ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সালতামামি

ঘোষণায় সীমাবদ্ধ ‘গ্রিন ঢাকা-ক্লিন ঢাকা’

প্রকাশিত: ০৩:৪৮ এএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ স্লোগান নিয়ে ২০১৬ সাল শুরু করে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন। এজন্য ঘোষণা করে বেশকিছু কর্মসূচিও। তবে বছর শেষে দেখা যায় ঘোষিত কর্মসূচির খুব কমই বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো সীমাবদ্ধ ঘোষণাতেই।    

২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০১৬ সালকে ‘পরিচ্ছন্ন বছর’ হিসেবে ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। মেয়রের ওই কর্মসূচির ইংরেজি নাম ছিল ‘ঢাকা ক্লিন : ২০ সিক্সটিন’।  
 
সে সময় মেয়র বলেন, রাজধানীকে একটি পরিচ্ছন্ন, সবুজ, বাসযোগ্য, সুন্দর ও রঙিন নগরী হিসেবে গড়ার উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার বৃহত্তর ধারণায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে- পরিচ্ছন্ন ভাবনা, পরিচ্ছন্ন বসন, পরিচ্ছন্ন নগর এবং পরিচ্ছন্ন জীবন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিনি নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

এজন্য বিভিন্ন সময় প্রচারণামূলক র্যালি, বিলবোর্ডে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণসহ পরিচ্ছন্ন অভিযান করে সংস্থা দুটি। ফুটপাতে সাধারণের চলাচল সুগম করতে অভিযানও হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে দুই সিটি কর্পোরেশনকে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। বছরজুড়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগটি ছিল আলোচিত। কিন্তু এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে দুই মেয়রকে।  

এছাড়া ২০১৬ সালে পরিচ্ছন্নতা কাজের প্রচারণার অংশ হিসেবে একদিন নগরবাসীকে সাদা শার্টে অফিস করার আহ্বান জানাবেন বলে জানিয়েছিলেন সাঈদ খোকন। কিন্তু মেয়রের এ কর্মসূচি আজো আলোর মুখ দেখেনি।
 
এদিকে পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার লক্ষে এপ্রিলে ঢাকঢোল পিটিয়ে দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানে ওয়েস্টবিন বসানো হয়। একই সময় উত্তরও এ প্রকল্প শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণে প্রায় ৫৭০০ ওয়েস্টবিন বসানো হয়। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
 
উত্তর সিটি কর্পোরেশনও সমপরিমাণ বিন বসিয়েছে। কিন্তু এসব বিন বসানোর কিছু দিন যেতে না যেতেই সেগুলো নষ্ট ও চুরি হতে শুরু করে। ফলে উত্তরের এ প্রকল্প অনেকটাই ব্যর্থ হয়।
 
তবে সবুজ নগরী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে উত্তরের মেয়র আনিসুল হক ২২ অক্টোবর ১৯ হাজার টবসহ গাছের চারা বিতরণ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এ লক্ষে বিভিন্ন সময় তিনি নগরবাসীর মধ্যে বিনা পয়সায় গাছের চারা বিতরণসহ নানা কর্মসূচিও পালন করেন। এছাড়া বাড়ির ছাদে বাগান করা সেরা ১০ নগরবাসীকে সবুজ ঢাকা গ্রিন অ্যাওয়ার্ড দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়।
 
গ্রিন ঢাকার পাশাপাশি উত্তরের ফুটপাতে জনসাধারণের চলাচলের পথ সুগম রাখতে গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, বারিধারা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। এতেও একের পর এক বাধা আসে। বিপত্তি দেখা দেয় অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণেও। তবে এসব বাধা উত্তরণে উত্তর কিছুটা সক্ষম হলেও দক্ষিণে তা সম্ভব হয়নি।  
 
মেয়র আনিসুল হক বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, নির্বাচনের সময় গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা, যানজট ও ফুটপাতমুক্ত নগরীসহ যে ওয়াদা দিয়েছিলাম তা রক্ষার চেষ্টা করছি। এজন্য নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে।  
 
পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ার অংশ হিসেবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ফুটপাত দখলমুক্ত অভিযানে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর বড় বাধা আসে গুলিস্তানে হকারদের তরফে। গুলিস্তানে উচ্ছেদ অভিযানের সময় সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হামলা করেন দখলদার হকাররা। পরে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এক হকার নেতাকে আটক করলে বিক্ষুব্ধরা নগর ভবনে হামলা চালায়। এ সময় হকারদের তাণ্ডব থামাতে মহানগর ছাত্রলীগ, দলীয় নেতাকর্মী এবং নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তা নেন সাঈদ খোকন।
 
অভিযানের সময় মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন ও ওয়ারী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমানকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। পরবর্তীতে এ দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা ও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। সে সময় মেয়র সাঈদ খোকন উচ্ছেদে সফলতা না পাওয়ায় পুলিশকেই দায়ী করেন। এরপর থেকে দক্ষিণের উচ্ছেদ অভিযান অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে।  
 
braverdrink

এর কারণ হিসেবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, গুলিস্তানে উচ্ছেদে ঝামেলা হওয়ার পর আমরা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থেকে অভিযানে যাচ্ছি।
 
তবে শুধু হকার নয়, উচ্ছেদ অভিযানে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে নির্বাচিত কাউন্সিলের হাতেও। ১ সেপ্টেম্বর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ দখলে থাকা ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদে বাধা দেন ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হাবু। অবশ্য পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

বরখাস্তের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি রক্ষা ও যানজটমুক্ত নগরী গড়ায় ভূমিকা না রেখে জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন।  
 
এদিকে গ্রিন ঢাকা কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনেকটা সফল উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বাধার মুখে পড়লেও উচ্ছেদেও তার রয়েছে যথেষ্ট সফলতা।  

এমএসএস/এএইচ/আরআইপি

আরও পড়ুন