ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সালতামামি

বছরজুড়ে আলোচনায় উচ্চমূল্যের নতুন ৬ মাদক

তৌহিদুজ্জামান তন্ময় | প্রকাশিত: ১১:২২ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

নিখোঁজ হওয়ার ৯ দিন পর ২৩ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাওয়া যায়। ২৬ মে দেশে প্রথমবারের মতো ভয়াবহ মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড বা এলএসডি ড্রাগ উদ্ধার করে ঢাকা মেট্রোপলিটনের গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ঢাবি শিক্ষার্থী ও ও টিএসসিভিত্তিক সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুরের ‘আত্মহত্যা’র কারণ খুঁজতে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হাফিজুরের ‘নিজেকে শেষ করে দেওয়া’র সঙ্গে এ মাদকের সম্পৃক্ততা খুঁজে পান। মূলত ওই মৃত্যুর তদন্তেই এলএসডি মাদক সামনে চলে আসে।

ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন কারবারিরা এ নিয়ে সুবিধা করতে পারছেন না। এজন্য তারা চেষ্টায় থাকেন নতুন মাদক বাজারে আনার। একটি মাদক চলে এক বা দুই দশক। এরপর কৌশলগত কারণেই নতুন কিছু নিয়ে আসে মাদকচক্র। দেশের সীমান্ত এলাকাসহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব, বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বছরজুড়ে বিপুল পরিমাণ নতুন নতুন মাদক জব্দ করে।

দেশে নতুন ৬ মাদক

বছরজুড়ে আলোচনার শীর্ষে ছিল পশ্চিমা ভয়ঙ্কর সব মাদক। করোনাকালে মাদকসেবনে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আরও জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়। এতে পরিচিতি পায় এলএসডির মতো নতুন মাদক। এছাড়া ক্রিস্টাল মেথ বা আইস বা মেথামফেটামিন, ম্যাজিক মাশরুম, ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ‘ট্যাপেনটাডোল’ নামক ক্যানসারের ওষুধের ব্যবহার ও ইস্কাফ সিরাপ নতুন করে পরিচিতি পেয়েছে। এর প্রতিটিই বেশ ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যারা এসব মাদক নিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই সচ্ছল পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী।

২০১৮ সালে সরকার ইয়াবা ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এতে টান পড়ে সরবরাহে। কিন্তু এরপরও বাজারে দেখা যাচ্ছে নতুন মাদকের দৌরাত্ম্য। মাদককারবারি চক্র এখন লেনদেনও করছে মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইনে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, কিছুই তাদের নজরদারির বাইরে নেই। যারা নতুন মাদক নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন, তাদের অনেকেই এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

jagonews24

ভয়ঙ্কর মাদক এলএসডিতে জড়িয়ে পড়ছে তরুণ সমাজ/ফাইল ছবি

একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, চতুর মাদককারবারিরা এক রুটে বেশিদিন পাচার করেন না। তারা প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন রুট তৈরি করেন। ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে অনেক দেশের কারবারিরা উর্বর হিসেবেই জানেন। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে আসা মাদকের পাশাপাশি নতুন নতুন মাদকও তারা নিয়ে আসেন।

২০২১ সালে ডিএমপির অভিযানে উদ্ধার করা নতুন মাদকের মধ্যে এলএসডি জব্দ হয়েছে ৫ গ্রাম ১২ মিলিগ্রাম ও ৪০ পিস, আইস জব্দ হয়েছে ২ কেজি ৬৯০ গ্রাম, ডায়েমেথিল ট্রাইপ্টেমিন বা ডিএমটি জব্দ হয়েছে ১ গ্রাম ৩ মিলিগ্রাম, ট্যাপেনটাডোল ট্যাবলেট জব্দ হয়েছে ৯ হাজার ২৯০ পিস, ইস্কাফ সিরাপ জব্দ হয়েছে ১৭৯ বোতল।

২০২১ সালে র‌্যাবের অভিযানে উদ্ধার নতুন মাদকের মধ্যে এলএসডি জব্দ হয়েছে ৪১ স্লট, আইস ১৩ কেজি ৪৯৪ গ্রাম, ডায়েমেথিল ট্রাইপ্টেমিন বা ডিএমটি ৬০০ মিলিগ্রাম ও ম্যাজিক মাশরুম ৫টি বারে ১২০টি স্লাইস, যার পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম।

২০২১ সালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অভিযানে উদ্ধার নতুন মাদকের মধ্যে আইস জব্দ হয়েছে ৭ কেজি ১০০ গ্রাম ও ইস্কাফ সিরাপ জব্দ করা হয় ৫৬ হাজার ৭৫১ বোতল।

এলএসডি কি?
এলএসডি ড্রাগ মস্তিষ্কে এমন এক প্রভাব সৃষ্টি করে, যা হ্যালুসিনেশনে (সম্মোহন) ফেলে দেয়। ফলে যারা এই ড্রাগ ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন রকম রং ও আকৃতির জিনিস দেখে, যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। এছাড়া এই ড্রাগ মানব মস্তিষ্কের এমন সব স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যা অনেক সময় অতীত স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। এমনকি এই ড্রাগ মানুষকে তার জন্মকালীন স্মৃতিও মনে করাতে সক্ষম।

jagonews24

১৯৬৮ সালে বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর এই মাদক নিষিদ্ধ করা হয়/ফাইল ছবি

এলএসডির হ্যালুসিনেশন তৈরি করার প্রবণতা থেকে অনেক মানুষই এই মাদকসেবন শুরু করে। ১৯৬৮ সালে বিশ্বব্যাপী এলএসডি নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ হিসেবে এলএসডির ব্যবহার হয়।

ডায়েমেথিল ট্রাইপ্টেমিন বা ডিএমটি
দেশে প্রথমবারের মতো ২৬ জুন বিশেষ অভিযান চালিয়ে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার লাভ রোড এলাকা থেকে ডায়েমেথিল ট্রাইপ্টেমিন বা ডিএমটিসহ চার যুবককে গ্রেফতার করে র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২। এসময় তাদের কাছ থেকে ৬০০ মিলিগ্রাম ডিএমটি জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-২-এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, বিদেশে পড়ালেখা করার সময় সেখানে থাকতে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরা ভয়ঙ্কর সব নতুন মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ থাইল্যান্ডে গিয়ে নতুন মাদক ডিএমটিতে আসক্ত হচ্ছেন, কেউ আবার লন্ডনে গিয়ে এলএসডি সেবনে আসক্ত হচ্ছেন। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরলেও আসক্তি থেকে পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে আমদানি করছে এলএসডি ও ডিএমটি।

jagonews24

ডিএমটি সেবনের পর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গভীর হ্যালুসিনেশন তৈরি করে/ফাইল ছবি

নতুন মাদক ডিএমটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম ডায়েমেথিল ট্রাইপ্টেমিন। এটি একটি হ্যালুসিনোজেনিক ট্রিপটামাইন ড্রাগ। মূলত এটি মুখ দিয়ে এলএসডি সেবনের মতো, যা ধোঁয়ার মাধ্যমে শ্বাস নিয়ে বা ইনজেকশনের সঙ্গে নেওয়া যায়। এটি সেবনের পর ৩০ থেকে ৪০ মিনিট গভীর হ্যালুসিনেশন তৈরি করে। এ থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা হতে পারে, এমনকী জীবননাশও হতে পারে।

ক্রিস্টাল মেথ বা আইস বা মেথামফেটামিন
সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবার মতো মিয়ানমার থেকে ভয়াবহ মাদক আইস (ক্রিস্টাল মেথ) বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পাঁচ গ্রাম আইসের বাজারমূল্য প্রায় লাখ টাকা। গত ১৭ আগস্ট মোংলা বন্দর অভিমুখী এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বহন করা একটি বড় ট্রাকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার মাদক কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রাইভেটকারে ঢাকায় প্রবেশ করে এটি।

২০২১ সালে আইসের সবচেয়ে বড় চালান ধরা পড়ে গত ১৬ অক্টোবর। এরপর টনক নড়ে সীমান্তে থাকা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

jagonews24

ইয়াবার চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বেশি ক্ষতিকর ক্রিস্টাল মেথ বা আইস/ফাইল ছবি

র‌্যাব জানায়, পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের মধ্যবর্তী নৌপথ দিয়ে দেশে আসছে আইস। কখনো আচার, কখনো কাপড়ের প্যাকেট আবার কখনো চায়ের ফ্লেভারের প্যাকেটে।

ম্যাজিক মাশরুম
৬ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো উদ্ধার করা হয় নতুন মাদক ‘ম্যাজিক মাশরুম’। র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০-এর একটি বিশেষ দল রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে মাদকচক্রের দুজনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ম্যাজিক মাশরুমের পাঁচটি বারে ১২০টি স্লাইস।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ম্যাজিক মাশরুম যদি কেউ ৫ থেকে ১০ মিলিগ্রাম সেবন করে তাহলে হ্যালুসিনেশন শুরু হয় এবং এর প্রতিক্রিয়া থাকে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। এছাড়া এই মাদকসেবীরা জীবজন্তুর সঙ্গেও কথা বলা শুরু করে। কখনো কখনো অক্সিজেনের জন্য গাছ জড়িয়ে ধরার মতো কাণ্ডও ঘটায়। এ মাদক মূলত উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণরা সেবন করে।

jagonews24

নতুন এই মাদক সেবন করে জীবজন্তুর সঙ্গেও কথা বলেন মাদকাসক্তরা/ফাইল ছবি

তিনি জানান, ম্যাজিক মাশরুম একটি সাইকেলেডিক (হ্যালোসিনোজেন) ড্রাগ। এই ড্রাগটি বিভিন্ন খাবার—কেক ও চকলেট মিক্স অবস্থায় সেবন করা হয়। এছাড়া পাউডার ক্যাপসুল হিসেবেও পাওয়া যায়। এই ড্রাগ ব্যবহারের পর সেবনকারীদের নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এমনকী কেউ কেউ ছাদ থেকে ঝাঁপিয়েও পড়তে পারে। এ ধরনের অপ্রচলিত ড্রাগের চাহিদা তৈরি হয় মাদকসেবীদের নতুনত্বের প্রতি আগ্রহের মাধ্যমে।

ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ‘ট্যাপেনটাডোল’ নামক ক্যানসারের ওষুধ
নতুন নতুন নেশাদ্রব্যের দিকে ঝুঁকছে উঠতি বয়সী মাদকসেবীরা। নেশার জন্য তারা প্রচলিত গাঁজা-ফেনসিডিল-ইয়াবার মতো মাদকের পাশাপাশি মারাত্মক ঝুঁকির ওষুধও সেবন করছে। মাদকসেবীদের মধ্যে ক্যানসারের ওষুধ ‘অক্সিমরফোন’ ব্যবহারের তথ্য আগেই মিলেছিল। এবার মাদক হিসেবে তাদের নতুন আরেকটি ওষুধ সেবনের খবর মিলেছে। ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ‘ট্যাপেনটাডোল’ নামক ওষুধটি সেবন করছে মাদকাসক্তরা।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, বছরের শেষে সম্প্রতি রাজধানীর বংশাল থানা এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধঘোষিত ‘ট্যাপেনটাডোল’ ট্যাবলেটসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়।

jagonews24

ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ক্যানসারের ব্যথানাশক এই ট্যাবলেট ব্যবহার করছে মাদকসেবীরা/ফাইল ছবি

গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, ইয়াবার বিকল্প হিসেবে উঠতি বয়সী তরুণরা এই ভয়ঙ্কর মাদক সেবন করছে, যা মূলত ক্যানসারের রোগীদের ব্যথার জন্য ব্যবহৃত হয়। ওষুধটি বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও রাজধানীতে কারা বিক্রি করছে আর এর ক্রেতা কারা, এসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।

ট্যাপেনটাডোল ওষুধটির বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ট্যাপেনটাডোল’ ট্যাবলেটটি তীব্র ব্যথানাশক ওষুধ। এটি সেবনে ঝিমুনি ভাব, ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে। ক্যানসার অথবা যে ব্যথাগুলো অনিরাময়যোগ্য, সেসব ক্ষেত্রে বেদনানাশক হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। এটি নেশা হিসেবে কোনোমতেই ব্যবহার করা উচিত নয়।

ইস্কাফ সিরাপ
দেশে প্রথমবারের মতো ইস্কাফ জব্দ করা হয় ২৫ জুন। ফেনসিডিলজাতীয় ভারতীয় মাদক এটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢোকে এই মাদক। ‘ইস্কাফ’র চালান ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজধানীতে নিয়ে আসার সময় খিলগাঁওয়ের নাগদারপাড়ায় মাদকচক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৮৪ বোতল ইস্কাফ জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ উত্তরের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের আড়াল করতে ব্যবসার ধরনে পরিবর্তন আনছে। তারই অংশ হিসেবে সবজি বিক্রেতা সেজে পিকআপে মাদক পরিবহন করছিল এই চক্রটি। ফেনসিডিলজাতীয় সিরাপ ‘ইস্কাফ’ দেশে প্রথমবারের মতো জব্দ করা হয়।

jagonews24

ফেনসিডিলজাতীয় সিরাপ ‘ইস্কাফ’/ফাইল ছবি

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা কঠোর নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত রাখছি। অনলাইনে বা নতুন কৌশলে যেভাবেই কারবার হোক না কেন, আমরা সেদিকে গোয়েন্দা নজরদারি করছি। এ কারণে এলএসডিসহ নতুন আনা মাদকগুলোও ধরা পড়ছে। আমরা নতুন প্রযুক্তি ও কৌশলে মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাবো।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ শুরু থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে। ব্যাপক অভিযানের ফলে ২০২১ সালে এসব মাদক জব্দ করা হয়। সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় কারবারিদের। আগামী নতুন বছর ২০২২-এ এসব মাদকের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হবে ডিবি।

jagonews24

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন/ফাইল ছবি

সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে উদ্ধার হওয়া বেশিরভাগ মাদকই ব্যয়বহুল। সাধারণ ঘরের মানুষের পক্ষে এটি সেবন করা সম্ভব না। উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানরা এসব মাদক বেশি সেবন করে। সর্বশেষ তিন বছরে উদ্ধার হওয়া পশ্চিমা মাদকের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিদেশফেরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে। যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

গ্রেফতার হওয়ার পর তারা জানিয়েছে, মূলত বিদেশে পড়তে গিয়েই তারা এসব মাদকের সন্ধান পান। সেবনের পর নতুন অনুভূতি পাওয়ায় দেশে আসার সময় কেউ কেউ সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। পরে দেশের বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। সঙ্গে আনা মাদক শেষ হওয়ার পর বিদেশি বন্ধুদের সাহায্যে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ও পরিচিত বিদেশফেরতদের মাধ্যমে ফের নিয়ে আসতেন। অনেক শিক্ষার্থী সেবন করতে গিয়ে বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

টিটি/এআরএ/এএ/এমএস