সুস্থ হয়ে ব্যবসা করতে চান বৃক্ষমানব
‘১০ বছর ধরে কোন কাজ করি না। অভাব অনটনের সংসার। এবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবো। সেখানে দোকান দিয়ে ব্যবসা করবো।’ জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানালেন বৃক্ষমানব আবুল বাজনদার।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘সুস্থ হয়ে ঢাকায় আর থাকবো না। বাকি জীবনটা গ্রামের বাড়িতেই থাকার ইচ্ছা। সেখানে ব্যবসা করবো, একটা দোকান দিতে চাই। যদিও দোকান দেয়ার মতো কোনো টাকা পয়সা আমার কাছে নেই।’
এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে আবুলকে বিরল ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে আবুল বলেন, ‘আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো। অপারেশনের পর ব্যান্ডেজের ভেতরে হাত-পা’র আঙুল নাড়াচাড়া করতে পারি। কোন জ্বালাযন্ত্রণাও নেই। হাত-পা আগের চেয়ে কিছুটা ভারমুক্ত, খুব হালকা বোধ হচ্ছে। কোনো খাবার খেতে নিষেধ নেই, তবে অপারেশনের কারণে খাওয়ার রুচি কমে গেছে।’
ঢাকায় এসে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও অপারেশন করা হবে। সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, একথা স্বপ্নেও ভাবেননি আবুল।
তার ঢাকায় আসার গল্প জানতে চাইলে আবুল বলেন, পৌরসভা নির্বাচনের সময় সুনিল দাস নামে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এক সাংবাদিক নির্বাচন কাভার করতে খুলনায় যায়। তার সঙ্গে দেখা করে নিজের রোগের বিষয়ে জানান আবুল। সেই সাংবাদিক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি ফজলুল বারীকে বিষয়টি জানান। অস্ট্রেলিয়া থেকে বারী নামের ওই ব্যক্তি খুলনার ডা. স্বপনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে ডা. স্বপন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে কথা বলেন। তারই পরামর্শেই উন্নত চিকিৎসার জন্য আমি ঢাকায় আসি।
আবুলের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হলেও সকালে ৮টা ট্যাবলেট এবং রাতে ৭টা ট্যাবলেট খেতে হয়। সপ্তাহের প্রতি শনিবার তার হাত-পা ড্রেসিং করানো হয়। খাওয়ায় কোনো নিষেধ নেই। তবে মুখে রুচি হয় না তার।
আবুল বাজনদারের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বার্ন ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘তার দেহে পরপর তিনটি অপারেশন করা হয়েছে। চিকিৎসা প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। ২-৩ মাসের মধ্যে সে আরো সুস্থ হবে। চিকিৎসা শেষে হাত দিয়ে কাজকর্ম করতে পারবেন আবুল।’
গত ৪ মাস থেকে ঢামেকের কেবিনে ‘বন্দী’ দিন কাটাতে খুব কষ্ট হয় গ্রামের ছেলে আবুলের। তিনি বলেন, গত মাসে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সেই ফজলু বারী ভাই ঢামেকের কেবিনে একটি টিভি কিনে দিয়েছেন। এখন টেলিভিশন দেখেই সময় কাটান আবুল। টিভিতে কি দেখেন জানতে চাইলে আবুল বলেন, ‘সংবাদ দেখি, খেলা দেখি। সাকিব-মুস্তাফিজদের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ- আইপিএল দেখি। সনি-৮ চ্যানেলের আদালত অনুষ্ঠানটা খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে স্ত্রীর সঙ্গে স্টার জলসায় নাটকও দেখি।
সুস্থ হলে কি করতে চান? এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল বলেন, ৭ বছর ধরে নিজের হাতে ভাত খাই না। কাজ করতে পারি না। সুস্থ হয়ে নিজ হাতে কাজ করবো। মেয়েকে আদর করবো, ভাত খাইয়ে দেব।
আবুল বলেন, ডাক্তারের কথামতো বছরখানেকের মধ্যে ভালো হতে পারি। আমারো বিশ্বাস ভালো হবো। নিজের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন এই বৃক্ষমানব।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আবুলকে তিনকাঠা জমি কেনার জন্য ৬ লাখ টাকা দান করেছেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. কবির চৌধুরী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ টাকা আবুল বাজনদারের বাবার হাতে তুলে দেন তিনি।
এআর/এআরএস/আরএস/পিআর