সন্তান যখন পরীক্ষার কারণ হয়
সন্তানকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তোলার বিষয়ে কোরআন-সুন্নায় বাবা-মাকে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবা-মার উদ্দেশ্যে বলেছেন-
‘কোনো বাবা তার ছেলেকে উত্তম শিষ্টাচার অপেক্ষা বেশি উত্তম আর কোনো বস্তু দান করতে পারেন না।’ (তিরমিজি)
তাই প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব সন্তানকে সুশিক্ষায় গড়ে তোলা। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারি তবেই তাদের কাজ-কর্ম ও আমল আমাদের জন্য সাদকায়ে জারিয়ার কারণ হবে। যা আমাদের মৃত্যুর পর হবে কল্যাণের। তাহলে কেন আমি আমার সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলব না!
মহামারি থেকে নিজেদের রক্ষায় আমরা উদগ্রীব থাকি। কিন্তু আজ সমাজে আত্মিক তথা নৈতিক ব্যাধি মহামারির রূপ ধারণ করেছে। এ থেকে সন্তানদের রক্ষার জন্য কি আমাদের সুপরিকল্পনা ও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক নয়?
আমাদের সন্তানরা আজ মানুষ হত্যা করছে, নারীদের নির্যাতন করছে, শিশুদের হত্যা করছে, নেশাগ্রস্ত হয়ে দিকবিদিক ঘুরছে। এককথায় সব ধরণের পাপ ও অবৈধ কাজে জরিয়ে পড়ছে। আমরা কি পারি না, সমাজ ও দেশ থেকে সকল প্রকার নৈরাজ্য দূর করতে?
হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা পারব; আর এর জন্য প্রয়োজন প্রত্যেক বাবা-মাকে সচেতন হওয়া। আমরা যদি আমাদের সন্তানের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি রাখতে সক্ষম হতাম তাহলে হয়তো আদরের সন্তানদের এই পরিণতি দেখতে হত না।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য এ পৃথিবীতে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে থাকেন। অনেককে আল্লাহ তাআলা প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেন ঠিকই কিন্তু সেই ধন-সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার না করার ফলে দেখা যায় সেসব ধ্বংস হয়ে যায়। আবার কাউকে সন্তান-সন্তুতি দেন ঠিকই কিন্তু তাদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত না করার ফলে এই সন্তান তার জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। অথচ আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে এ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন-
১. ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুনিয়ার সৌন্দর্য। এ সন্তান-সন্তুতি যদি আদর্শ চরিত্রের না হয় তাহলে তা হয় মা-বাবার জন্য পরীক্ষার কারণ-দুঃখের বোঝা।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ৪৬)
২. ‘আর জেনে রাখ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি পরীক্ষার কারণ।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২৮)
৩. ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে (বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে) আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সে ব্যাপারে তার অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)
মনে রাখতে হবে
একই বীজ উন্নত মাটি না পেলে অঙ্কুরিত হলেও চারাগাছে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। অনুরূপভাবে কোনো শিশু ভালো পরিবারে জন্ম নিলেও উন্নত সমাজ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ না পেলে, পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে সেও নষ্ট হয়ে যায়।
তাই প্রত্যেক বাবা-মা ও অভিভাবকের কর্তব্য, সে যেন কেবল নিজের ভালো হওয়ার চেষ্টা না করে বরং পরিবারের সবাইকে পুণ্যবান-মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তোলে। সব ধরণের পাপ ও খারাপ থেকে বাঁচার জন্য সঠিকভাবে শিক্ষা দেয়।
আমরা যদি সন্তানদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় গড়ে তুলতে পারি তবেই প্রতিটি পরিবারে বিরাজ করবে শান্তি। সমাজ, জাতি, দেশ পাবে আদর্শ সন্তান। তাই সময় থাকতেই সন্তানের প্রতি সুদৃষ্টি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদের ইসলামি জীবন ব্যবস্থার সঠিক শিক্ষায় গড়ে তুলি। কেননা আজকের শিশুই হবে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর সে হবে দেশ ও জাতির গর্ব।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে মহামারির বিপর্যয়ে সতর্কতা অবলম্বনের মতো সন্তানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখারও তাওফিক দান করুন। তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস