ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

‘সুস্থ হয়ে প্রথমেই মেয়েকে কোলে নিয়ে খাওয়াবো’

প্রকাশিত: ০২:৫৭ পিএম, ২৯ মে ২০১৬

‘খুব ইচ্ছা হয় মেয়েকে কোলে নিয়ে কিছু খাওয়াই। কিন্তু গত তিন বছরে এই সৌভাগ্যটুকু হয়নি আমার। সুস্থ হয়ে প্রথমেই মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করবো, খাইয়ে দেবো।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কেবিনে বসে এভাবেই নিজের আশার কথা জানালেন খুলনার বৃক্ষমানব খ্যাত আবুল বাজনদার।

রোববার জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন তার আগের জীবন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা। তিন বছরের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তার স্বপ্ন আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা।

বিরল এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস রোগে আক্রান্ত আবুলকে এবছরের জানুয়ারি থেকে ঢামেক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি আবুলের বিরল এই রোগের বয়স ১০ বছর। তার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তাহিদার বয়স তিন বছর। বাবা-মায়ের সঙ্গে সারাদিন হাসপাতালেই থাকে মেয়েটি। বাবার পাশের বেডে একটি টেডি বিয়ারের সঙ্গে খেলা করেই বদ্ধ ঘরে দিন কাটে তার।

আবুলের মেয়ে পৃথিবীতে এসেছিল তার জন্য আশীর্বাদ হয়ে। ২০১১ সালে স্ত্রী হালিমার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয় আবুলের। বিয়েতে শ্বশুর বাড়ির কেউ রাজি ছিলেন না। মেনেও নেননি আবুল-হালিমাকে। তবে তাহিদার জন্মের পরপরই তারা সেই বিয়ে মেনে নেন। আবুলের জীবনের সবকিছু এখন এই মেয়ে। গত বুধবার (২৫ মে) ছিল মেয়েটির জন্মদিন।

মলিন হাসি মুখে আবুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘২৫ মে মেয়ের তৃতীয় জন্মদিন ছিল। হাসপাতালে থাকায় পালন করা হয়নি। কিছুই করতে পারিনি তার জন্য। রোগের কারণে নিজেই খেতে পারি না, তাকেও কিছু খাওয়াতে পারি না। উল্টো মেয়েই অনেকসময় আমাকে খাবার মুখে তুলে খাওয়ায়।’

Bajender

‘মেয়ে আমার জায়নামাজে বসে আমার জন্য দোয়া করে। খুব ইচ্ছা মেয়েকে ডাক্তার বানাবো।’ বলে জানায় আবুল বাজনদার।

তবে মেয়েকে ডাক্তার বানাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। এতো টাকাতো নেই আবুলের কাছে। অভাবের কারণে মেয়ের জন্য এ পর্যন্ত একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলতে পারেননি তিনি। জমা নেই কোনো টাকা।

তিনি বলেন, ‘সুস্থ হওয়ার পর টাকা জমা করে মেয়েকে ডাক্তার বানাবো। মেয়েটাকে নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করবো। আমি চাই সে যাতে ডাক্তার হয়ে গরিবদের চিকিৎসা করতে পারে। যদিও এর জন্য অনেক টাকা লাগবে। আশা করি সবাই আমার মেয়েকে ডাক্তার বানাতে সাহায্য করবে।’

এই রোগমুক্তিতে সাহায্য করার জন্য দেশবাসী ও বিশেষ কয়েকজনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আবুল। তিনি বলেন, ‘ফ্রি চিকিৎসা পাবো, ফ্রিতে অপারেশন হবে, কখনো ভাবিনি। আমাকে সাহায্য করার জন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞ।’

আবুলের চিকিৎসার দায়ভার বহন করছে সরকার। এছাড়াও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২০ হাজার টাকা, ছাত্রলীগ ১০ হাজার টাকা, সাভারের অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ২০ হাজার টাকা এবং কাজী বাহার নামে এক ব্যক্তি পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার দিয়ে সহায়তা করেছেন। এছাড়াও এনভয় টেক্সটাইলের পক্ষ থেকে আবুলের ডাচ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা জমা করা হয়।

আবুলের ঢাকায় আসা থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত অস্ট্রেলীয় প্রবাসী ফজলুল বারী নামে একজন তাকে খুব সাহায্য করেছেন। আবুলকে ১০ হাজার টাকাসহ আবুলের কেবিনে একটি টেলিভিশন ও ওভেন কিনে দিয়েছেন তিনি। তার সম্পর্কে আবুল বলেন, ‘তিনি এখন আমার ভাই। আমার জন্য তিনি অনেক করেছেন। এই ঋণ শোধরানোর নয়।’

খুলনার আবুল ঢাকায় আসার পর তার চিকিৎসায় প্রথমে ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। পরে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে নয় সদস্যের বোর্ড করা হয়। মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার দুহাত ও পায়ে তিনদফা অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো বলে জানিয়েছের খোদ আবুল বজনদার।

এআর/বিএ/পিআর

আরও পড়ুন