এক বছরে জমিই পাওয়া গেল না ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার নির্মাণে
দেশে ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার স্থাপনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বছর আগে আট কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও জমির অভাবে সেন্টারটির স্থাপন কাজ এখনও শুরু হয়নি।
জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কমিটির শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিরা গত বছর জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলেন, খুব শিগগিরই মহাখালীতে তিন বিঘা জমির ওপর ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টারটির নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
সেন্টারটি স্থাপিত হলে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে দেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ এইডস্, হেপাটাইটিস-বি ও হেপাটাইটিস-সিসহ অন্যান্য রোগ থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তারা। কিন্তু এখন তারা বলছেন বরাদ্দকৃত ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় আট কোটি টাকা বরাদ্দ থাকা স্বত্ত্বেও নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেননি। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের তৃতীয় তলায় আপাতত ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টারে স্থাপন করে কাজ শুরু করার জোর চিন্তাভাবনা চলছে বলে তারা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার শতভাগে উন্নীত করার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টার্গেট পূরণে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। দেশে প্রতি বছর ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে সরকারি ২১৯টি ও বেসরকারি ১০২টিসহ মোট ৩২১টি ব্লাড সেন্টারের মাধ্যমে ৭ লাখ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।
রক্তের চাহিদার প্রায় সিংহভাগ পূরণ হলেও মোট সংগৃহিত রক্তের মাত্র শতকরা ৩০ ভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদাতা। এমনই এক পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ‘রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হই সকলে’।
জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞ কমিটির মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. আসাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের সকল দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ২০২০ সালের মধ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা শতভাগে উন্নীত করার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাক্ষর করেন। কিন্তু ২০২০ টার্গেট পূরণে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, দ্রুত ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি। সেন্টারটি স্থাপন করে সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে দেশব্যাপী স্বেচ্ছারক্তদানে এগিয়ে আসতে দেশব্যাপী কর্মসূচি পরিচালনা না করলে ২০২০ টার্গেট পূরণ করা দুরুহ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান. প্রতি বছর সাত লাখ ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হলেও রক্তের সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে না। বর্তমানে সারাদেশে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৩২১টি ব্লাড সেন্টার থাকলেও তন্মধ্যে মাত্র ২৪টি ব্লাড কমপোনেন্ট সেপারেশনের সুযোগ রয়েছে।
সেপারেশন সেন্টার না থাকায় হাজার হাজার ব্যাগ রক্তের বিভিন্ন উপাদানের যৌক্তিক ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বেচ্ছায় রক্তদানের হার থাইল্যান্ডে শতকরা ১০০ ভাগ, শ্রীলঙ্কাতে শতকরা ৯৬ ভাগ, ভারতে শতকরা ৬৫ ভাগ এবং ভারতের পশ্চিম বাংলায় শতকরা ৯৩ ভাগ। বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে শতকরা ১০০ ভাগ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়।
প্রফেসর আসাদুল ইসলাম জানান, ২০০০ সালের দিকে রক্তের মোট চাহিদার ৭০ ভাগ পেশাদার রক্তদাতার কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হতো। কিন্তু, বর্তমানে শতকরা ৩১ ভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদাতা ও অবশিষ্ট ৫৯ ভাগ আত্মীয়-স্বজনরা দিচ্ছেন। রক্তদাতার হার বৃদ্ধি পেলেও স্বেচ্ছারক্তদাতার সংখ্যা আশানুরুপহারে বাড়ছে না।
দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২ ভাগকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করতে পারলে রক্তের চাহিদা পূরণ তথা ২০২০ টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে।
প্রফেসর আসাদুল ইসলাম আরো জানান, উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছায় রক্তদানের হার প্রতি এক হাজার জনে ৪০ জন আর উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি এক হাজার জনে ৪ জনেরও কম।
এমইউ/একে/পিআর