স্বাধীনতা আল্লাহর নিয়ামাত
স্বাধীনতা অনেক ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। কোনো জাতি ‘স্বাধীন’ মুখে ঘোষণার দ্বারাই হয়ে যায় না। বরং মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে করণীয় প্রত্যেক কাজের স্বাধীনতাই হলো মূল স্বাধীনতা। বিশেষ করে যেখানে থাকবে সত্য ও ন্যায় প্রকাশের স্বাধীনতা, অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এ জন্যই স্বাধীনতা আল্লাহ তাআলার সুমহান নিয়ামাত।
তাই ইসলাম মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৈৗমত্ব রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করাই নয় বরং জোরালো তাগিদ দিয়েছে। মানুষ স্বাভাবিক এবং সঙ্গত কারণেই স্বাধীনচেতা। কোনোভাবেই পরাধীনতার শৃঙ্খল মেনে নিতে চায় না। তাছাড়া মানুষ আল্লাহ ছাড়া কারো গোলামি করবে না, কারো দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকবে না। সে পৃথিবীর যত বড় ক্ষমতাশালী বাদশাই হোক না কেন। যখনই মানুষ পরাধীন থাকবে তখনই সমাজে অন্যায়-জুলুম-অত্যাচার সংঘটিত হবে। তাই ইসলামের অন্যতম লক্ষ হচ্ছে সমাজ থেকে অন্যায়ের মূলোৎপটন করে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা।
স্বাধীনতা শুধুমাত্র মানুষের মৌলিক অধিকারই নয় বরং ইসলামের সুমহান শিক্ষাও বটে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরাধীন ব্যক্তিদের আজাদ করেছেন, ক্রীতদাস আজাদ করতে সাহাবায়ে কেরামগণকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পরাধীন ব্যক্তিদের আজাদ করেই ক্ষান্ত হননি বরং সন্তান এবং ভাইয়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। ইসলামের যুদ্ধের সেনাপতি থেকে শুরু করে মদিনা মুনাওয়ারার মুয়াজ্জিন পর্যন্ত নিয়োগ করেছেন। স্বাধীনতার স্বপ্নস্বাদের কারণেই ইসলামের বিজয় তরান্বিত হয়েছে। সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্র্য সবাই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করেছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতটা স্বাধীনচেতা রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন তার পরিচয় মেলে পঞ্চম হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত আহযাবের যুদ্ধে। মদিনার অভিশপ্ত ইহুদিদের প্ররোচনায় মক্কার কুরাইশরা যখন মদিনা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়, সে দিন বিশ্বনবী ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য হযরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শক্রমে মদিনার চর্তুদিকে পরিখা খনন করেন। মুসলমানরা যাতে সাওয়াবের আশায় এই কাজে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হয় সে জন্য তিনি নিজেও পরিখা খননের কাজে অংশ নেন। কুরাইশ বাহিনী পরিখা পার হয়ে মদিনায় আসতে না পেরে কিছু দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ব্যর্থ মনে মক্কায় ফিরে যায়। সে সময়টা ছিল বিশ্বনবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত নতুন রাষ্ট্র মদিনার স্বাধীনতা সুরক্ষার এক বিস্ময়কর পদক্ষেপ।
১৯৭১ সালে অসংখ্য জীবন কুরবানি ও ত্যাগের বিনিময়ে দীর্ঘ দিনের পরাধীনতা আর গোলামি থেকে স্বাধীনাত অর্জন করতে সক্ষম হয়ে এ জাতি। যার শুভ সূচনা হয়েছিল এ মার্চ মাসে। আজ সেই স্মৃতিবিজড়িত বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা দিবস।
এ দিবসে মানুষের প্রত্যাশা ছিল, পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সার্থক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সবাই সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ লাভ করবে। দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হয়ে এমন একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী, শিক্ষিত ও দুর্নীতিমুক্ত জনপদ গড়ে উঠবে, যেখানে ভাষা, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান সুফল ভোগ করবে।
অতীব দুঃখের বিষয় হলো স্বাধীনতা-উত্তর চার দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও দেশের সর্বস্হতরে জনগণের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। যে অভাববোধ মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা হলো দেশপ্রেমের অভাব।
অথচ দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতার সার্থক প্রমাণ এবং শিক্ষা রয়েছে বিশ্বনবীর অমূল্য বাণীতে। স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একদিন ও একরাতের সীমান্ত পাহারা ধারাবাহিকভাবে এক মাসের রোজা পালন এবং সারারাত নফল ইবাদতে কাটানো অপেক্ষা উত্তম।’ (মুসলিম)
তিনি আরও বলেছেন, ‘একদিন সীমান্ত রক্ষার কাজে নিযুক্ত থাকা হাজার দিনের মনজিল অতিক্রম অপেক্ষা উত্তম।’ (তিরমিজি)
পরিশেষে...
দেশের সকল নাগরিকের পূর্ণ স্বাধীনতা দান এবং স্বাধীনতা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ বিধান বাস্তবায়ন করা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাহাদিগকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা (রাষ্ট্র ক্ষমতা) দান করলে তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত আদায় করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ নিষেধ করবে; আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ার।’ (সুরা হজ : আয়াত ৪১) আল্লাহ তাআলা এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণ্ন রাখুন, কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক স্বাধীনতার মান ও মর্যাদা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি