শেষ কবে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গেছেন?
শহরের মানুষ নাকি যান্ত্রিক হয়ে গেছে। অনেকের মুখেই এমন কথা শুনি। কথাটির যে একেবারে ভিত্তি নেই, তা নয়। শহরের মানুষকে যন্ত্রের মতোই চলতে হয়। ঘড়ি ধরে সব কিছু করতে হয়। অবসর যেন সোনার হরিণ। ফলে অবসর কাটানোর জন্য আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়া হয় না মাসের পর মাস। এমনকি বছরের পর বছরও কেটে যায়।
শুধু শহরই নয়, গ্রামাঞ্চলেও এখন আত্মীয়ের বাসায় বেড়ানোর মানুষ তেমন পাওয়া যায় না। হতে পারে এটা সম্পর্কের অবনতি কিংবা সময়-সুযোগের অভাব। অবশ্য কালচারই দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোররা ঘরকুনো বা ডিভাইস আসক্ত হয়ে পড়ছে। কোথাও গিয়ে নিজের আনন্দ মাটি করতে চায় না। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রাম আর শহরের পার্থক্যও করা মুশকিল এখন।
আজ হঠাৎ করে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়ার কথা উঠছে কেন? এর বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য আছে কি? অবশ্যই আছে। সেটি হলো আজ ‘আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়ার দিন’ নামে একটি দিবসের কথা জানলাম সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে হয়তো তা-ও জানতে পারতাম না। তাই মনে হলো, শেষ কবে আত্মীয়ের বাসায় গেছেন? মনে করতে পারবেন কি?
ছোটবেলায় আমরা গ্রীষ্মের ছুটিতে নানাবাড়ি, খালাবাড়ি, ফুফুবাড়িসহ কত জায়গায় বেড়াতে যেতাম। এ ছাড়া যে কোনো মৌসুমে দুই-তিন দিনের জন্য বেড়াতে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। আর শীতের পিঠা খেতে, মধুমাসের ফল খেতে কিংবা যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান বা বিয়ে-শাদি তো ছিলই। সেসব দিনের আনন্দই আলাদা ছিল।
আরও পড়ুন
সেসব স্মৃতি ঘেঁটে এখন আর লাভ নেই। তাই বাস্তবতায় ফিরে আসি। ফারহানা সীমা নামের একজন পোস্ট করেছেন, ‘আজ ১৮ মে। আজ আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার দিন।’ তার এই পোস্টে মন্তব্য করেছেন আয়মান রাহাত। তিনি লিখেছেন, ‘আপনার এই পোস্ট দেখে আমি আমার আত্মীয়ের বাড়িতে আসলাম। এসে দেখি দরজা তালা দেওয়া। ফোন দিয়ে জানতে পারলাম, তিনিও আপনার পোস্ট দেখেছেন এবং দেখে আমার বাড়িতে গেছেন। এখন একজন আরেকজনের তালা মারা বাড়ির সামনে বসে আছি। এর সমাধানে কি আরেকটা দিবস পালন করতে হবে?’
শাহিদা সুরাইয়া পান্না এক পোস্টে একটি পত্রিকার লিংক শেয়ার করে কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। ফলে মনে হচ্ছে, এই সময়ে দিবস বাস্তবে যতটা না পালন হয়, তার চেয়ে বেশি পালন হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেমন ধরুন, দিবসটি সম্পর্কে জানার পর সবাই যদি বাসা থেকে বেরিয়ে যান, তাহলে কে কার বাসায় যাবেন? কেউ তো কারো বাসার দরজা খোলা পাবেন না। যে কারণে সময় কাটাতে হবে রাস্তায়। সে জন্যই হয়তো এসব দিবসের বাস্তব ভিত্তি অতটা মজবুত নয়।
সবাই শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন, আজ আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়ার দিন। কিন্তু কেউ কারো বাসায় গেলেন কি না তা অবশ্য জানা যাচ্ছে না। ব্যস্ততম সময়ে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে ফেসবুক পোস্ট আর মন্তব্যের ঘরেই। কিছু দিবস আসলেই সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছে। তার আরও একটি প্রমাণ পাওয়া গেল। তবে যেতে না পারলেও ফোন করে খোঁজ-খবর তো নেওয়া যায় সহজেই।
এসইউ/জিকেএস