টানা ৯ দিনের ছুটি থাকলেও জমছে না পর্যটন ব্যবসা
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি পেয়েছেন চাকরীজীবীরা। কাজে বুদ হয়ে থাকা পেশাজীবী এসব মানুষের জন্য এটি অবশ্যই খুশির খবর ছিল। এ ঘোষণাতে খুশি হয়েছিলেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ধারণা করা হচ্ছিল সপ্তাহেরও বেশি এ ছুটিতে জমজমাট হয়ে উঠবে পর্যটন ব্যবসা। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠছে না।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মুনসী বলেন, এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হচ্ছে ১ জুলাই থেকে। সে হিসেবে ছুটির ভেতর থাকবে ৫ থেকে ৬টি রোজা। রোজা নিয়ে আমাদের দেশের মুসলমানরা ভ্রমণে আনন্দ পান না। তাই ছুটির বেশিরভাগ দিন মানুষ বাড়িতেই কাটাবেন। ৬ জুলাই ঈদ হলে কক্সবাজারে পর্যটক আসা শুরু হবে ওইদিন রাত থেকে। এমনটি হলে ৭-৮-৯ জুলাই তিনদিন ভ্রমণ পিপাসুদের সেবা দিতে পারবেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে, এবার ঈদ পড়েছে পুরো বর্ষা মৌসুমে। তাই ভারী বর্ষণ হলে একেবারে মাটি হবে ঈদে ব্যবসার আশা। কিন্তু আকাশ মেঘলা না থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত নগরী কক্সবাজারে পুরনো চিত্র দেখা যাবে। পর্যটকে টইটম্বুর হতে পারে বালিয়াড়ি। এমনটি আশা করছেন দিগন্ত ট্যুর অপারেটর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইয়ার মুহাম্মদ।
এরপরও প্রতি বছরের মতো এবারো পর্যটক বরণে হোটেল-মোটেলগুলো সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। কিছু কিছু হোটেল-মোটেল শর্ত সাপেক্ষে অগ্রিম বুকিংও শুরু করেছে। পর্যটক যাই আসুক পর্যটন স্পটগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পর্যটন এলাকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সাজানো হচ্ছে নানা আকর্ষণীয় সাজে। হোটেল-মোটেলে পরিবর্তন করা হচ্ছে পুরনো জিনিসপত্র। দেয়ালের পুরনো আস্তর তুলে লাগানো হচ্ছে প্লাস্টিক পেইন্ট বা ডিসটেমপার। রেস্তোরাঁসমূহে চলছে ধোঁয়ামুছা ও রঙ লাগানোর প্রতিযোগিতা। আর ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদারে স্পটে স্পটে লাগানো হচ্ছে সর্তকতামূলক সংকেত ও সাইনবোর্ড।
হোটেল মালিকদের মতে, সৈকতের এ শহরে হোটেল-মোটেল রয়েছে চার শতাধিক। এসব হোটেলে দৈনিক প্রায় এক লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু কিছু হোটেল আগে ভাগে বুকিং দিলেও একটু বাড়তি সুবিধার আশায় অনেকে এখন বুকিং নিয়ে কথা বলছেন না। ঈদের টানা ছুটিতে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে সৈকতের বালিয়াড়িতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাঙ্গা হয়ে উঠবে পর্যটন ব্যবসা এমনটি বিশ্বাস হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের।
হোটেল সি-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, অতীত পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বাড়ে কক্সবাজারে। এবারো এমনটি হতে পারে। তবে বাড়তি টানা ছুটি কাজে লাগানো যাবে বলে মনে হয় না।
হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, ঈদে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। এবারো ব্যতিক্রম নয়। সরকারি ছুটি ৯ দিন হলেও বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে না। কারণ ছুটির অর্ধেক সময় রোজার ভেতর পড়েছে। এরপরও আশা করা যায়, পর্যটকের আগমন আশানরূপ হবে।
জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানি, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন স্পটগুলোকে অতিথি বরণে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমি জানান, ঈদে সমুদ্রের নির্মল হাওয়া গায়ে জড়াতে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের কর্তব্য। তাই নিয়মমতো আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমন করতে জেলা পুলিশের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এবারের ঈদ বর্ষায় হওয়াতে সাগরে জীবন রক্ষাকারী লাইফগার্ডদের প্রশিক্ষণ আরো জোরদার করা হয়েছে। যাতে ঈদের খুশিতে সাগরে কোনো প্রাণহানি না ঘটে। এছাড়াও টেকনাফ ও ইনানিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের নতুন ক্যাম্প খোলা হয়েছে।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ