সংস্কৃতি মহান প্রভূর নিয়ামত
সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টার কাটায় রূপ লাভ করে রাত-দিন। এ রাত, দিন, মাস এবং বছরের বেড়াজালে মানুষের জীবন মোড়ানো। এ চলমান জীবনে মানুষের রয়েছে আলাদা আলাদা সভ্যতা ও সংস্কৃতি। সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে আবির্ভাব হয়েছে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায় এবং গড়ে উঠেছে অসংখ্য জনপদ। আল্লাহ বলেন, আমি তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত লাভ করতে পার। (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)।
তাইতো আল্লাহ তাআলা সমগ্র বিশ্বে বিভিন্ন ভাষা-ভাষী মানুষের উৎপত্তি ঘটিয়েছেন। বাংলা, আরবি, ইংরেজি, ফরাসিসহ অগণিত অসংখ্য নাম জানা-অজানা ভাষা মানুষকে দান করেছেন। এ সকল ভাষার মধ্যে বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমরা বাংলায় কথা বলি। এ ভাষা আমাদের জন্য আল্লাহর নিয়ামত।
প্রত্যেক ভাষার লোকদের রয়েছে আলাদা সভ্যতা ও সংস্কৃতি। এ সভ্যতা ও সংস্কৃতির অবজ্ঞা ও অবমাননা করা একদম ঠিক নয়। এমন কাজও করা ঠিক নয় যা ধর্মীয় গণ্ডির বাইরে চলে যায়। সভ্যতা ও সংস্কৃতির নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নেই বরং তা দোষণীয় বিষয় বিধায় কেউই এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না।
বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অংশ। এ পহেলা বৈশাখ যদিও বিজাতীয় সংস্কৃতির ছোঁয়ায় সকল বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষদের এক মঞ্চে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে তোলে। তা আমাদের সাম্য, সম্প্রীতি ও উদারতা শিক্ষা দেয়। কিন্তু এ দিবস পালন করতে গিয়ে যদি কেউ কোনো ধরনে অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে, এ জন্য ব্যক্তি বিশেষের কর্মকাণ্ডের জন্য পহেলা বৈশাখকে দায়ী করা ঠিক হবে না।
হিজরি নববর্ষ শুরু হয়েছে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের সময়কাল থেকে শুরু করে। যদি কেউ এ হিজরি নববর্ষ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়, সে জন্য তো হিজরি বর্ষ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান দায়ী হতে পারে না।
সুতরাং সকল নববর্ষই মহান আল্লাহ তাআলার দান। তাই প্রত্যেক ভাষার নববর্ষে যদি সে ভাষার লোক আগামী জীবনের কল্যাণ কামনায় নবপরিকল্পনা গ্রহণ করে উন্নত জীবন লাভ করতে চায়, এ চাওয়া দোষণীয় নয় বরং তার এ প্রার্থনা আল্লাহ তাআলার অপার রহমত স্বরূপ।
তাই ধর্মের দোহাই দিয়ে বা অন্য কোনো আজুহাতে কোনো দেশ, সম্প্রদায় বা জাতির সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি সংস্কৃতির নামে অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমর্থনও দোষণীয় অপরাধ।
সবার সংস্কৃতি সবার কাছে অতি আপন। উদাহরণ দেয়া যায়, মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা লম্বা আলখেল্লা ও রুমাল ব্যবহার করে, পশ্চিমা বিশ্বের লোকেরা পড়ে শর্ট পোশাক। আবার বাঙালি-বাংলাদেশীরা লুঙ্গি-ধূতি-পাঞ্জাবি পরতে ভালোবাসেন। তাই বলে কারো সংস্কৃতিকে কটাক্ষ করা ঠিক নয়। তবে আমাদের সংস্কৃতি যেন শালীন পোশাক পড়তেই উদ্বুদ্ধ করে।
পহেলা বৈশাখ আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অংশ। পহেলা বৈশাখ আমাদের মননে নাড়া দিয়ে যায়। তাছাড়া দুনিয়ার জীবনের কাজকর্মে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল পারস্পরিক লেনদেন। একটু পিছনে ফিরে তাকালে বুঝা যায়, যুগ যুগ ধরে এ দেশের ক্রেতা সাধারণ ও দোকানিরা পহেলা বৈশাখেই তাদের বিগত দিনের লেনদেনের হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নেন। হালখাতা তৈরি করেন। হালাল জীবিকার জন্য নতুন করে ভাবেন।
অনৈতিক ও বিজাতীয় কর্মকাণ্ডমুক্ত ব্যবসায়িক কাজে বৈশাখ ও হালখাতা উদযাপনে এগিয়ে আসা সময়ের দাবি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অন্যায়, অসত্য ও অসুন্দরকে দুপায়ে দলে সত্যের পথে শান্তির মতে চলে আগামি জীবনের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণই হোক পহেলা বৈশাখের উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস