এডিপির ১০ শতাংশ আইসিটিতে বিনিয়োগের দাবি
ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন বাস্তবায়নের নেপথ্যে কাজ করেছে সফটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। গুরুত্বপূর্ণ এ সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন শামীম আহসান। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালকসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যোগ্যতার প্রমাণ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সেরও সদস্য হয়েছেন তিনি।
আসছে ২৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে বেসিসের ২০১৬-১৯ সেশনের নির্বাচন। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে শামীম আহসানের বাণিজ্যিক কার্যালয়ে তার সময়ে বেসিসের সফলতা, ব্যর্থতা এবং নির্বাচন-পরবর্তী নানা দিক নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিক মজুমদার।
জাগো নিউজ : শুরুতে বেসিস সম্পর্কে কিছু বলবেন?
শামীম আহসান : বেসিস আমাদের কাছে একটি আবেগ, একটি স্বপ্ন, একটি সংগ্রামের নাম। ১২ বছর ধরে বেসিস সদস্য হিসেবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। তিন বছর ধরে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আগামী নির্বাচনে সভাপতি না হলেও বেসিসের পথচলায় সঙ্গী হয়ে থাকবো।
জাগো নিউজ : আইটি খাতের বিকাশে আপনার মেয়াদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শামীম আহসান : বেসিসের সদস্য কোম্পানিগুলোর জন্য দেশে ও বিদেশে বাজার সৃষ্টি ও ব্যবসায় সম্প্রসারণে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে গণমাধ্যম। আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম দেশে ও বিদেশে আমাদের অর্জন, সক্ষমতা ও সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছেন।
জাগো নিউজ : ২৫ জুন আপনাদের নির্বাচন, নির্বাচন বিষয়ে কিছু বলবেন?
শামীম আহসান : দেশের তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে বেসিস যে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে ও সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে পলিসি তৈরি, পরিবর্তন বা আলোচনা করছে, তা দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে। গত কয়েক বছরে বেসিস খুবই ভালো কাজ করেছে বলেই এবারের নির্বাচন বেশ সাড়া ফেলেছে। রেকর্ড পরিমাণ নমিনেশন সাবমিট হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোও বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে এবারের নির্বাচনকে। আশা করি এ নির্বাচনে বেসিসের চলমান অগ্রগতির ধারাবাহিকতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতোই নেতৃত্ব আসবে।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশের আইটি খাতের ভবিষ্যৎ কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শামীম আহসান : দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখন আন্তর্জাতিক স্বীকৃত। বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। ফেনক্স ভেঞ্চার ক্যাপিটালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামীতে আরও কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি আসবে। সরকার ২০২১ সাল নাগাদ এই খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আমাদের দেশীয় কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিকমানের সক্ষমতা রয়েছে। আইসিটি ডিভিশন ও বেসিস মিলে ১০০০ উদ্ভাবনী প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভবিষৎ আরও ভালো হবে।
জাগো নিউজ : ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
শামীম আহসান : ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে। বেশ কিছু সরকারি সেবায় ডিজিটালের ছোঁয়া, ইউনিয়ন পর্যন্ত উচ্চগতির ফাইবার অপটিক ক্যাবল পৌঁছে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির সেবা নিচ্ছে। তবে সরকারকে পুরোপুরিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হলে আরও বেশি কাজ করা প্রয়োজন। স্থানীয় কোম্পানিগুলো যাতে সরকারি কাজ পায় বা অগ্রাধিকার থাকে, বাজেটের এডিপিতে (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) ন্যূনতম ১০ শতাংশ যাতে আইটিতে বরাদ্দ দেয়া হয়, বিদেশে দেশের কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ে আরও গুরুত্ব দেয়া হয় এমন প্রস্তাব আমরা আগে থেকেই করে আসছি। উপরোক্ত বিষয়গুলোতে নজর দিলে ও দেশীয় কোম্পানির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন হবে।
জাগো নিউজ : আপনি কী মনে করেন, বেসিস আপনার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবে?
শামীম আহসান : বেসিসের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে দীর্ঘ পথচলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবার সহযোগিতা পেয়েছি। গত চার বছরে অনেক নতুন নেতৃত্ব এসেছে। সফলতা যা এসেছে, তা যৌথভাবে কাজ করার মাধ্যমেই। তারা প্রত্যেকেই একাধিক প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। তাদের প্রত্যেকেরই নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্যতা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ না করলেও দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে বেসিসসহ আপনাদের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তাই আমার শূন্যস্থান তৈরি হবে বলে আমি মনে করি না।
জাগো নিউজ : আইসিটির উন্নয়নে সরকারের প্রতি আপনার কিছু বলার আছে কিনা?
শামীম আহসান : দায়িত্বে থাকাকালে আমি একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। আমরা বেসিস সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি।
আমরা তাদের কাছে দাবি করেছিলাম, এডিপি ১০ শতাংশ যেনো আইসিটি খাতে বিনিয়োগ করা হয়। সরকারি সব কাজ এবং কেনাকাটায় স্থানীয় কোম্পানিগুলোর ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণ থাকার কথাও বলেছি। এ বিষয়ে একটা আইন করে দিতে সম্মত হয়েছেন। যারা বেসিসের নতুন কমিটিতে দায়িত্ব নেবেন, তারা আমাদের এই অসমাপ্ত কাজটি শেষ করবেন বলে আশা রাখছি।
আরএম/এএইচ/আরআইপি