আওস-খাজরাযের দ্বন্দ্ব ও ইয়াহুদি মিত্রতা
ইসলাম পূর্ব যুগে যুগে বছরের পর বছর ধরে আওস ও খাজরায গোত্রদ্বয়ের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতো। এ যুদ্ধ-বিগ্রহে ইয়াহুদিরা তাদের পক্ষাবলম্বন করতো। যার ফলশ্রুতিতে তারা তাওরাতের হুকুম আহকামের লংঘন করতো। আওস-খাজরাযের দ্বন্দ্ব ও ইয়াহুদিদের মিত্রতার আলোচনা মুসলমানদের কল্যাণে আল্লাহ তাআলা কুরআনে এর ইঙ্গিত তুলে ধরেছেন।
তদানীন্তন মদিনায় (ইয়াসরিবে) দুটি মুশরিক সম্প্রদায় ছিল। যার একটি হলো আওস অপরটি খাজরায। এ দু সম্প্রদায়ের মাঝে যুগে পর যুগ ধরে যুদ্ধ লেগে থাকতো। ঐ সময় মদিনার উপকণ্ঠে ইয়াহুদিদের তিনটি গোত্র বসবাস করতো। যারা হলো- বনু কুরায়যা, বুন কায়নুকা ও বনু নজির। তারা মদিনার আওস ও খাজরায গোত্রদ্বয়ের মিত্র হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতো।
এদের মধ্যে বনু কুরায়যা গোত্র আওস সম্প্রদায়ের মিত্র ছিল। আর বনু কায়নুকা ও বনু নজির গোত্রের ইয়াহুদিরা খাজরায সম্প্রদায়ের মিত্র ছিল। আওস ও খাজরায সম্প্রদায় যখন পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হতো। তাদের সঙ্গে ইয়াহুদি গোত্রের লোকেরাও এ যুদ্ধে শরিক হতো। এমনকি পক্ষাবলম্বনের কারণে নিজেদের সম্প্রদায়ের (ইয়াহুদি) লোকদের হত্যা করতে বা তাদের প্রতি জুলুম-অত্যাচার-উৎপীড়ন এবং তাদের ভিটে-মাটি থেকে উৎখাত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করতো না।
আশ্চর্যের বিষয় হলো যদিও তারা আলাদা আলাদাভাবে দুই সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে যুদ্ধে লিপ্ত হতো। যখন তাদের কেউ আওস ও খাজরায সম্প্রদায়ের হাতে বন্দি হয়ে যেতো। তখন তারা সকলে মিলে মিশে অর্থ সংগ্রহ করে মুক্তিপণ আদায় করে তাদের মুক্ত করতো।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বিষয়টিকে এভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘তোমারা নিজেদের লোকদের হত্যা কর এবং নিজেদের একদলকে তাদের আবাসস্থলে থেকে বহিষ্কার কর অন্যায়ের ব্যাপারে পরস্পর সহযোগিতা কারণে, অথচ এ কাজটি (তাওরাতের বিধানে) তোমাদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আলোচ্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ অমান্য করার পর তৃতীয় নির্দেশটি অপেক্ষাকৃত সহজ মনে করে তোমরা তার উপর আমল করতে সচেষ্ট হও। অর্থাৎ নিজেদের কেউ বন্দি হয়ে আসলে তাকে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে মুক্ত কর।
এ জন্য আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি তোমরা কিতাবে কিছু অংশের প্রতি বিশ্বাস কর আর কিছু অংশকে অবিশ্বাস কর?’ মূলত ঈমান কোনো অবস্থাতেই বিভাজ্য হয় না। একটি নির্দেশ মানবো, আরেকটি লংঘন করবো। এ কাজকে আদৌ ঈমান বলা যাবে না।
আওস-খাজরায গোত্রের দ্বন্দ্বের সহযোগিতায় বিধান পালনে দ্বৈত নীতির কারণের আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য কুরআন বিধান ঘোষণা করে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর।’ কোনো আংশিক বা সাময়িক ঈমান আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।
সঙ্গে সঙ্গে যারা এমন কাজ করবে আল্লাহ তাদের শাস্তির কথা কুরআনে তুলে ধরে বলেন, ‘যারা এমন অন্যায় কাজ করবে তাদের জন্যে এ ক্ষণস্থায়ী জগতে অপমান এবং পরকালে কঠিনতর শাস্তি অবধারিত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম মিল্লাতকে সঠিক পথের দিশা দিতেই আওস-খাজরায সম্প্রদায়ের যুদ্ধ-বিগ্রহে পালনীয় নীতি নৈতিকতা পরিহার করতেই তাদের বিবরণ তুলে ধরেছেন। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, কুরআনের বিধি-বিধান পরিপূর্ণরূপে পালন করে ইসলামে প্রবেশ করা। আল্লাহ তাআলা সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
এমএমএস/এবিএস