ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সালতামামি

বাংলাদেশ ক্রিকেটে আলোচিত সব ঘটনা

প্রকাশিত: ০২:৫৪ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫

সফল একটি বছর পার করার পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় বাংলাদেশের ক্রিকেট। অসাধারণ সফল একটি বছর। প্রাপ্তিটা স্বপ্নের চেয়েও বেশি। দেশের মাটিতে টানা ৫টি সিরিজ জয়ের রেকর্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের মত পরাশক্তিদের মাটিতে নামিয়ে আনা- এমন কত ঘটনাই তো জ্বাজল্যমান এই বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে। অসাধারণ বছরটিতে অসাধারণ অনেক ঘটনাই আছে যা ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গেঁড়ে নেবে। তেমনই কিছু অসাধারণ ঘটনার পসরা জাগো নিউজ পাঠকদের সামনে সাজিয়ে দিলেন রামিন তালুকদার...

রুবেল-হ্যাপি প্রেমকাহিনী

rubel-happy

২০১৫ সালে ক্রিকেট পাড়ায় সবচেয়ে আলোচিত খবর ছিল রুবেল-হ্যাপির প্রেম কাহিনী। দীর্ঘ ৯ মাস প্রেম করার পর তাদের প্রেমকাহিনী স্থান পায় দেশের গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। এই জুটির গোপনে চুটিয়ে চুটিয়ে প্রেম, এরপর বিচ্ছেদের ঘটনা। শুধু বিচ্ছেদ নয়, ঘটনা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তাও আবার ধর্ষণ মামলা। ঘটনার শুরু ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর। হ্যাপী অভিযোগ করেন, বিয়ের কথা বলে রুবেল একাধিকবার তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘটনার দুই দিন পরই রুবেল হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চাইলে আদালত চার সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করে। এরপর ৮ জানুয়ারি রুবেল মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন; কিন্তু শুনানি শেষে মহানগর হাকিম জামিন নাকচ করে রুবেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ৩দিন কারাবাসের পর ১১ জানুয়ারি জামিনে মুক্ত হন রুবেল। তবে শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন তিনি।

বিশ্বকাপের মাঝ পথে বহিস্কার আল আমিন
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিশ্বকাপের মাঝপথ থেকেই আল আমিন হোসেনকে দেশে ফেরত পাঠায় বিসিবি। ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিসবেনে ডিনার করে রাত ১০টার পর হোটেলে ফিরেছিলেন তিনি। অথচ বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাপারটা জানতোই না। পরবর্তীতে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ও নিরাপত্তাবিষয়ক ইউনিট (আকসু) তথ্যটা বাংলাদেশ দলকে জানালে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে দেশে ফেরাত পাঠানো হয়। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পান শফিউল হোসেন।

খালেদ মাহমুদের ক্যাসিনো বিতর্ক

sujon

অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে একটি ক্যাসিনোতে বেড়াতে যাওয়া নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন জাতীয় দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন। সে সময় লন্ডনের একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ছবিসহ এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়। মেলবোর্নের ০৮ হুইটম্যান স্ট্রীটের ক্রাউন ক্যাসিনোতে হাতে অস্ট্রেলিয়ান ডলারসহ বেশ কয়েকজন অস্ট্রেলীয় প্রবাসীকে জুয়া খেলতে দেখা যায়। এ সময় সুজন কালো রঙের জ্যাকেট এবং স্যান্ডেল পরে তাদের পিছনেই অবস্থান করছিলেন। এই ঘটনার কিছুদিন পর জুয়ার আড্ডায় দেখা গিয়েছিল বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নাঈমুর রহমান দুর্জয়কেও।

মাহমুদউল্লাহর ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি

Mahamudullah

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে বিশ্বসেরা এই আসরে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছিল চারবার। ১৯৯৯ সাল থেকে টানা। কিন্তু সেঞ্চুরির দেখা মেলেনি একবারও। ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো ম্যাচে আশরাফুলের করা ৮৭ রানের ইনিংসই ছিল সর্বোচ্চ। ২০১১ বিশ্বকাপে স্বাগতিক হয়েও সে আক্ষেপ ঘোচেনি।

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে তামিম ঘোষণা দিয়ে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে প্রথম সেঞ্চুরি উপহার দেবেন তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের একেবারে দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে গিয়েছিলেনও; কিন্তু ৯৫ রান করার পর আউট হয়ে যান তামিম। তবে, তামিম কিংবা সাকিব নন, যার ওপর কোন ফোকাসই ছিল না, সেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদই আক্ষেপটা ঘুচিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে। ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তণ এনে মাহমুদুল্লাহকে নামানো হয় ওয়ানডাউনে। এরই সুযোগ নেন তিনি এবং অনবদ্য সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে বাংলাদেশের জন্য ২৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ এনে দেন। মাহমুদুল্লাহ করেন ১০৩ রান।

পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও সেঞ্চুরি করেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮ রান করেন তিনি। ফলে স্বাগতিকদের সামনে ২৮৮ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে কিউইদের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে এটা ছিল সর্বোচ্চ স্কোর এবং একমাত্র সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশের ‘ন্যাশনাল হিরো’ বনে যান তিনি।

রুবেল হোসেনের অবিশ্বাস্য বোলিং

Rubel

কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে হলে ১২ বলে ১৬ রান চাই ইংল্যান্ডের। উইকেট রয়েছে দু’টি। আবার বাংলাদেশের সামনেও শেষ আটের হাতছানি। ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনাল। এমন পরিস্থিতিতে ভালো ব্যাট করার সুনাম রয়েছে স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস এন্ডারসনের। তাছাড়া অপর প্রান্তে রয়েছেন ৪২ রান নিয়ে ব্যাট করা ক্রিস ওকস। ৪৯তম ওভারে রুবেলের হাতে বল তুলে দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। প্রথম বলেই অবিশ্বাস্য এক ইয়র্কারে উড়িয়ে দিলেন স্টুয়ার্ট ব্রডের স্ট্যাম্প। ব্যাট করতে নামেন এন্ডারসন। রুবেলের দ্বিতীয় বলটা কোনমতে ঠেকালেন তিনি। পরের বলে আবারও ইয়র্কার। এবারও উড়ে গেলো এন্ডারসনের স্ট্যাম্প। বোল্ড হয়ে গেলেন ইংল্যান্ডের শেষ ব্যাটসম্যানটিও। ইংলিশ জাত্যাভিমান ধুলায় মিশিয়ে মাশরাফিরা জয় তুলে নিল ১৫ রানের ব্যবধানে। আর এতেই নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল।

কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারের পক্ষপাত

Filding

বিশ্বকাপে ভারতের কাছে পরাজয় বাংলাদেশের মানুষকে যতটা না কষ্ট দিয়েছে তার চেয়ে হাজারগুণ কষ্ট দিয়েছে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং। ভারতের সেরা ব্যাটসম্যানকে (রোহিত শর্মা ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন) দু’বার খেলার সুযোগ দেন আম্পায়ার আলিম দার এবং ইয়ান গোল্ড। অপরদিকে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানকে (মাহমুদউল্লাহ টানা দুই ম্যাচের জোড়া সেঞ্চুরিয়ান) ভুল আউট দেন আম্পায়াররা। প্রথমে সুরেশ রায়নার বিপক্ষে একটি পরিষ্কার এলবিডব্লুর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। এরপর রুবেল হোসেনের বলে ক্যাচ আউট হলে সেই বলকে নো ডেকে রোহিতকে বাঁচিয়ে দেন আম্পায়ার। এমনকি তৃতীয় আম্পায়ারের সহযোগিতার জন্য আবেদন করা হলেও তা সরাসরি নাকচ করে দেন তারা। শেষে বাংলাদেশের ইনিংসে শিখর ধাওয়ান বাউন্ডারি লাইনে পা রেখে ক্যাচ ধরলেও তা ছক্কা না দিয়ে মাহমুদউল্লাহকে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার। টিভি রিপ্লেতে আম্পায়ারদের প্রতিটি সিদ্ধান্তই ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।

তামিম-ইমরুলের বিশ্বরেকর্ড
পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের ওপেনিং জুটিতে ৩১২ রানের জুটি গড়েন বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। টেস্টের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ইনিংসের ওপেনিং জুটিতে এর বেশি রান নেই কোন দলের। ১৯৬০ সালে করা ইংলিশ ব্যাটসম্যান কলিন কাউড্রে ও জিওফ পুলারের ২৯০ রানের জুটির রেকর্ড ভেঙ্গে দেন তামিম-ইমরুল। একই সঙ্গে এদিন বাংলাদেশিদের মধ্যে এক ইনিংসের সর্বাধিক রানের মালিক হয়ে যান তামিম। ২৬৪ বল খেলে ১৭টি চার ও ৭টি ছয়ে ২০৬ করেন তিনি।

মুস্তাফিজকে ধোনির ধাক্কা

Dhoni-Pushes

মিরপুরে ভারত সিরিজের প্রথম ওয়ানডের বয়স তখন মাত্র ২৫ ওভার ২ বল। সাতক্ষীরার অখ্যাত তরুণ মুস্তাফিজ বোলিং করছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ধোনির বিপক্ষে। মুস্তাফিজ তার নিজ বোলিং শেষে ধোনির রান নেওয়ার পথের ওপর এসে পড়েন। আর এ সময় ধোনি অনেকটা ইচ্ছা করেই কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেন মুস্তাফিজকে। এ ঘটনায় আহত হয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় বাংলাদেশের তরুণ পেসারকে। অবশ্য কিছুক্ষণ মাঠে ফিরে ধাক্কার জবাবটা বল হাতেই দিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। মাঠে ফিরে একাই পাঁচ উইকেট তুলে ভারতকে ধাক্কা মেরে ম্যাচ ধেকে বের করে দেন তিনি। পরের ম্যাচে ধোনিকে আউট করে আরও একবার জবাব দেন এই তরুণ। দুর্দান্ত এক কাটারে ধোনিকে বোকা বানান মুস্তাফিজ।

মুস্তাফিজের জন্য ৯ স্লিপের ফিল্ডিং

Mostafiz-boling

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের একেবারে শেষদিকে এসে মুস্তাফিজ বোলিং করছিলেন। জিম্বাবুযের ৯ উইকেট ততক্ষণে হাওয়া হয়ে গেছে। এ সময় হঠাৎই নাসির হোসেন বলে ওঠেন, ‘আয় সবাই স্লিপে দাঁড়াই।’ নাসির কথা শোনার সাথে সাথেই মাশরাফিও সাজিয়ে ফেলেন অবিশ্বাস্য সেই ফিল্ডিং। বিশ্বকে শাসন করা অসি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ যে সাহসটা দেখিয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে, সেটাকেই যেন এক পলকে মাঠে টেনে আনলেন মাশরাফি। অস্ট্রেলিয়া তখন ক্রিকেটের পরাশক্তি। কিন্তু বাংলাদেশ হচ্ছে, মাত্র উদীয়মান এক শক্তি। তবে, মুস্তাফিজের জন্য ৯ স্লিপ আর এক উইকেটরক্ষক নিয়ে ফিল্ডিং সাজিয়ে দিলেন মাশরাফি। যদিও এক বছরের জন্য। পরে একজনকে স্লিপ থেকে সরিয়ে নেন তিনি। স্বপ্নের চেয়েও অকল্পনীয় এক মুহুর্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটে। যেটাকে ক্যামেরবন্দী করতে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে এক সঙ্গে ঝলসে উঠেছিল শত-সহস্র ক্যামেরার ফ্ল্যাশ। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের আবির্ভাব যে দুর্দমনীয় এক শক্তি নিয়ে সেটাই প্রমাণ করে দিলেন মাশরাফি।

ব্যাটসম্যান মাশরাফি

Mashrafi

মাঝে এক আসর বিরতির দিয়ে এবছর ফিরে আসে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। শুরু থেকেই ফ্র্যাঞ্চাইজি দল নির্বাচন, প্লেয়ার্স বাই চয়েজ, বাইলজ ভঙ্গ এই সকল নানা চমক উপহার দেয় এবারের বিপিএল কর্তৃপক্ষ। তবে মাঠের খেলায় সবচেয়ে বড় চমকটি দিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম ম্যাচে অসহায় হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে পাঁচ নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে যান তিনি। এমনকি সে ম্যাচে লক্ষ্যটাও ছিল বিশাল। ১৭৭ রান তাড়া করতে গিয়ে মারলন স্যামুয়েলসকে নিয়ে আসরের প্রথম শতরানের জুটি উপহার দিয়ে সে লক্ষ্যকে মামুলী বানিয়ে দেন ম্যাশ। মাত্র ৩২ বলে ৪টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৫৬ রান করে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক। এই ইনিংসের পর আর পিছে তাকাতে হয়নি কুমিল্লাকে। চ্যাম্পিয়ন হয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করেন তারা।

আরটি/আইএইচএস/পিআর