পরীক্ষার ফলাফল কি সফলতার মানদণ্ড?
লেখাটি শুরু করছি জিসান তারেকের একটি পোস্টের সূত্র ধরে। তিনি লিখেছেন, ‘অভিনন্দন এসএসসি কৃতকার্যদের। আর সমবেদনা জানাই, যারা এ বছর এসএসসি ফেল করেছো। যা হবার হয়েছে। আগামী বছরের জন্য প্রস্তুত হও। সবাই পাস করলে তো আর হয় না। আমার এলাকায় পরিচিত কেউ ফেল করে থাকলে যোগাযোগ করিও। একটা পার্টি দিবো। প্রয়োজনে একটা পিকনিক করবো। তবুও ব্যাপারটা সহজভাবে নাও।’
পোস্টটি উল্লেখ করলাম, কারণ গত ১২ মে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় চলতে থাকে অভিনন্দনের বন্যা। সবাই যার যার সন্তান বা আত্মীয়-স্বজনের পাসের খবর জানান বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে। সবচেয়ে মজার বিষয়, এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ছেলেমেয়েরাও পোস্ট দিয়ে নিজের সুখবর জানিয়েছে।
অভিনন্দনের জোয়ারে অনেকেই আবার স্মৃতিচারণ করেছেন নিজের অতীতের। কে কত সালে কোন গ্রেড বা পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছেন, তা লিখে জানিয়েছেন বন্ধুদের। তবে আনন্দঘন এই পরিবেশের মধ্যে দুঃসংবাদও ছুটে এসেছে কিছু। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আত্মহত্যা করেছে ৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ জন। প্রতি বছরই আমরা এমনটা দেখতে পাই।
‘৫১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ এসএসসি পাস করেনি’ এমন খবরে কেউ অবাক হয়েছেন। কেউ আবার হাস্যরসাত্মক কথা বলেছেন পাস-ফেল নিয়ে। একই সঙ্গে ‘শুধু গণিতেই ফেল ১ লাখ ৬৬ হাজার পরীক্ষার্থী, বেশি মাদরাসা বোর্ডে’, ‘এসএসসিতে টানা দুই বছর কমলো জিপিএ-৫’ কিংবা ‘জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা’ খবরটিও নজর কেড়েছে নেটিজেনদের। তাই ফলাফলে ছেলেরা কেন পিছিয়ে, তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ বছর ৯টি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। এর বাইরে সফলতার গল্প তো ছিলই। পা দিয়ে লিখে জিপিএ ৫ পাওয়ার গল্প উঠে এসেছে। উঠে এসেছে যমজ বোনের সফলতার গল্প। ভ্যান চালকের মেয়ে কীভাবে জিপিএ ৫ পেলো। তবে নেট দুনিয়ায় বেশি আলোচিত হয়েছে পা দিয়ে লিখে রাব্বির জিপিএ ৫ অর্জনের খবর।
আরও পড়ুন
ফলাফল সম্পর্কে লেখক ও প্রকাশক আবু সাঈদ সুরুজ লিখেছেন, ‘সুসংবাদ। আলহামদুলিল্লাহ। আমার দুই শ্যালিকা রাফিয়া সুলতানা, রাদিয়া সুলতানা ও চাচাতো ভাই রুমাইয়া রাহাতুল শিহাব জিপিএ ৫ পেয়েছে এবং ফুপাতো ভাই জিসান পাস করেছে। তাদের চারজনকে অভিনন্দন। এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে অভিনন্দন।’
রাব্বি সম্পর্কে মুশফিকুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘পা দিয়েই লিখে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের রাব্বি। সে ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং কে এম হাইস্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়।’
সাংবাদিক সাইফুল্লাহ কামরুল লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া। আমার বড় মেয়ে সুবহা এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। আমি পবিত্র ওমরাহ করার জন্য মক্কায় অবস্থান করছি। আল্লাহকে এখানে সরাসরি এভাবে শুকরিয়া জানাতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে আবারও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পরীক্ষার সময়ও কাছে থাকতে পারিনি। আজ ওর আনন্দের দিনও আমি দূরে। ফোনে কান্না করছিলো আমার জন্য। সবার কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন আমার সব সন্তানকে ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেন। বিশেষ ধন্যবাদ এমসিএসকের শিক্ষকদের।’
এমন উচ্ছ্বাস কিংবা হতাশার ভেতর দিয়েই উদযাপিত হয় ফলাফল ঘোষণার মুহূর্ত। কেননা পরীক্ষা মানেই কৃতকার্য কিংবা অকৃতকার্য হওয়ার খেলা। আবার এসএসসি পরীক্ষাই বলতে গেলে শিক্ষাজীবনের প্রথম সফলতা। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। তবে শেষ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থী এগিয়ে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারে? সেটাও চিন্তার বিষয়।
সেই পরিসংখ্যান হয়তো আমাদের কাছে নেই কিংবা থাকতেও পারে। যদিও পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া অবশ্যই আনন্দের। তবে এই ফলাফলকে সফলতার মানদণ্ডে বিচার করা এখনই সমীচীন নয়। সচেতন অভিভাবক হিসেবে আমাদের বিষয়টি নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে হবে। কৃতকার্য সবার মঙ্গল হোক। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে অভিনন্দন।
এসইউ/এমএস