ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সালতামামি

শক্তি প্রয়োগেই স্বস্তি ছিল সরকারের

প্রকাশিত: ০৫:৩৪ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

রাজনৈতিক উত্তাপ আর অনিশ্চয়তায় শুরু হয় ২০১৫ সাল। বছরের শুরুতে টানা হরতাল-অবরোধের নিষ্ঠুর সহিংসতায় প্রাণ যায় বহু মানুষের। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জায়গা দখল করে নেয় আগুন আর পেট্রলবোমার রাজনৈতিক কর্মসূচি। গোটা দেশ যেন জ্বলে উঠেছিল আগুনের লেলিহান শিখায়। রাজনীতির এমন আগুনে সাধারণ মানুষের শরীর শুধু ঝলসে যায়নি, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ছিল প্রতিনিয়ত। শঙ্কা ছিল অনিশ্চিত গন্তব্যে বাংলাদেশ।
 
তবে বাংলাদেশ তার পথ হারায়নি। সরকারের কৌশলগত অবস্থান এবং উপর্যপুরি শক্তি প্রয়োগে রাজনীতির সহিংসতা মোকাবেলায় সক্ষম হয়। এ বছর ক্ষমতার কেন্দ্র এবং মাঠ ধরে রাখতে সরকার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। বছরের শুরু থেকেই বিরোধীজোটের রাজনীতি মোকবেলায় সরকার মারমুখী অবস্থান নেয়। আর সরকারের এমন অবস্থানেই প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি। তাই আন্দোলন মোকাবেলায় শক্তি প্রয়োগেই স্বস্তি ছিল সরকারের।
 
২০১৫ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা মূলত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই। ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশ নেয়নি। অংশ নেয়নি বামপন্থি আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন। একতরফা ওই নির্বাচন না করার চাপ ছিল বিদেশিদেরও। এসব কথা সরকার কানে তোলেনি। মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে ১৪ দলীয় জোট।
 
তবে ক্ষমতায় এসেই সুর পাল্টায় সরকার। আগাম নির্বাচনের দাবি উড়িয়ে দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে অবস্থান নেয় সরকার। ২০১৯ সালের আগে আর কোনো জাতীয় নির্বাচন নয় বলে মন্ত্রীদের পাশাপাশি সরকার প্রধানও এমন ইঙ্গিত দেন।

অন্যদিকে, প্রায় এক বছর মাঠের বাইরে থাকা বিএনপি-জামায়াতজোট সরকার পতনের ডাক দিয়ে ফের আন্দোলনে নামে। মূলত ৫ জানুয়ারির সেই নির্বাচনের বছর পূর্তিতে ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। সমাবেশের দুই দিন আগে ৩ জানুয়ারি থেকেই সরকার খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখে।

বালুর ট্রাক দিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনের রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে কার্যালয় থেকে বের হতে না পেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতাল-অবরোধের ডাক দেন বিএনপি নেত্রী। এই হরতাল অবরোধ টানা ৯২ দিন চলার পর ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করা হয়।

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি ঠেকাতে শুরু থেকেই কৌশলগত শক্তি প্রয়োগ করতে থাকে সরকার। যার মধ্যে বালুর ট্রাক দিয়ে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধের ঘটনাটি ছিল উল্লেখযোগ্য। এই ঘটনায় দেশ-বিদেশ থেকে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলেও সরকার তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।

হরতাল-অবরোধ মোকাবেলায় সরকারের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও জোরালো অবস্থান নেয়। দেশজুড়ে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বেশ কয়েক দফা বিজিবি সদস্যও মোতায়েন করা হয়। তিন মাসের অবরোধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে বেশ কয়েকজনের নিহতের ঘটনাও ঘটে।
 
এসময় যান চলাচলসহ সাধারণের চলাফেরাতেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানোর অভিযোগ ওঠে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরেও। আন্দোলন ঠেকাতে সারাদেশ থেকে বিরোধীজোটের বহুসংখ্যক নেতাকর্মীদের আটক করা হয়। শত শত মামলায় হাজার হাজার আসামি করে বিরোধীজোটকে বিশেষ চাপে রাখা হয়। এসব মামলায় আটক করা হয় বিরোধীজোটের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকেও।

এদিকে হরতালের সমর্থনে পেট্ট্রলবোমা নিক্ষেপকারীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর বিশেষ চাপ সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। পরিস্থিতি সামাল দিতে অস্ত্র বা পেট্রলবোমাবহনকারীকে দেখা মাত্র গুলির নির্দেশও দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক।

সরকারের মারমুখী অবস্থানে বিরোধীজোটের আন্দোলন ব্যর্থ হলেও সম্প্রতি বিদেশি হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি ঘটনা সরকারকে ফের বিব্রত করে। তবে এসব ঘটনাতেও সতর্ক অবস্থান নিয়ে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়।

সর্বশেষ বিএনপি নেতা সালাইদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করেও সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায়। বিশেষ করে ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা উপেক্ষা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিয়ে নিজেদের সফল দাবি করে সরকার পক্ষ।   

এএসএস/এসকেডি/এআরএস/এমএস