দেহ ওপারে, প্রাণ তো এপারেই
‘শত সাধনার পর মানব জনম পেয়েছি গো। পূর্ব জনমের পূণ্যির কারণেই মানুষ হয়ে ভবে আসা। নইলে জীব-জানোয়ার হয়ে ফিরতে হত। এ জীবনের মূল্য দিতে হয়। কথিত সংসার ধর্মে আটকে গেলে জীবনের মানে দাঁড়ায় না গো। গোটা দুনিয়াই তো সংসার। আর এই সংসার ধর্মে বিচরণ করতে পারলেই মানব ধর্মে মন রাঙানো যায়। আত্মাতে পরমাত্মার মিলন ঘটানো যায়। লালন সাঁইজি খুব সহজেই তা উপলব্ধি করে গেছেন।’
বলছিলেন, ভারতের প্রখ্যাত বাউল সাধক কবিয়াল অসীম সরকার। অসীম সরকারের জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে হলেও বহু আগে পাড়ি জমিয়েছেন ওপার বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভবানীপুর গ্রামে বসবাস এখন। ভারত সরকারের পুরস্কারপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই বাউল সাধক সমানতালে দখলে রাখছেন ভারতের বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও। সাধক গুরু ভবা পাগলার চেতনা বুকে ধারণ করেই অসীম সরকারের পথচলা।
ছবি- মাহবুব আলম
লালন সাঁইজির ১২৭তম তিরোধান উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ লালন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতের পক্ষ থেকে শিল্পী হয়ে বাংলাদেশে গান করতে আসেন গত ১৪ অক্টোবর। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে সাধুসঙ্গের সেই আয়োজনে মাতিয়ে তোলেন মহাজনদের গানে গানে।
গান শেষে সাধুসঙ্গে বসেই কথা হয় গুণী এই শিল্পীর সঙ্গে। বলেন, সাঁইজের বাণী তো অমৃত। এ সুধা যে পান করেছে, তার আর গরলের ভয় নেই। বাবা ভবা পাগলা আর লালন সাঁইজির বাণী নিয়েই তো পথ চলি। তাদের দেখানো পথেই মানবজনমের মুক্তি।
সমাজের হিংসা-বিদ্বেষ তাড়াতে বাউলের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাইকে একই জায়গায় যেতে হবে। এত হানাহানি, হিংসে একেবারেই মিছে। প্রভুর নামে মানুষ খুন করা হয়। এতে প্রভুকেই দিল থেকে হত্যা করা হয়। কারণ মানুষের মধ্যেই প্রভুর বাস।
ছবি- মাহবুব আলম
বাংলাদেশে এসে গান করে কেমন ভক্ত পান -জানতে চাইলে বলেন, বাউলের কোনো দেশ থাকে না। আমরা গান আর সুরের দিয়ে সকলের মধ্যে বিরাজ করতে চাই। এ দেশ তো আমারই। কবি গান, কীর্তন গাইতে কতবার এসেছি এপারে, তার কি শেষ আছে? দেহ ওপারে, প্রাণ তো এপারেই। নইলে সাঁইজির টানে বারবার আসি কী করে?
এএসএস/এআরএস/আরআইপি