ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সোশ্যাল মিডিয়া

জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচায় কালো টাকা তৈরির পথ বন্ধে দুই পরামর্শ

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ১৯ জুন ২০২২

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও অভিজাত এলাকায় জমি বা ফ্ল্যাট কেনাবেচার মাধ্যমে কালো টাকার মালিক বনে যাওয়ার পথ বন্ধ করতে দুটি পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি মনে করেন, এ সমস্যা সমাধান কঠিন কিছু নয়।

এ বিষয়ে ওয়াহিদউদ্দিনের প্রথম পরামর্শ, জরিপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য থেকে এলাকা ভেদে জমি ও ফ্ল্যাটের কাঠা বা বর্গফুটপ্রতি প্রকৃত বাজার দাম কত তার ভিত্তিতে কিছু সময় অন্তর অন্তর রেজিস্ট্রেশনের বাস্তবসম্মত ন্যূনতম নির্ধারণ করা।

তার দ্বিতীয় পরামর্শ হলো, যদি আবাসন খাতের কোম্পানিগুলোর দাবি মেনে জমি বা ফ্ল্যাটের বিক্রয়মূল্যের অনুপাতে রেজিস্ট্রেশনসংক্রান্ত ফি বা মাশুলের হার কমানো।

এর আগে গত ১৫ জুন অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা শহরে যেসব ব্যক্তির জায়গা-জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই ‘কালো টাকার মালিক’। এ অবস্থার জন্য সরকার এবং সিস্টেমকেই দায়ী করেন মন্ত্রী।

তবে ওয়হিদউদ্দিন মনে করেন, এমন কোনো আইন থাকা উচিত নয়, যার মাধ্যমে অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কালো টাকা তৈরি হয়। পাশাপাশি সৎ করদাতাদের কালো টাকার মালিক হতে অনেকটা বাধ্য করা হয়।

এ নিয়ে রোববার (১৯ জুন) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজস্ব মতামত তুলে ধরে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস পোস্ট করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

তার সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকের জন্য নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো:
পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী মাননীয় অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে যাদের ঢাকা শহরে জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই কালো টাকার মালিক। কালো টাকা বলতে তিনি আয়কর রিটার্নের “অপ্রদর্শিত” আয়কে বুঝিয়েছেন এবং বিশেষ করে গুলশান-বনানীর মত অভিজাত এলাকার উদাহরণ দিয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় যে, এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্তব্য নিয়ে কোনো আলোচনা চোখে পড়েনি। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর সংগঠন (রিহ্যাব) বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ফ্ল্যাট বিক্রির রেজিস্ট্রেশন ফি কমানোর দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

দেশে ব্যাপক হারে কর ফাঁকির প্রবণতা জানা কথা। কিন্তু অর্থমন্ত্রী জমি বা ফ্ল্যাট কেনাবেচার বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ায় একটি অসঙ্গতি উল্লেখ করে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন। সরকার বিভিন্ন অঞ্চলের জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটা দাম বেঁধে দিয়েছেন (জমি বা ফ্ল্যাটের আয়তন অনুযায়ী)। অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন যে, গুলশান এলাকার জন্য এই বেঁধে দেওয়া মূল্যের থেকে প্রকৃত মূল্য পাঁচ-ছয়গুণ বেশি। কাজেই যিনি ওই দাম দেখিয়ে বিক্রি করছেন তার বিক্রি থেকে পাওয়া আয়ের অধিকাংশের জন্য বৈধ উৎস আয়কর কর্তৃপক্ষকে দেখাতে পারবেন না এবং তা অপ্রদর্শিত থেকে যাবে। অর্থমন্ত্রীর মতে, এভাবে আইনের অসঙ্গতি থেকে এমনিতেই কালো টাকা তৈরি হচ্ছে।

তবে অর্থমন্ত্রী সম্ভবত অসাবধানতাবশত একটি ভুল তথ্য দিয়ে সবাইকে ঢালাওভাবে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। বিক্রির রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে সেটি সর্বোচ্চ নয়, বরং ন্যূনতম, যাতে অন্ততঃ এই মূল্যের ওপর উৎসে আয়করসহ রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত যাবতীয় ফি আদায় হয়। কিন্তু এরচেয়ে অনেকগুণ বেশি প্রকৃত মূল্য দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে তো কোনো বাধা নেই। ওইসব অভিজাত এলাকায় প্রকৃত মূল্যে বিক্রির রেজিস্ট্রেশন করে বিক্রি থেকে পাওয়া পুরো অর্থ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করার নজির আমার কাছে আছে। আর অনেকেই যারা এসব এলাকায় সরকারের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ পেয়ে ডেভেলপার কোম্পানির মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন, তারাও অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি না করে থাকলে এভাবে কালো টাকার মালিক হবার কথা নয়।

তবে অর্থমন্ত্রী সমস্যাটি ঠিকই চিহ্নিত করেছেন। নীতিবান কোনো করদাতা প্রকৃত মূল্য দেখিয়ে ফ্ল্যাট বিক্রির রেজিস্ট্রেশন করতে চাইলেও ওই মূল্য দেখিয়ে কিনতে আগ্রহী ক্রেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। রেজিস্ট্রেশন করার বেশি ফি তো আছেই, তার ওপর ওই দাম পরিশোধ করার মত বৈধ বা “প্রদর্শিত” আয় আছে এমন ক্রেতা অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। সেটাও অর্থমন্ত্রীর সঠিক অনুমান।

অথচ সমস্যাটির সমাধান কঠিন কিছু নয়। জরিপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য থেকে এলাকা ভেদে জমি ও ফ্ল্যাটের কাঠা বা বর্গফুটপ্রতি প্রকৃত বাজার দাম কত তার ভিত্তিতে কিছু সময় অন্তর অন্তর রেজিস্ট্রেশনের জন্য ন্যূনতম দাম অন্তত আর একটু বাস্তবসম্মত অঙ্কে নির্ধারণ করা যায়। এবং যদি রাজস্ব আয়ের ক্ষতি করেও ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর দাবি মানতেই হয়, সেক্ষেত্রে বিক্রিত দামের অনুপাতে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ফিসমূহের হার কমিয়ে দিলেই হয় (কয়েক বছর আগে এ ফি দাবির মুখে অনেকটা কমানো হয়েছিলো)। কিন্তু এমন আইন নিশ্চয়ই থাকা উচিত নয় যার মাধ্যমে অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কালো টাকা তৈরি হয় এবং সৎ করদাতাদের কালো টাকার মালিক হতে অনেকটা বাধ্য করা হয়।

তবে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুপক্ষই প্রকৃত মূল্য প্রদর্শন করতে আগ্রহী হবেন, এরকম নৈতিক আচরণ তৈরি হওয়াই সবচেয়ে কাম্য। সবকিছুই আইন দিয়ে হয় না, এগুলো সামাজিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গীর বিষয়।

এমকেআর/জিকেএস