বিদেশি বিনিয়োগের পালে হাওয়া
দেশের শেয়ার বাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে বিদায়ের অপেক্ষায় থাকা ২০১৭ সালে বিদেশি বিনিয়োগের পালে হাওয়া লেগেছে। এ বছর বিদেশিদের শেয়ারের লেনদেনে সৃষ্টি হয়েছে একের পর এক রেকর্ড।
বছরটির শেষ হওয়া ১১ মাসের মধ্যে ১০ মাসেই বিদেশিরা যে পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছেন, ক্রয় করেছেন তার থেকে বেশি। ফলে লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০১৭ সালে বিদেশিদের ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবধানও বেড়েছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১১ মাসে বিদেশিরা মোট শেয়ার লেনদেন করেছে ১০ হাজার ৩২৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার। আর আগে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এক বছরে বিদেশিরা এতো টাকার শেয়ার লেনদেন করেনি।
২০১৬ সালজুড়ে বিদেশিদের শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৭৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক মাস বাকি থাকতেই ২০১৭ সালে আগের বছরের তুলনায় বিদেশিদের লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৫৪৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
শুধু মোট লেনদেন নয়, বিদেশিদের ক্রয় ও বিক্রয়ের ব্যবধানও ২০১৭ সালে বেড়েছে। ২০১৭ সালের ১১ মাসে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রির চেয়ে ক্রয় বেশি করেছে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের বছর ২০১৬ সালে বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চেয়ে ক্রয় বেশি ছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
এদিকে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে বিদেশিদের শেয়ার লেনদেনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। মাসটিতে বিদেশিরা ১ হাজার ২৫৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছেন। এর আগে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা্ এক মাসে এত বেশি টাকার শেয়ার লেনদেন করেনি। এর আগে বিদেশিদের এক মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন ছিল গত মার্চে। মাসটিতে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯২ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন চিত্র
সাল |
ক্রয় |
বিক্রয় |
মোট |
বিক্রয় থেকে ক্রয় বেশি |
২০১৭ সাল নভেম্বর পর্যন্ত |
৫ হাজার ৯৮২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা |
৪ হাজার ৩৪০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা |
১০ হাজার ৩২৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা |
১ হাজার ৬৪২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। |
২০১৬ সাল |
৫ হাজার ৫৭ কোটি ৩ লাখ টাকা |
৩ হাজার ৭১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা |
৮ হাজার ৭৭৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা |
১ হাজার ৩৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা |
২০১৫ সাল |
৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা |
৩ হাজার ৬৩৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা |
৭ হাজার ৪৬৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা |
১৮৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা |
২০১৪ সাল |
৪ হাজার ৬১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা |
১ হাজার ৯৯০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা |
৬ হাজার ৬০০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা |
২ হাজার ৬১৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা |
২০১৩ সাল |
২ হাজার ৬৫২ কোটি ৫২ লাখ টাকা |
৭০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা |
৩ হাজার ৩৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা |
১ হাজার ৯৪৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা |
২০১২ সাল |
১ হাজার ৩৪৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা |
৫৫৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা |
১ হাজার ৯০৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা |
৭৯২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা |
২০১১ সাল |
১ হাজার ২১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা |
১ হাজার ১৩৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা |
২ হাজার ৩৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা |
৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা |
২০১০ সাল |
১ হাজার ৭৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা |
১ হাজার ৭৫৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা |
২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা |
বিক্রয় বেশি ৬৭৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা |
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই শেয়ারবাজারে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কম থাকায়, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিক্রয়ের থেকে ক্রয় বেশি করেন। যার ধারাবাহিকতা ২০১৭ সালজুড়েই অব্যাহত থাকে। ফলে শেয়ার বিক্রির থেকে ক্রয় বেশ হওয়ার পাশাপাশি লেনদেনে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। মাঝে কিছুদিন বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছিল। এ সময় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। সেই সুযোগই নিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় তারা শেয়ার ক্রয়ে মনযোগী হয়েছেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন শেয়ারবাজারে মন্দাভাব থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠানের দাম বেশ কমে যায়, এ কারণেই হয়তো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয়ে আকৃষ্ট হয়েছেন। তাছাড়া ২০১৭ সালের শুরু থেকেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এতে বাজারের ওপর সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা বেড়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেন। দেখা যায়, শেয়ারের দাম যখন কম থাকে তখন তাদের ক্রয়ের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার ঊর্ধ্বমুখী বাজারে তারা শেয়ার বিক্রি করেছেন। সে কারণে বিদেশিদের বিনিয়োগ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সেটি চিন্তার বিষয়। তবে আশার কথা আমাদের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি।
এমএএস/ওআর/এমএস