ট্রাইব্যুনালের ছয়টি ঐতিহাসিক রায়
চলতি বছর একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা কমিয়ে পুনরায় একটি করা হয়। এবং বিচার কার্যক্রম শেষ করে রায় ঘোষণা করা হয় ছয়টি ঐতিহাসিক মামলার। তার আগে ২০১০ সালে একটি ট্রাইব্যুনাল দিয়ে এই বিচার শুরু হলেও কাজ গতিশীল করতে দুটি করা হয়েছিল। মামলার সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তিন বছর পর চলতি বছরে তা আগের অবস্থায় ফেরত যায়।
এখন একক ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। তার সঙ্গে আছেন ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ারদী।
একই বছর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, সদস্য বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া হাইকোর্টে ফেরত গেছেন।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ ও ২ এর বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বিবেচনায় উক্ত ট্রাইব্যুনাল দুটিকে একীভূত করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন আবশ্যক। সে লক্ষ্যে অন্য ট্রাইব্যুনালটি পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত অগঠিত অবস্থায় থাকবে।’
তবে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে ফেরত আসা বিচারকরা আগের মতোই নিরাপত্তাসহ আনুষাঙ্গিক সুবিধা পাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান, বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ একেএম জহির আহমেদকে সদস্য করে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এরপর আরো তিনজনকে যোগ করে প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারক এটিএম ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ২০১২ সালের ২৩ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়।
তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারক হন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহিন এবং ট্রাইব্যুনালের সাবেক রেজিস্ট্রার মো. শাহীনুর ইসলাম। বিচারপতি ফজলে কবীরের স্থলে প্রথম ট্রাইব্যুনালে সদস্য করা হয় বিচারপতি মো.আনোয়ারুল হককে।
ওই বছরের অগাস্টে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে জহির আহমেদ পদত্যাগ করলে শূন্যস্থানে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়োগ দেয় সরকার। স্কাইপে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথিত কথোপকথন নিয়ে বিতর্কের মুখে বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করলে ফজলে কবীরকে চেয়ারম্যান করে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়।
তিনি অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে আসেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সঙ্গে ছিলেন; বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম।
যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দুটি ট্রাইব্যুনালে ২১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। চলতি বছর এসেছে ছয়টি মামলার রায়। ২১টির রায়ে ২৪ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আসামিদের বেশিরভাগেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে চার জনের ফাঁসির রায় কার্যকরও হয়েছে।
এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে ছয়টি মামলার। তদন্ত শেষে গ্রেফতার ও পলাতক ২৮ জনের বিচার শুরুর হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া আরো ২৩ মামলায় ৭২ জন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন তদন্ত সংস্থা।
অন্যদিকে জামায়াতের বিরুদ্ধে সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনও জমা আছে প্রসিকিউশনে, আইন সংশোধন হলে দলটির বিচার শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে ৫০ মামলায় মোট ১১৩ ব্যক্তি এবং দলগতভাবে জামায়াতকে বিচার অথবা তদন্তের মুখোমুখি করা গেলেও এখন পর্যন্ত ৬১৮ মামলায় ৩ হাজার ৩৭৬ জন আসামির নাম এসে জমেছে ট্রাইব্যুনালে।
আবদুস সুবহানের মৃত্যুদণ্ড
চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির মুহাম্মদ আবদুস সুবহানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এই রায় ঘোষণা করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী মোট নয়টি অভিযোগ আনা হয় জামায়াত নেতা আবদুস সুবহানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ১, ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে তাকে এ দণ্ড দেয়া হয়েছে। ২ ও ৭ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু ও ৩ নম্বর অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এ জামায়াত নেতাকে। প্রমাণিত না হওয়ায় ৫, ৮ ও ৯ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।
২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে আবদুস সুবহানকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জব্বারের আমৃত্যু কারাদণ্ড
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জাতীয় পার্টির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তরিতকরণ এবং বাড়ি-ঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের পাঁচটি অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এ দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৮ ও ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার।
অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য হলেও কেবলমাত্র বয়স বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি না দিয়ে ৮৩ বছর বয়সী জব্বারকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাবাসের দণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে মামলার রায়ে উল্লেখ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা শান্তি (পিস) কমিটির চেয়ারম্যান জব্বার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ছেলে-মেয়ের কাছে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করছেন প্রসিকিউশন।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার অভিযুক্ত হন হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তরিতকরণ এবং বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ৩৬ জনকে হত্যা-গণহত্যা, ১৫ জনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুরুতর জখম, ২শ’ জনকে ধর্মান্তরিতকরণ এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে ৫শ’ ৮৭টি বাড়ি-ঘর ধ্বংস করার অভিযোগ। এসব অভিযোগের মধ্যে সবগুলো অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে।
মাহিদুর ও আফসারের আমৃত্যু কারাদণ্ড
চলতি বছরের ২০ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন ওরফে চুটুর আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।
তাদের বিরুদ্ধে আনীত তিনটি অভিযোগের মধ্যে দুটি প্রমাণিত হয়েছে। ১ নম্বর অভিযোগে তাদেরকে সর্বসম্মতিক্রমে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। অন্য অভিযোগটি ড্রপ করা হয়েছে।
মাহিদুর ও চুটু মুসলিম লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে তারা শিবগঞ্জ এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন।
মাহিদুরের বর্তমান বয়স ৮৪ বছর। তার বাড়ি জেলার শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নে দাদনচক গ্রামে। আফসার হোসেনের বয়স ৬৪ বছর। তার বাড়ি বিনোদপুর ইউনিয়নের সাতরশিয়া গ্রামে। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর তাদের নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
হাসান আলীর মৃত্যুদণ্ড বা গুলি করে দণ্ড কার্যকর করা যাবে
চলতি বছরের ১০ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জের পলাতক সৈয়দ মো. হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীকে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে। তবে সরকার চাইলে ফাঁসির রশিতেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারবে। কীভাবে দণ্ড কার্যকর করা হবে তা সরকার ঠিক করবে।
ট্রাইব্যুনালে এর আগে ১৬ জনের ফাঁসির রায় হলেও এই প্রথম কোন রায়ে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রায়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ এর একটি বিধান উল্লেখ করা হয়। যাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে এই দুই ধরনের কথা বলা আছে। হাসান আলীকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি অভিযোগে এ দণ্ড দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুট, আটক ও নির্যাতনের মোট ৬টি অভিযোগে হাসান আলীর বিচার হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডের সাজার বিষয়ে আদেশে বলা হয়েছে, সকল দিক ও তথ্য-প্রমাণে হাসান আলীর বিরুদ্ধে আনা তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল আইনের ২০ (২) ধারায় দুটি অভিযোগে পৃথকভাবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হচ্ছে। দুই মৃত্যুদণ্ডের একটি কার্যকর হলে বাকি সাজা স্বাভাবিকভাবেই একীভূত হয়ে যাবে।
তাকে গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণের পর এই রায় কার্যকর করা হবে। এটি যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত দুই ট্রাইব্যুনালের ১৯তম রায়।
ফোরকান মল্লিকের মৃত্যুদণ্ড
চলতি বছরের ১৬ জুলাই ধর্ষণ, হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ফোরকান মল্লিককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তিনটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এর মধ্যে এক হিন্দু মেয়েকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার তিন নম্বর এবং এক মুসলিম নারীকে অপহরণ, ধর্ষণ ও তিনজনকে হত্যার পাঁচ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া সুবিদখালী বাজার এলাকার দুই হিন্দু নারীকে অপহরণ ও ধর্ষণ এবং তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার চার নম্বর অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর এক ও দুই নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে এই দুই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারক হলেন; বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।
মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে এ রায়ে সংক্ষুব্ধ আসামিপক্ষ। ফোরকানের আইনজীবী আব্দুস সালাম খান বলেন, আসামি ফোরকান মল্লিককে আপিলের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। আশা করি আপিল বিভাগে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন। তবে আপিল আবেদন ও মামলা চালানোর মতো তার আর্থিক সঙ্গতি নেই বললেই চলে।
সিরাজ মাস্টারের মৃত্যুদণ্ড, খান আকরামের আমৃত্যু কারাদণ্ড
চলতি বছরের ১১ আগস্ট হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারকে (৭২) মৃত্যুদণ্ড ও খান আকরাম হোসেনকে (৬১) আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে বলা হয়, আসামি সিরাজের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর আকরাম দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনটি অভিযোগের মধ্যে একটিতে। কসাই সিরাজকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে, অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে যেভাবে সুবিধাজনক সেভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে আকরামকে স্বাভাবিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাটাতে হবে জেলখানায় চার দেয়ালের মধ্যে।
চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ রায় প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ট্রাইব্যুনাল তার রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেন, অভিযুক্ত সিরাজ মাস্টার একাত্তরে হত্যা করে উল্লাস প্রকাশ করতেন। তিনি তার অপরাধের জন্য অনুতপ্তও হননি। তাই তিনি কোন অনুকম্পা পেতে পারেন না। সর্বোচ্চ সাজাই তার প্রাপ্য।
এটি হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের ২১তম রায়। সিরাজ মাস্টার ও খান আকরাম হোসেনের সঙ্গে এ মামলায় আব্দুল লতিফ তালুকদার (৭৫) নামে আরেক রাজাকার সদস্য অভিযুক্ত হন। কিন্তু রায়ের আগেই গত ২৭ জুলাই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মৃত্যু হওয়ায় তার নাম মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়।
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর