এক শিশুর দেহে আরেক শিশু
ছোট্ট শিশুটির নাম মোহাম্মদ আলী। বয়স তিন মাস ছয়দিন। আর দশটি শিশুর চেয়ে তার দৈহিক গড়ন সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাভাবিক একটি শিশুর সঙ্গে তার পার্থক্য হলো সে নিজে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু আবার তার দেহের ওপর আরেকটি শিশুর পেটের নিচের অর্ধেকসহ শরীরের নিম্নাঙ্গ যুক্ত হয়ে আছে। ঊর্ধাঙ্গের মাথা, বুক ও দু’হাত না থাকলেই মোহাম্মদ আলীর ওপর ভর করে আংশিক অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে আছে অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি।
মোহাম্মদ আলী নামের ওই শিশুটি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিনের অধীনে চিকিৎসাধীন।
সোমবার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এ ধরনের শিশুকে প্যারাসাইটিক টুইন বা অপূর্ণাঙ্গ যমজ বলা হয়।
তিনি জানান, এ পূর্ণাঙ্গ শিশুটির উপর ভর করা অপূর্ণাঙ্গ শিশুটিকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অপূর্ণাঙ্গ যমজ শিশুটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নীরিক্ষা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী ২০ মার্চ তারা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ শিশুটিকে অপূর্ণাঙ্গ শিশু থেকে আলাদা করতে সমর্থ হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ জটিল অপারেশনে অ্যানালজেশিয়া, অ্যানেসথেশিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগ এবং নবজাতক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান।
অধ্যাপক রুহুল আমিন জানান, অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির একটি কিডনি, মূত্রাশয় ও পুংলিঙ্গ রয়েছে যা দিয়ে সে নিয়মিত প্রসাব করছে। অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি সংযুক্ত আছে পূর্ণাঙ্গ শিশুটির পেটের ডান দিকে এবং অপূর্ণাঙ্গ শিশুটির পিঠের হাড় পূর্ণাঙ্গ শিশুটির বুকের হাড়ের সঙ্গে মেশানো রয়েছে। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিশুটির নাভিও অসম্পূর্ণ যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় এক্সমফালোস। এর ভেতরের যকৃত ও খাদ্যনালী একটি পর্দা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার যাত্রাপুর গ্রামের দিনমজুর মো. জাকারিয়ার স্ত্রী গৃহবধূ হীরামনি গত ৭ মার্চ রাত ১১টায় নিজ বাড়িতে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে এ সন্তানের জম্ম দেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে হীরামনি বলেন, সাতমাসের গর্ভাবস্থায় স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তিনি আলট্রাসনোগ্রাম করান। তখন চিকিৎসকরা ছেলে সন্তান হবে জানালেও আর কোনো সমস্যার কথা বলেননি।
বাড়তি অংশ থাকাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ছেলের কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। জন্মের তিন দিন পর তিনি ছেলেকে এনে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করান।
মোহাম্মদ আলী গত তিন মাসেরও বেশি সময় যাবত বিএসএমএমইউতে ভর্তি থাকলেও বিষয়টি গোপন রাখেন চিকিৎসকেরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, শিশুটির বয়স তখন কম ছিল। গণমাধ্যমে বিষয়টি এলে তারা ভিড় করতেন। ফলে শিশুটির চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হতো। শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখা ও সর্বোপরি নিরাপত্তার স্বার্থে এমনটি করা হয়েছে।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান প্যারাসাইটিক টুইন সমস্যা নিয়ে জন্মানো শিশুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন। তার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিশুটিকে অপূর্ণাঙ্গ শিশু থেকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিশু সার্জারি বিভাগ।
এমইউ/বিএ/এমএস