ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ইসলামে স্বাস্থ্য সচেতনতার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৬:২৭ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০১৬

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল থেকে এ দিনকে বিশ্ব স্বাস্থ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এ দিনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৭ এপ্রিল বিভিন্ন স্লোগানে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। এবারের স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন : ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন’। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের গুরুত্ব ও এবারের প্রতিপাদ্যের বিষয়ে বিশ্বনবির তাগিদ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্লোগান হচ্ছে Prevention is better than cure অর্থাৎ চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাই উত্তম। তাই সুস্থ্য থাকতে সর্ব প্রথম প্রয়োজন সতর্কতা। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করার উপদেশ দেন। তন্মধ্যে রোগব্যাধি আসার আগে সুস্থ অবস্থাকে (আল্লাহর নিয়ামাত) মনে করার তাগিদ দিয়েছেন। কেননা সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে মানুষের জন্য গণীমত।

রোগের উৎপত্তি
>> রোগের উৎপত্তি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে মুহাজির সম্প্রদায়! এমন পাঁচটি অভ্যাস রয়েছে, সেগুলো যেন তোমাদের মধ্যে পাওয়া না যায়, সে জন্য আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অশ্লীলতা। যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা প্রকাশ পায়, তখন তাদের মাঝে প্লেগ ও বিভিন্ন ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি মহামারী আকারে বিস্তার লাভ করবে, যা তাদের পূর্বপুরুষ কখনো শোনেনি।

>> পরিবেশগত কারণেও মানুষের রোগ হয়। পরিবেশ যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে, তখনই মানুষ নানামুখী সমস্যায় পড়ে। অর্থাৎ রোগে আক্রান্ত হয়। পরিবেশের ক্ষতি ইসলাম পছন্দ করে না বরং তাকে গোনাহের কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের কারণে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (অন্যায়-অনাচার-জুলুম থেকে) ফিরে আসে। (সুরা রুম)

>> কুরআন-হাদিস ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ধারাও তাই প্রমাণ করে যে, মানুষ যেমন পাপাচার-অশ্লীলতার কারণে রোগাক্রান্ত হয়, তেমনি পরিবেশগত কারণেও এমন হয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর, কারণ ইমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি (ইবনে মাজাহ)।

সুস্থ থাকার প্রয়োজনীয়তা
>> মানব জীবনের সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। ইসলামের বিধি-বিধানগুলো সুন্দরভাবে পালন করার জন্যও সুস্বাস্থ্য ও সুস্থতা প্রয়োজন। কারণ শারীরিক ও মানসিক শক্তি ছাড়া ইবাদতেও মন বসে না। হাদিসে এসেছে, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় শক্তিশালী মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।’ (মুসলিম)

হাদিসে এসেছে ‘ অধিকাংশ মানুষেই দুটি নিয়ামাতের বিষয়ে অসতর্ক ও প্রতারিত। ১. সুস্থতা এবং ২. অবসর। (বুখারি) এ ব্যাপারে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি? (তিরমিজি)

চিকিৎসা গ্রহণের তাগিদ
>> রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসা গ্রহণ জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। লোকদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, কেননা মহান আল্লাহ তাআলা এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তাহলো বার্ধক্য।’(আবু দাউদ)

>> হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে এসে তার হাত মোবারক আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি অন্তরে এর শীতলতা অনুভব করি। অতপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছ। তুমি ছাকীফ গোত্রের হারেস ইবনে কালদার কাছে যাও। সে (এই রোগের) চিকিৎসা করে।’ (আবু দাউদ)

বিশ্বনবি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা রোগ দিয়েছেন, রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেছেন। প্রত্যেক রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘হারাম বস্তুতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য আরোগ্য বা রোগমুক্তি রাখেননি।’ সুতরাং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, ইসলামের দৃষ্টিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা শুধু বৈধই নয় বরং তা গ্রহণ করাই কাম্য।

পরিশেষে...
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, ডায়াবেটিস মুক্ত জীবন গড়তে বিশ্বনবী এ হাদিসের আমল অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেছেন, ‘পেটের এক তৃতীয়াংশ খাদ্য দ্বারা, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে।’ (ইবনে মাজাহ) পরিমিত খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হলে সকল প্রকার রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়। কারণ মাত্রাতিরিক্ত ভোজন ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। এ রোগের ফলেই মানুষের হার্ট, কিডনী, চোখ, দাঁত, নার্ভ সিষ্টেমসহ সকল গরুত্বপূর্ণ অংগগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হতে থাকে। সুতরাং ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকতে হলে বিশ্বনবির ফর্মূলাই আরোগ্য থাকার অন্যতম উপায়।

আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীকে ইসলামি অনুশাসন মেনে সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এবিএস

আরও পড়ুন