সালমান শাহ অধ্যায় শেষ, কূলকিনারা হয়নি সাগর-রুনি-ফারুকী হত্যার
চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে দীর্ঘ ২৫ বছর পর। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। এদিকে নয় বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি। এছাড়া মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার সাত বছর ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম শিপন হত্যা মামলার এক বছরেও জমা হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন।
বিদায়ী বছরে ঢাকার আদালতে যেসব আলোচিত মামলা ও মামলার রায় হয়েছে, তা নিয়ে পাঁচ পর্বের সালতামামির আজ পড়ুন শেষ পর্ব।
সালমান শাহের মৃত্যু: পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ
চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন আদালত। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।’
২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ৬শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেন পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম। এর আগের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি আলোচিত এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।’
পিবিআইপ্রধান বলেন, তদন্তকালে ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনা সংশ্লিষ্ট ৪৪ সাক্ষীর জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। ১০ সাক্ষীর সাক্ষ্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় লিপিবদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ঘটনার সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করা হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, চিত্রনায়ক সালমান শাহ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। হত্যার অভিযোগের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের আত্মহত্যার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো- চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা, স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতার কারণে একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়া বা আত্মহত্যার চেষ্টা, মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেওয়া ও সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতা।
চলচ্চিত্রে জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে থাকাকালে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। ওই ঘটনায় তখন অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী (প্রয়াত)।
৮৪ বার পেছালো সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৮৪ বারের মতো পিছিয়েছে। পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। গত ২৬ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তদন্ত সংস্থা র্যাব প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এদিন ধার্য করেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয় ডিবি। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে একই বছরের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফারুকী হত্যা: সাত বছরেও দাখিল হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন
২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাড়িতে খুন হন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট নেতা ও টেলিভিশনে ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী।
ওইদিন এশার নামাজের পর ছয়-সাত জন যুবক মাওলানা ফারুকীর বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর তার স্ত্রী ও ছেলেসহ তিনজনের হাত-পা বেঁধে আলাদা কক্ষে রেখে তাকে গলা কেটে হত্যা করেন।
এ ঘটনায় তার ছেলে ফয়সাল ফারুকী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আট-দশজনকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমাতে তদন্তধীন অবস্থায় রয়েছে।
এএসপি শিপন হত্যা: এক বছরেও দাখিল হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন
গত ৯ নভেম্বর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনিসুল করিম শিপন তার আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। হাসপাতালে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর আদাবর থানায় আনিসুল করিম শিপনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর এক বছরও পার হলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি তদন্ত সংস্থা।
জেএ/এসএইচএস/এএ/এমএস