ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সালতামামি

বছরজুড়ে উত্তপ্ত ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও শান্তির বদলে বছরজুড়ে অস্থিরতাই বেশি ছিল। শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ছাত্রলীগের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ছাত্রদল-শিবিরের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জসহ বিভিন্ন ঘটনায় বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে বেশকয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।ফলে দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কায় পড়ে শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রদল-শিবিরের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপকে কেন্দ্র করে ১০ জানুয়ারি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। চাকরির দাবিতে ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিসে তালা ঝুলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ইবি ক্যাম্পাস।বছরের শেষে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনের দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে আমরণ অনশন করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। মুখোশ পরে রাতে তাদের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধলে রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তরিকুল ইসলাম, ভূগোল বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজার রহমানসহ অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলনে বছরজুড়েই উত্তপ্ত ছিলো বেরোবি ক্যাম্পাস।  

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষকদের ওপর ৩১ আগস্ট হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদের’ অন্তত সাত শিক্ষক আহত হন। ওই হামলার প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্যের জের ধরে ১২ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমকে মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের নেতারা। ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে এক সপ্তাহ উত্তপ্ত থাকে ক্যাম্পাসটি। এসময় বন্ধ ছিলো পাঠদান ও পরীক্ষাও।

১৬ এপ্রিল দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ঘটে। এতে মো. জাকারিয়া ও মাহামুদুল হাসান মিল্টন নামে ছাত্রলীগের দুই কর্মী নিহত হন। ২৪ জুন ‘চাঁদা আদায় নিয়ে’জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২৬ জুন সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রফ্রন্টের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ছাত্র্রফ্রন্টের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এসব ঘটনায় উত্তপ্ত ছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
শীতকালীন ছুটির সময় রাবির আবাসিক হল খোলা রাখার দাবিতে ২৭ ডিসেম্বর প্রশাসন ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে  ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মুহম্মদ মিজানউদ্দিনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা করার প্রস্তাব দিলেও তা মানেন নি আন্দোলনকারীরা। হল খোলা রাখার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেই অবরোধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা।

চলতি অর্থ বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করে সরকার। ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ৯ সেপ্টেম্বর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বেতন বৈষম্য নিরসন ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করেন। শিক্ষকদের এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তাপ ছড়িয়ে পরে। আগামী ২ জানুয়ারি থেকে দাবি আদায়ে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ারও হুঁমকি দিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। ফলে নতুন বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা পাঠাদান থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

এনএম/একে/এএইচ/আরআইপি