ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

বিশ্বনবীর অভিভাবকত্ব গ্রহণ

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:৪৩ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুন্দর ও উন্মুক্ত আবহাওয়ায় প্রতিপালনের পাশাপাশি দুগ্ধপানের জন্য হজরত হালিমার নিকট হস্তান্তর করা হলে তিনি হালিমা গৃহে তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন। অতপর হালিমার গৃহ থেকে তিনি মক্কায় ফিরে আসেন। যদিও তিনি নিজ মা আমিনা, ধাত্রীমাতা হালিমা, দাদা আবদুল মুত্তালিব ও চাচা আবু তালিবের কাছে পর্যায়ক্রমে তাদের তদারকিতে ছিলেন প্রকৃত পক্ষে সর্বদা তিনি আল্লাহর হিফাজতেই ছিলেন। এই সময় আল্লাহ তাআলা দ্রুত তাঁর শারীরিক প্রবৃদ্ধিও দান করেন।

মায়ের ইন্তিকাল
কিছু দিন যেতে না যেতেই তিনি মাকে হারান। ছয় বছর বয়সে মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী ‘আবওয়া’ নামক স্থানে মা আমিনা ইন্তেকাল করেন। সেখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাথে নিয়ে তিনি বনী আদ ইবনে নাজ্জার গোত্রে বিশ্বনবীর মামাদের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মক্কা অভিমুখে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি ইনতিকাল করেন।

আবদুল মুত্তালিবের তত্ত্ববধান
মায়ের ইন্তিকালের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাদার একক তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হতে থাকেন। আবদুল মুত্তালিবের জন্য কাবার ছায়ায় চাদর বিছানো হতো। আবদুল মুত্তালিব সেখানে উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত ঐ চাদরে তাঁর সম্মানার্থে কেউ বসতো না। কিন্তু দৃঢ়চেতা কিশোর বিশ্বনবী এসেই বিছানার ওপর গিয়ে বসে পড়তেন। উপস্থিত সবাই তাঁকে ধরে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করতেন। কিন্তু দাদা আবদুল মুত্তালিব বলতেন, ‘তোমরা আমার পৌত্রকে বাধা দিও না। আল্লাহর কসম, ‘সে এক অসাধারন ছেলে।’ অতপর দাদা তার পৌত্রকে সাথে নিয়ে চাদরের বসতেন এবং তাঁর পিঠে হাত বুলিয়ে আদার করতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আট বছর পূর্ণ হলে আবদুল মুত্তালিব মারা যান।

আবু তালিবের তত্ত্বাবধান
আবদুল মুত্তালিবের ইন্তেকালের পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাচার কাছে লালিত-পালিত হতে লাগলেন। তৎকালে বনু লেহাব গোত্রের এক ব্যক্তি মানুষের দৈহিক লক্ষণসমূহ দেখে ভাগ্য বিচার করতো। কুরাইশরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ভাগ্য জানতে তার কাছে ভিড় জমাতো। অন্যদের সাথে আবু তালিবও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে উক্ত গণকের কাছে গেলেন। গণক তাঁর দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই কি যেন একটু ভাবলেন এবং বললেন এ বালককে নিয়ে একটু বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে। আবু তালিব বিশ্বনবীর প্রতি গণকের বিশেষ মনোযোগ লক্ষ্য করে তাঁকে কৌশলে সরিয়ে দিলেন। এতে গণক বলল, ‘তোমাদের এ কি কাণ্ড! বালকটাকে আমার কাছে আবার নিয়ে এসো। আল্লাহর কসম, এ এক অসাধারণ বালক।’

কিছুদিন পর আবু তালিব সিরিয়ায় বাণিজ্যে রওয়ানা হলেন। বিশ্বনবীও চাচার সঙ্গে যাওয়ার আবদার করলেন। স্নেহবিগলিত চাচা তার আবদার রক্ষার্থে তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন।  চাচা আবু তালিব তাকে সর্বদা সঙ্গে সঙ্গে রাখতেন।

পথিমধ্যে বুসরা এলাকায় পৌছলে বিশ্বনবীকে কেন্দ্র করে বাহিরা খ্রিস্টান পাদ্রী আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। আপ্যায়নের পর তিনি বিশ্বনবীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হলেন এ শিশু মুহাম্মাদ হবেন শেষ নবী। তিনি চাচা আবু তালিবকে সতর্ক করে দিলেন ইহুদিদের থেকে বিশ্বনবীকে নিরাপদ রাখতে। এবং সফর বাতিল করে মক্কায় ফিরে যেতে। চাচা আবু তালিব তাই করলেন। যাত্রা বিরতি দিয়ে তিনি মক্কায় ফিরে এলেন। তিনি বিশ্বনবীকে একা রেখে কোথাও যেতেন না।

এমনকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়্যত প্রাপ্তির পরও তিনি নিজে ইসলাম গ্রহণ না করলেও নবুয়্যতের কাজে তাঁকে সার্বিক সহযোগিতা করতেন। তাঁর জীবদ্দশায় মক্কায় বিশ্বনবীকে কেউ কিছু বলার সাহস পেত না।

সুতরাং যদিও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বয়সভেদে ধাত্রীমাতা হালিমা, নিজ মা আমিনা, দাদা আবদুল মুত্তালিব, চাচা আবু তালিবের তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ তাআলাই তাঁকে সব সময় সব কাজে তত্ত্ববধান করতেন।

সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য যিনি রহমত। রবিউল আউয়াল মাসে এ মহামানবের আদর্শ প্রচার, প্রসার এবং ব্যক্তি জীবন থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সকল ক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নই হোক ঈমানের দাবি। আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুহাম্মাদীকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলোক উজ্জ্বলময় জীবনী প্রচার এবং এ থেকে উত্তম শিক্ষা লাভের সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

আরও পড়ুন