ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মহিলা সাহাবি হজরত আসমা বিনতে আবু বকর

প্রকাশিত: ০২:০২ পিএম, ০৫ এপ্রিল ২০১৬

ইসলামের প্রথম যুগে ঈমান আনয়নকারীদের মধ্যে আঠারোতম ব্যক্তি হলেন হজরত আসমা বিনতে আবি বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা। তিনি হিজরতের ২৭ বছর পূর্বে ৫৯৫ হিজরিতে মক্কায় জন্ম গ্রহণ করেন। এ মহিলা সাহাবি সর্বদিক দিয়ে মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী ছিলেন। তাঁর পিতা, পিতামহ, ভগ্নি, স্বামী ও পুত্র সকলেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবি ছিলেন।

বংশ পরিচয়
হজরত আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহার পিতা ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে হিজরতকারী ও ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তার মাতা ছিলেন কুতাইলা বিনতে আবদুল উযযা, উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন তার ছোট বোন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাওয়ারির বিশেষ সাহায্যকারী ছিলেন তাঁর স্বামী যুবাইর ইবনুল আওয়াম। সত্য ও ন্যায়ের জন্য জীবনদানকারী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইরের শ্রদ্ধেয়া সম্মানিতা মা তিনি।

বিয়ে
যুবাইর ইবনুল আওয়ামের সঙ্গে যখন তার বিয়ে তখন তাঁর স্বামীর আর্থিক অবস্থা ছিল অসচ্ছল। তিনি স্বামীর খেদমত করতেন। স্বামীর একমাত্র সম্পদ একটি ঘোড়া ছিল তার দেখাশুনা করতেন। তার বিয়ের পর পর্যায়ক্রমে হজরত যুবাইর ইবনুল আওয়ামের অবস্থার পরিবর্তন হয়।

উপাধি লাভ
বিশ্বনবি ও তাঁর পিতার হিজরতের সময় রাতের বেলায় থলিতে পাথেয় এবং মশকে পানি গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু পাত্রের মুখ বাঁধার জন্য কোনো রশি খুঁজে পেলেন না। তাই তিনি নিজের কমরের নিতাক বা বন্ধনী খুলে দু’টুকরো করে এক টুকরো দ্বারা মশকের মুখ বেঁধে ছিলেন। আর এক টুকরো দিয়ে থলির মুখ বন্ধ করেছিলেন। এ জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ‘জাতুন নিতাকাইন’ অর্থাৎ দু’টি কোমর বন্ধনীর অধিকারিনী বলে সম্বোধন করত তাঁর জন্য এ বলে দোয়া করেছিলেন- ‘আল্লাহ যেন এর বিনিময়ে জান্নাতে তাঁকে দু’টি নিতাক দান করেন। এভাবে তিনি ‘জাতুন নিতাকাইন’ উপাধি লাভ করেছিলেন।

হিজরত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে রেখে মদিনায় হিজরত করেন। তাঁরা সেখানে গিয়ে হজরত যায়েদসহ কয়েকজন সাহাবি পাঠালে উভয় পরিবারের লোকজন মদিনায় হিজরত করলেন। তখন তিনি ছিলেন সন্তান সম্ভবা। তারপরও তিনি আল্লাহর উপর ভরসা করে ইসলামের জন্য হিজরত করেন।

মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ
তিনি তখন পূর্ণ অন্তসত্ত্বা। তাঁর গর্ভে ছিলেন প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ। তিনি মদিনার কুবায় পৌছলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে প্রসব করেন। মুহাজিরদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম সন্তান প্রসবকারী। মুসলমানগণ তাঁর সন্তান প্রসবের আনন্দে তাকবির দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। বিশ্বনবি নিজের জিহবা থেকে কিছু থু থু মুবারক নিয়ে সদ্য প্রসূত সন্তানের মুখে দেন এবং তার তাহনিক করেন (খেজুর চিবিয়ে খাওয়ান) এবং তাঁর জন্য দোয়া করেন।

দানশীলতা
হজরত আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর সততা, দানশীলতা, মহত্ব ও প্রখর বুদ্ধিমত্তার জন্য তিনি প্রবাদে পরিণত হয়েছিলেন। তাঁর পুত্র হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার মা আসমা এবং আমার খালা আয়িশা হতে অধিক দানশীল কোনো নারী দেখিনি। তাঁর দানের ধরন ছিল এ রকম যে, তিনি তাঁর কাছে কোনো জিনিস পরের দিনের জন্য গচ্ছিত রাখতেন না। যখনই কোনো জিনিস তাঁর কাছে আসতো সাথে সাথেই তিনি তা দান করে দিতেন।

সাহসিকতা
বিশ্বনবি ও তাঁর বাবা হজরত আবু বকর হিজরত করার পর দিন মক্কার কুরাইশ নেতৃবর্গ আবু জেহেলের নেতৃত্বে তাঁদের বাড়ি গিয়ে রাসুলুল্লাহ ও আবু বকরের বিষয়ে জানতে চায় এবং তাঁরা কোথায় আছে সে তথ্য দিতে চাপ প্রয়োগ করে। হজরত আসমা তা জানাতে অস্বীকৃতি জানালে আবু জেহেল তাঁর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ফলে তাঁর কানের দুল কান থেকে ছিটকে পড়ে যায়। এমনকি বিশ্বনবি ও হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হিজরতকালীন সময়ে তিনি রাতের আঁধারে সাওর পর্বতের গুহায় খাবার ও পানি নিয়ে যেতেনে।

ওফাত
এ মহিয়সী মহিলা সাহাবি হজরত আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা দীর্ঘ একশত বছর হায়াত লাভ করেছিলেন। মহিলা সাহাবিদের মধ্যে তিনি সর্বশেষ হিজরি ৭৩ সনের ২৬ জমাদিউস সানি ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

হাদিসের খেদমত
এ মহিয়সী নারী সাহাবি থেকে ৫৬টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বুখারি ও মুসলিম যৌথভাবে তাঁর নিকট থেকে ১৩টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। আলাদা আলাদা ভাবে ইমাম বুখারি বর্ণনা করেছেন ৫টি হাদিস আর ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন ৪টি হাদিস। বহু বিশিষ্ট সাহাবি তাঁর নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।

পরিশেষে...
আল্লাহ তাআলা মহিয়সী নারী সাহাবির খেদমত কবুল করুন। পৃথিবীর সকল নারীকে তাঁর ফায়েজ ও বরকত লাভ করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার সকল মুসলিম নারীকে তাঁর আদর্শ গ্রহণ করে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

আরও পড়ুন