ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সালতামামি

বছরজুড়ে আলোচনায় আপন জুয়েলার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:০৮ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

বছর জুড়েই আলোচনায় ছিল রাজধানীর বনানীর ধর্ষণ মামলা। চলতি বছরের ২৮ মার্চ রাতে বন্ধুদের নিয়ে জন্মদিন অনুষ্ঠানে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণ করে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত ও বন্ধু নাঈম আশরাফ।

দুই তরুণীকে ধর্ষণ ও মারধরের ঘটনার এক মাসের বেশি সময় পর বনানী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সাফাতের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কারণে মামলা দায়ের করতে এত দেরি হয় বলে জানিয়েছিলেন ওই দুই তরুণী। তবে থানায় ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে মামলা করতে গেয়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী প্রথমে তাদের অভিযোগের তোয়াক্কা করেননি।

ওসির গাফিলতির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অভিযোগ ওঠে ওসি ফরমান আলী আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। এরপর নানা চাপে পড়ে মামলা নেয় বনানী থানা পুলিশ।

মামলায় সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলীকে আসামি করা হয়। তবে মামলায় বিলম্ব হওয়ায় ততদিনে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় সাফাতসহ বাকি পাঁজজন।

এদিকে জাগো নিউজসহ আরেকটি গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দিলদার আহমেদ ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। একই সঙ্গে তাদের বিব্রতকর ছবি প্রকাশেরও হুমকি দেন। একদিকে যখন দিলদারপুত্রের খোঁজ চলছিল এমন সময় তাদের ওই হুকমিতে সামাজিক যোগাযোগসহ সারাদেশে তাদেরকে গ্রেফতারে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়।

মামলার ৫ দিন পর সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে সিলেট মহানগরের পাঠানটুলার রশিদ ভিলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর কয়েক দিনের মধ্যে গ্রেফতার হয় বাকি ৩ আসামিও। এর কিছুদিন পরই আদালতে ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয় পুলিশ। তবে এখানেই ওই ঘটনার রেশ কাটেনি।

আলোচিত এই ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আপন সাফাত জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে। ফলে চাপের মুখে পড়ে তার জুয়েলার্সের ব্যবসাও। আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নামে শুল্ক গোয়েন্দা। মে মাসের ১৪ ‘ডার্টি মানি’ বা অসদুপায়ে অর্জিত টাকার অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুই দফায় আপন জুয়েলার্সের ছয়টি শাখায় অভিযান চালানো হয়।

স্বর্ণ ও ডায়মন্ড আমদানির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পাড়ায় প্রথম দফায় ২৮৬ কেজি স্বর্ণ ও ৬১ গ্রাম ডায়মন্ড এবং দ্বিতীয় দফায় ২১১ দশমিক ৪০৮ কেজি স্বর্ণ ও ৩৬৮ গ্রাম ডায়মন্ড জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দার কর্মকর্তারা।

এরপরই শুরু হয় আপন জুয়েলার্সের অধঃপতন। শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাকা হয় আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক গুলজার আহমেদ, দিলদার আহমেদ সেলিম ও আজাদ আহমেদকে। দীর্ঘ তদন্তের পর শুল্ক আইনে কর ফাঁকির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এদের মধ্যে দিলদার আহমেদ সেলিমের বিরুদ্ধে ৩টি এবং বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা দায়ের করা হয়।

এসবেও শেষ হয়নি। পরবর্তীতে আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে আরও পাঁচটি মামলা করা হয়। চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ১৫ মণ সোনা ও ডায়মন্ড নিজেদের কাছে রাখা এবং এসব মূল্যবান সামগ্রী কর নথিতে অপ্রদর্শিত ও গোপন রাখার অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।

এসব মামলার অভিযুক্তও সেই তিন মালিক। কয়েকটি মামলায় তাদের জামিন পেলেও কর ফাঁকির মামলায় তারা আটকে যান। নিম্ন আদালত থেকে জামিন না পেয়ে আশ্রয় নেন উচ্চ আদালতে।

সর্বশেষ নভেম্বরে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের করা পাঁচ মামলায় আপন জুয়েলার্সের তিন মালিককে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আদালতের রুলে একটি মামলায় জামিনও পেয়েছেন। তবে বাকি মামলাগুলোয় জামিন না পাওয়ায় এখনো কারাগারে রয়েছেন তারা।

এআর/আরএস/আরআইপি

আরও পড়ুন