ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সালতামামি

শিলা-মাবিয়ার পর জিমি-জাবিরদের হাসি

প্রকাশিত: ০৪:৪৮ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

আর কয়েক ঘন্টা। তার পরই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আরেকটি ইংরেজি বছর। সব জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে শুরু করবে গোটা পৃথিবী। পেছনে তাকিয়ে মানুষ মিলিয়ে নেবে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবের খাতাটা। ক্রীড়াঙ্গনও এর বাইরে নয়। কি সাফল্য সঙ্গী করে নতুন বছরে পা রাখছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। কোন ব্যর্থতাই বা বিদায়ী বছরে জড়িয়ে ছিল আষ্টেপিষ্ঠে-শেষ দিনটায় তা মিলিয়ে নেয়া যাক। ক্রীড়াঙ্গন বলতে একটা বিশাল জায়গা নিয়ে আছে ফুটবল-ক্রিকেট। বড় এ দুই খেলার হিসেবের খতিয়ানটাও বড়। চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক অন্যসব খেলায়।

ফুটবল-ক্রিকেটের পর তৃতীয় বড় খেলা হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে হকি। স্টিকের কারুকাজের এ খেলাটির জৌলুস আগের মতো না থাকলেও ২০১৬ সালটা ভালোই কেটেছে। খেলাটির সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরেছে। মাঠেও ছিল সাফল্যের ডালি। ঘরোয়া হকিতে ছিল চাঞ্চল্যতা, মোহামেডান-মেরিনার্স মাঠে ফিরেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেই ছিল অনন্য অর্জন। এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৮ হকিতে দুর্দান্ত খেলে রানার্সআপ হয়েছে লাল সবুজ জার্সিধারীরা। জাতীয় দল হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছে এশিয়ান হকি ফেডারেশন (এএইচএফ) কাপের। জিমি-চয়নদের নৈপূন্যে জাতীয় দলের ভালো একটি বছরই কেটেছে।

সাফল্যের পাশাপাশি কিছু বিশৃঙ্খলাও ছিল হকিতে। ঘরোয়া হকিতে মাঠে উত্তেজনা ছড়িয়েছেন খেলোয়াড়েরা। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা এবং বিদেশি আম্পায়ারদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ানো ছিল নিয়মিত ঘটনা। প্রিমিয়ার হকি লিগের শেষ ম্যাচে মেরিনার্স কর্মকর্তারা লজ্জাজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। একজন সংগঠককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন এবং ভিআইপি বক্স লণ্ডভণ্ড করেছেন। এ সবই হয়েছে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে। নির্বাহী কমিটিকে পাশ কাটিয়ে সহসভাপতি সফিউল্লাহ আল মুনীরের এককভাবে বিদেশি কোচ নিয়োগসহ জাতীয় দলের উপর খবরদারির ঘটনাও ছিল বেশ আলোচনায়।

বছরের গোড়ার দিকে দেশবাসীকে আনন্দের কান্নায় ভাসিয়েছিলেন নারী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সিমান্ত। এসএ গেমস ভারোত্তোলনে নারীদের অভিষেক আসরেই বাংলাদেশকে স্বর্ণ এনে দেন মাদারীপুরের এ তরুনী। ভারতের গৌহাটিতে স্বর্ণ জেতার পর মাবিয়ার সেই কান্নার দৃশ্য পুরো দেশবাসীর হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

একই আসরে নতুন রেকর্ড করেছিলেন মাহফুজা খাতুন শিলা। বাংলাদেশের প্রথম নারী সাঁতারু হিসেবে তিনি জিতেছেন এসএ গেমসে স্বর্ণ। তাও একটি নয়, দুটি। জোড়া স্বর্ণ জিতে ফেডারেশনের উপেক্ষার জবাব দিয়েছেন তিনি। গেমসে নতুন সূচনা করেছেন শ্যুটার শাকিল আহমেদ। ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে এসএ গেমসে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণ পদক জিতেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ শ্যুটার।

এসএ গেমসের এ সাফল্য বদলে দিয়েছে তিনজনেরই জীবন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনজনকেই সাফল্যের পুরস্কার হিসেবে একটি করে ফ্লাট বানিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) তাদের জন্য উত্তরায় ফ্লাট নির্মানও শুরু করেছে। তা তৈরীর আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে এ তিন কৃতি ক্রীড়াবিদের ফ্লাটের ভাড়াও প্রদান শুরু করেছে। তিনজনই উঠেছেন নতুন ফ্লাটে। সাঁতারু শিলার জন্য নতুন ফ্লাট এনে দিয়েছে আরও নতুনত্ব। দীর্ঘদিনের বন্ধু আরেক সাঁতারু শাহজাহান আলী রনিকে জীবনসঙ্গী করেছেন তিনি।

শিলা, মাবিয়া ও শকিলের সাফল্য বাদ দিলে অবশ্য এসএ গেমসজুড়ে বাংলাদেশের ব্যর্থতাই বেশি। আগের আসরে বাংলাদেশ জিতেছিল ১৮টি সোনা, এবার মাত্র ৪টি।  শ্যুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। সাইক্লিং ও ভলিবল ছাড়া অন্য সব খেলায় পদক এসেছে। তবে পাওয়া পদকগুলো ছিল অপ্রত্যাশিত। দেশের দ্রুততম মানব মেসবাহ আহমেদ ও মানবী শিরিন আক্তার ব্যর্থ হয়েছেন এসএ গেমসে। যদিও বছর শেষে তারা ঘরের খেতাব ধরে রেখেছেন।


বছরের শুরুতে যেমন সাফল্যের হাসি ছিল শিলা-মাবিয়াদের তেমন শেষ দিকে জিমি-জাবিরদের। হকিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গ থেকে সাফল্য এনেছেন জিমিরা। আর সাঈদ আল জাবিররা এনেছেন ভলিবলে। বছরের শেষ মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ভলিবলে এটি বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি। এ সাফল্যের পর দেশের ভলিবলেন চেহারাটা বদলে যাবে-এমন বিশ্বাস অনেকের।

২০১৬ সালটি ছিল অলিম্পিক গেমসেরও বছর। রিও অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন অ্যাথলেট মেসবাহ, শিরিন, তিরন্দাজ শ্যামলী রায়, সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর, সোনিয়া আক্তার এবং শ্যুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি। অলিম্পিকে বাংলাদেশের গ্রহন নতুন নয়। তবে এবারের ব্যতিক্রমী বিষয়টি গলফার সিদ্দিকুর রহমানের অংশগ্রহণ। বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিক গেমসে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন দেশসেরা এ গলফার। তবে সিদ্দিকুরের বছরটি বেশি ভালো কাটেনি। অলিম্পিকে হয়েছেন ৬০ জনের মধ্যে ৫৮তম। অন্য টুর্নামেন্টগুলোতেও সাফল্য নেই।

কাবাডির বছরটা ভালো হতে পারতো। কিন্তু দেশের জাতীয় এ খেলাটি এক প্রকার কলঙ্ক দিয়েই শেষ করছে সালটি। বিশ্বকাপ কাবাডিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।  সাংগঠনিকভাবেও বাজে অবস্থা ফেডারেশনটির। বিশৃঙ্খলা ও কর্মকর্তাদের দুর্নীনির কারণে পুলিশ ফেডারেশনে তালাও ঝুলিয়ে দিয়েছিল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অ্যাডহক কমিটি গঠন করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।

এসএ গেমসে মাবিয়ার স্বর্ণ পদক জয়ে আলোচনায় ছিল ভারোত্তোলন। কিন্তু কর্মকর্তাদের চেয়ারের লড়াইয়ে নেতিবাচক আলোচনায়ও ছিল খেলাটি। অস্থায়ী কমিটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে না জানিয়ে ভারোত্তোকদের কাতারে একটি টুর্নামেন্ট খেলতে নিয়ে গিয়েছিলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন হয়েছিল সাইক্লিংয়ে ‘ট্যুর ডি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাইক্লিংয়ে জন্য যা ছিল নতুন এক মাত্রা।

আরআই/আইএইচএস

আরও পড়ুন