‘বৃক্ষমানব জেনেও আমাকে বিয়ে করে হালিমা’
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে আলোচনা খুলনার আবুল বাজনদারের বিরল ‘ট্রিম্যান’ রোগের। এটি বিশ্বে একটি বিরল রোগ। ট্রিম্যানের হাত-পায়ের আঙুল থেকে বের হওয়া উপসর্গগুলো দেখতে অনেকটা গাছের শেকড়ের মতো।
১০ বছর আগে তার এই উপসর্গগুলো প্রথম দেখা যায়। গত ৭ বছর ধরে আবুলের হাত-পা অচল। নিজ হাতে খেতেও পারতো না সে। তখন সেই মুহূর্তে তার জীবনে আসেন হালিমা খাতুন। গ্রামে বৃক্ষমানব নামে পরিচিতি আবুলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল হালিমার। পরিবারের অমতে আবুলকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত কোন বিরক্তি ছাড়াই নিঃস্বার্থভাবে আবুলের সেবা করে যাচ্ছেন এই নারী।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে আবুলকে বিরল এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
রোববার জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের সময় এই ‘মহীয়সী নারী’র কথা বার বার বলছিলেন আবুল। তিনি বলেন, ‘সবাই না করেছিল। কিন্তু আমাকেই বিয়ে করলো হালিমা। বিয়ের পর থেকে আমার সেবাযত্নই করে যাচ্ছে সে। এক মুহূর্তের জন্যেও তার মধ্যে কোন বিরক্তি দেখিনি।’
ঢামেকে চিকিৎসাধীন আবুলের কেবিনে ঢুকে সাক্ষাৎকারের পুরো সময়টাতেই পাশে ছিলেন হালিমা। স্বামীর অনেক প্রশ্নের উত্তরগুলো নিজেই দিচ্ছিলেন তিনি। সাংবাদিক ছবি তুলবে বলে আবুলকে টি-শার্ট পড়িয়ে দেন তিনি। সময়মত প্রতিবেলার খাবারে আবুলকে নিজ হাতে খাইয়ে দেন এই হালিমা।
আবুলের সঙ্গে বিয়ের কথা বলতেই সামনে থেকে সরে যান হালিমা। বিয়ের সময়ের সেই মুহূর্তগুলো নিয়ে আবুল বলেন, ‘২০১১ সালে আমাদের বিয়ে হয় তবে পরিবারের অমতে। আমার মতো একজনের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজী ছিলো না হালিমার পরিবার। কারণ বিয়ের আগেও আমার একই অবস্থা ছিল। বিয়ের আগে অনেক বাধা ছিলো হালিমার সামনে, সবাই বলতো এরকম ভয়ানক অসুখের একটা মানুষকে বিয়ে করলে জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু কারো কথাই শোনেনি হালিমা। ঠিকই আমাকে বিয়ে করেছে সে। বিয়ের দিন থেকে এখন পর্যন্ত আমার সেবাই করে যাচ্ছে সে।’
প্রিয় খাবার জানতে সম্পর্কে চাইলে আবুল বাজনদার উত্তর দেয়, সে সব খাই। পাশে বসে থাকা তার স্ত্রী বলেন, ‘ফল তার খুব প্রিয়। বিশেষ করে লিচু, আম, বেদানা। তবে এবার এখনো লিচু কিনে খেতে পারেননি তিনি।’
স্ত্রীর ব্যাপারে কি বলবেন? প্রতিবেদকের প্রশ্নে আবুল বলেন, ‘ও আমার জন্য অনেক করেছে। ইন্টারমিডিয়েট (উচ্চ-মাধ্যমিক) পড়া শুরু করেছিল, শেষ করতে পারেনি। যদি হালিমাকে একটি চাকরি দেয়া হতো খুব ভালো হতো। শিক্ষকতা অথবা অন্য কোন চাকরি। আমি জানি সে পারবে। আমি সবার কাছে আমার স্ত্রীর জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাই।’
চুনকুড়ি গ্রামের শহীদ স্মৃতি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এ-(মাইনাস) পেয়ে চালনা মহিলা কলেজে ভর্তিও হয়েছিল হালিমা। তবে তিনমাস ক্লাস করার পরই আবুলকে বিয়ে করেন তিনি।
এআর/জেএইচ/এমএস