৩১ নেতা হারিয়েছে বিএনপি
বিদায়ের পথে ঘটনাবহুল ২০১৬। এ বছর আশাব্যঞ্জক অনেক ভালো খবর যেমন ছিল, তেমনি মন খারাপ করে দেয়ার মতো খবরও কম ছিল না। এ বছর বিএনপি হারিয়েছে ৩১ নেতা। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে শুরু করে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন স্তরের নেতাদের হারিয়ে অনেকটা মুহ্যমান এ দলটি। শোকাহত বিএনপির শোকের আবহ যেন থামছেই না। মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবে বরণ করে নিলেও যোগ্য নেতাদের বিয়োগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দলটি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বশীল ৩১ নেতাকে হারিয়েছে বিএনপি। তবে পদস্থ নেতা ছাড়াও সব মিলিয়ে হিসেব করলে সে সংখ্যা হয়তো শতাধিত হবে।
নতুন বছরের প্রথম মাস তথা জানুয়ারির মাঝামাঝিতে বিএনপিকে হারাতে হয়েছে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং বিজ্ঞানী ড. আর এ গণিকে। ১৫ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি।
এছাড়া ২৭ সেপ্টেম্বর দলের আরেক নীতিনির্ধারক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ মারা যান। তার মৃত্যু অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের পাটমন্ত্রী ছিলেন হান্নান শাহ। ১/১১ পরবর্তী সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
এদিকে নওগাঁ জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক আবুল হাসান মোহাম্মদ মাসুদ (উৎপল) মারা যান ১০ ফ্রেব্রুয়ারি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৪ বছর।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু ভূঁইয়া মাদারীপুরের নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন একই মাসে তথা ১৫ ফেব্রুয়ারিতে। এরপরের দিনই আরেক নেতাকে হারিয়েছে বিএনপি। ১৬ ফেব্রুয়ারি হারাতে হয় কুষ্টিয়া জেলাধীন ভেড়ামারার ধরমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ আবদুল জলিলকে। একই দিনে ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আজগর মাতব্বর রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।
ভাষার মাস ফ্রেব্রুয়ারিতে আরো দুজন নেতাকে হারাতে হয় বিএনপির। ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর ধানমন্ডি থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সভাপতি জামাল মাতব্বর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল ঢাকা মহানগর মতিঝিল থানা শাখার সহ-সভাপতি ও নোয়াখালী জেলাধীন ১২নং কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন ঢাকার বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন।
গত ৩ মার্চ সকালে মানিকগঞ্জ জেলাধীন ঘিওর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। ২০ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষে বাসায় ফেরার পরপরই বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাাদক হাজী আবদুল হান্নান হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে লোকান্তরে চলে যান।
১০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেন সিকদার তার গ্রামের বাড়িতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পরলোকগমন করেন। ১৩ এপ্রিল চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর হায়দার খান ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
১৪ এপ্রিল পিরোজপুর জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও কাউখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী খান নিজ বাসভবনে দীর্ঘদিন অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যান।
১৯ এপ্রিল তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক নির্বাচিত জিএস আনোয়ারুল হক ভূঁইয়া রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
২১ এপ্রিল ঝিনাইদহ থেকে পরপর চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শহিদুল ইসলাম মাস্টার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
রাজশাহীর বাঘা পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক কমিশনার কলিমউদ্দিন চিরনিন্দ্রায় শায়িত হন ২৮ এপ্রিল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। ১ মে মারা যান রাজশাহী বাঘা-চারঘাট থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের সাবেক এমপি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুর রহমান।
৩ মে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, চকবাজার থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার হাজী আজিজ উল্লাহ আজিজ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
৫ মে গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি মো. মোস্তফা মোড়ল রাজধানীর হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
৩ জুন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, চন্দনবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মমতাজুল করিম জাহাঙ্গীর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেয়ার পথে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন।
বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, প্রখ্যাত ভূলোগবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদ, দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার, সাবেক রাষ্ট্রদুত এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ রাকসুর প্রথম ভিপি অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান মিঞার না ফেরার দেশে চলে যান ১৩ জুন।
২০ জুন ভোলা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. ফারুক মিয়া বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ৩ জুলাই জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইদুর রহমান খোকা জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১৬ মে মাদারীপুরের শিবচর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠু রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৩০ জুলাই হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল হুসাইন চৌধুরী রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন।
৪ আগস্ট বিএনপিকে হারাতে হয়েছে দুই নেতাকে। ওইদিন মারা যান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য এহসান চেয়ারম্যান এবং ফটিকছড়ি থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক নুরুল আবছার চৌধুরী ও পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য আফজাল হোসেন হাওলাদার।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল গত ১২ আগস্ট ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চলে যান না ফেরার দেশে।
৫ নভেম্বর থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের শিক্ষক নেতা ও ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক, নরসিংদীর বেলাবো উপজেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পেশাজীবী পরিষদের নেতা অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত চুন্নু দিল্লির একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ২৯ নভেম্বর।
১২ নভেম্বর সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান গাইবান্ধা জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক গাওসুল আজম ডলার।
এমএম/বিএ/আরআইপি