই কার্যত তা বন্ধ রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৩টায় কারাগারের প্রধান ফটক ও আশপাশের এলাকায় দেখা গেছে বিদায়ের সুর। অন্যান্য সময় কারারক্ষীদের সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেলেও আজকের চিত্র ছিল উল্টো। অনেকে কথা বলতে গেলে নতুন কারাগারে যাওয়া ছাড়া দেখা করার কোনো সুযোগ নেই বলেই সাক্ষাৎপ্রার্থীদের বিদায় করছেন দায়িত্বরত কারারক্ষীরা। আশপাশের কারা কেন্টিনেও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। বন্দি সাক্ষাৎ কেন্দ্রের গেটের বাইরে কয়েকজন চা-সিগারেট ও বাদাম বিক্রেতাকে অলস বসে থাকতে দেখা যায়।
কারা কেন্টিনের পাশেই ফলের দোকানের কর্মচারী মিজান জানান, বন্দি স্থানান্তরের কারণে গত কয়েকদিন ধরে সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। সে কারণে বেচাকেনাও কম। কেরানীগঞ্জে নতুনভাবে দোকান দিয়ে বেচাকেনা শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
বিকেল ৪টায় জীবন নামের এক তরুণ কোলে ছোট এক শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ প্রতিবেদকে তিনি জানান, তার দুলাভাই শিবলু গ্লাস মিস্ত্রি। গেন্ডারিয়া এলাকা থেকে পরশু এক পোটলা গাঁজাসহ ধরা পড়লে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাতদিনের সাজা দেন। আজ বোন ও ভাগ্নেকে নিয়ে দুপুরে দেখা করতে আসেন। এক নিরাপত্তারক্ষীকে এক হাজার টাকা দিতে চাইলেও দেখা করতে পারেননি। কারারক্ষী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কেরানীগঞ্জে যাওয়া ছাড়া দেখা হবে না।
কারা অধিদফতরের সহকারী মহা-কারাপরিদর্শক (প্রশাসন) জাগো নিউজকে বলেন, ২৯ ও ৩০ জুলাই বন্দি স্থানান্তরের সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী চারদিন সকল প্রকার বন্দি সাক্ষাৎ বন্ধ থাকবে। আগামীকাল র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় সভায় চূড়ান্ত নির্দেশনা আসবে।
তিনি আরো জানান, সাধারণত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় দশ হাজার বন্দি থাকলেও স্থানান্তরে সুবিধার জন্য বন্দির সংখ্যা কমিয়ে ৬ হাজার ৬০০ জনে আনা হয়েছে। নারী ও শিশুদের কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
এমইউ/এএইচ/আরআইপি