ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী পুলিশ সদস্যদের শনাক্ত করা হচ্ছে
রাজধানীতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে অগ্নিসংযোগ, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ ও ছিনতাইসহ নানা ঘটনা ইতোপূর্বে ঘটেছে। অপরাধ সংঘটিত করে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও মোটরসাইকেল সহজ বাহন। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ মোটরসাইকেলের যাচ্ছেতাই ব্যবহার রোধে কঠোরতা অবলম্বন করলেও বিরূপ দৃশ্য চোখে পড়ে হরহামেশাই।
তবে চট্টগ্রামের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার পর সরকারের উচ্চপর্যায় মোটরসাইকেলের যাচ্ছেতাই ব্যবহার রোধে কঠোরতা অবলম্বনে পুলিশের ওপর চাপ দিতে শুরু করে। এরপরই রাজধানীতে শুরু হয় লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান।
শুধু তাই নয়, সংবাদ সম্মেলন ডেকে স্বয়ং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার জানান, মোটরসাইকেলে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান স্বীকৃত লোগো কিংবা স্টিকার ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এরপরও ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি থেমে নেই। স্বয়ং পুলিশ সদস্যদের এ আইন লঙ্ঘন হতে দেখা গেছে।
সচেতন জনসাধারণের প্রশ্ন, ট্রাফিক আইন প্রয়োগে পুলিশ কাজ করে। কিন্তু সেই পুলিশই যদি আইন লঙ্ঘন করে কিংবা উল্টো পথে চলে, তবে সে দেশে আইন মানবে কে? তবে পুলিশ বলছে, আইন অমান্যকারী যেই হোক, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাফিক সচেতনতায় ডিএমপি হাতে নিয়েছে নানা কর্মসূচি। ঢাকা মহানগর পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত বার্তাও প্রচার করা হয়েছে।
প্রচারিত বার্তায় বলা হয়, ‘আমি, আপনি, আমরা সবাই সচেতন নাগরিক। সুনাগরিক প্রত্যেকেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাহলে কেন আমরা আইন অমান্য করছি? যানবাহন চালানোর সময় কেন ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করছি? কেন হাইড্রোলিক হর্ন, হুটার বেকন লাইট, কালো গ্লাস ব্যবহার করছি? উল্টো পথে চলাচল করছিই বা কেন? মোটরসাইকেল বা অন্য যানবাহন চালাতে গিয়ে মামলায় জড়ালে না হয় জরিমানা দিয়ে রেহাই পেলেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় যদি আপনার জীবন হুমকিতে পড়ে, সেই জরিমানা কার কাছে দেবেন? আসুন সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলি। সুনাগরিকের পরিচয় দেই। সবার জন্য শুভকামনা।’
তবে ওই বার্তা প্রচারের পর অনেকেই ওই পেজে বিরূপ মন্তব্য ঠুকে দিয়েছেন। প্রিয় নীল আকাশ নামে একজন লিখেছেন, পুলিশ ট্রাফিক আইনের প্রতি বিন্দুমাত্র রেসপেক্ট করে না। আশপাশের মানুষ দেখছে তাদের কোনো ফিলিংস নাই। শার্টের বোতাম খুলে এক হাতে স্টিয়ারিং, কিসের সিটবেল্ট, কিসের টার্নিং সিগনাল, পেছনে পুলিশ স্টিকার লাগানো। প্রতিদিন ছবি তুলে আমরা জমা দিব, কথা দেন অ্যাকশন (ব্যবস্থা) নেবেন? শিক্ষক ফাঁকিবাজ হলে শিক্ষার্থীর রেজাল্ট খারাপ হবে।’
ইয়াসিন আরাফাত নামে একজন লিখেছেন, “আপনাদের কথাগুলো দারুণ সুন্দর। কিন্তু যখন একটা মোটরসাইকেলে সবকিছু থাকার পর মানে রেজিস্ট্রেশনের কাগজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকার পরও গাড়ির ফিটনেস বা যে কোনো অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ টাকা আদায় করে সেটার কি হবে? তখন পুলিশ সু-পুলিশের পরিচয় দেয় না কেন? আমি নিজেও গত কয়েকদিন আগে সে রকম ঝামেলায় পড়েছি। সবকিছু থাকার পরও বললো, গাড়ির ফিটনেস ঠিক নেই। অথচ গাড়ি কেনাই হলো ৬ মাস আগে। এগুলো করার পর ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ কথাটা মিথ্যা হয়ে যায়।”
তারিক হোসাইন লিখেছেন, ‘ভাই কথায় আছে না - চোরের মা’র বড় গলা।’
ইমরান খান নামে একজন লিখেছেন, ‘মোটরসাইকেলের লাইটের ব্যাপারটা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি। বর্তমানে বেশির ভাগ প্রাইভেটকার, দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকে যে সকল লাইট ব্যবহার করা হয়, ওইগুলো চোখে লাগলে রাতে হাইওয়েতে কিছু দেখা যায় না। অথচ এক টুকরা ইটও যদি বাইকের চাকার নিচে পড়ে তাহলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। এই অবস্থায় বাইকে শুধু হ্যালোজেন লাইট নিয়ে রাতে চালানোটা বিপজ্জনক। এলইডি/ফগ লাইট জরুরি হয়ে পড়েছে।’
তবে মহানগর পুলিশ একটি কমেন্টের ইতিবাচক জবাব দেয়ায় অনেকে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছে।
আনোয়ার পারভেজ নামে একজন লিখেছেন, “Many police officers also don`t follow the law, so please mark everyone. I always follow traffic law.
এমন মন্তব্যের জবাবে ডিএমপি লিখেছে, thanks. we marked those police officers.
এ ব্যাপারে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি মো. ইউসুফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, আইন সবার জন্যই সমান। কোন কোন পুলিশ সদস্য ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছে, তা শনাক্ত করা হচ্ছে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেইউ/এএইচ/এসএইচএস/আরআইপি