ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

সালামের উত্তর মাথা নেড়ে দেওয়া যাবে কি?

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৪৪ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০২১

সালাম দেওয়া সুন্নাত। উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। ইচ্ছাকৃতভাবে সালামের উত্তর না দেওয়া ওয়াজিব তরকের গোনাহ। কিন্তু কেউ কেউ নীরবে, মনে মনে সালামের উত্তর দেয় আবার অনেকে সালাম শুনে মাথা নেড়ে সায় দেয়। কিন্তু এভাবে নীরবে কিংবা সালামের উত্তর মাথা নেড়ে দেওয়া যাবে কি?

ভাব বিনিময়, দেখা-সাক্ষাতে সালাম দেওয়া-নেওয়া ইসলামের অন্যতম আদর্শ ও সৌন্দর্য। সালাম হলো দোয়া। সালামের অর্থ হলো- ‘আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।’ সুতরাং সালামের উত্তরও সুন্দরভাবে সালাম প্রদানকারীকে শুনিয়ে তার জন্য এভাবে দোয়া করা যে- ‘আপনার উপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।’ বরং হাদিসের নির্দেশনা হলো- সম্ভব হলে আরও বেশি বাড়িয়ে দোয়া করা বা সালামের উত্তর দেওয়া।

সুন্নাত এ আমলটির উত্তর দেওয়া ওয়াজিব এবং সাওয়াবের কাজ। সালাম দেওয়া ও নেওয়ার এ বিষয়টি ছোট হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জানার বিষয় হলো-

কেউ কাউকে সালাম দিলে সালামের উত্তর নীরবে দেয়া যাবে কি? মাথা নেড়ে দেওয়া যাবে কি? কিংবা সালামের উত্তর কীভাবে দিতে হবে? সালামেরউত্তর দেয়া সম্পর্কে ইসলামের বিধানই বা কী?

বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  ‘না’, মাথা নেড়ে বা হাতে ইশারা করলে সালামের উত্তর দেওয়ার ওয়াজিব আদায় হবে না। অর্থাৎ সালামের উত্তর (ওয়া আলাইকুমুস সালাম) মুখে উচ্চারণ না করে শুধু মাথা নাড়লে কিংবা হাতে ইশারা করলে সালামের উত্তর দেওয়ার ওয়াজিব আদায় হবে না।

বরং ন্যূনতম নীরবে কিংবা নিঃশব্দে উচ্চারণ করার মাধ্যমে সালামের উত্তর দিতে হবে। যদি কেউ নীরবে সালামের উত্তর দেয় কিংবা নিঃশব্দে মনে মনে সালামের উত্তর দেয় তবে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। মুখে উচ্চারণ ছাড়া মাথা নেড়ে কিংবা হাতে ইশারা করলে সালামের ওয়াজিব আদায় হবে না।

সালামের উত্তর দেওয়ার উত্তম নিয়ম

উচ্চ স্বরে এবং সুন্দরভাবে মিষ্টি ভাষায় খুশি মনে সালামের উত্তর দেওয়া জরুরি। তা না হলে এতে বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে সালামের মূল উদ্দেশ্য ‘ভাব-বিনিময়ে/অভিভাদন’ ব্যাহত হয়। কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার লঙ্ঘন হয়। কেননা কোরআন-সুন্নায় সুন্দর ও উত্তমভাবে সালাম দেওয়া-নেওয়ার দিকনির্দেশনা এসেছে।

কুরআনের সালামের নির্দেশ

সালাম হলো দোয়া। এ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا

’আর যদি কেউ তোমাদের জন্য দোয়া করে (সালাম দেয়), তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর। তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৬)

এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী সালামের উত্তর শুনিয়ে সুন্দরভাবে আরও বাড়িয়ে দেয়া উত্তম। সম্ভব হলে বেশি দোয়া করা। সম্ভব না হলে যেটুকু সালাম বা দোয়া করা হয় ন্যূনতম ততটুকু উত্তর দেয়া বা দোয়া করা জরুরি। এতে পরস্পরের আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়। শত্রুতা দূর হয়ে যায়। ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।

নীরবে-নিঃশব্দে উত্তর দেওয়ার ক্ষতি

কেউ যদি সালামের উত্তর সুন্দরভাবে না দেয় বা উচ্চস্বরে শুনিয়ে না দেয়; তবে অনেক ক্ষেত্রে তাতে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। তা এমন-

১. অনেকেই সালামের উত্তম মনে মনে (নীরবে) দিয়ে থাকে। এমনভাবে সালামের উত্তর দেওয়ার ফলে পরস্পর আন্তরিকতা ও ভালোবাসা সৃষ্টির পরিবর্তে মনের মধ্যে বিদ্বেষ ও ক্ষোভ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

২. কেউ কাউকে আগ্রহ নিয়ে সালাম দিল, কিন্তু আগ্রহের সঙ্গে উত্তর না পেলে কিংবা খুব নিম্ন স্বরে বা নীরবে-নিঃশব্দে উত্তর পেলে তাতে সালাম দেওয়া ব্যক্তির মনে সন্দেহ বা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, মনক্ষুন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কিংবা ওই ব্যক্তির মাঝে হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়। ফলে এক সময় পরস্পর সালাম বিনিময়ের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

সে কারণেই সালাম বিনিময়ে কোরআনের নির্দেশ হলো-

وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا

’আর যদি কেউ তোমাদের জন্য দোয়া করে (সালাম দেয়), তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া কর। তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মত ফিরিয়ে বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৬)

মনে রাখা জরুরি

একে অপরকে দেখলেই সালাম দেওয়া ইসলামের রীতি, আদর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। এ কারণেই হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোসণা করেন-

’কথা বলার আগেই সালাম দেয়া।’ (মেশকাত)

সুতরাং প্রয়োজনীয় কিংবা জরুরি যত কথা কিংবা কাজই থাকুক না কেন, দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই উচ্চ স্বরে সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষায় সালাম দিতে হয় এবং সালামের উত্তর দিতে হবে। এভাবে সালাম বিনিময়ের ফলে মানুষের সব তিক্ততা-হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-

‘সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি হয়।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, মেশকাত)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মাথা নেড়ে কিংবা হাতের ইশারায় নয়; বরং উচ্চ শব্দে প্রাঞ্জল ভাষায় সালাম বিনিময় করা। কোরআন-সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সালাম দেয়ার পর উচ্চ শব্দে প্রাঞ্জল ভাষায় সালাম বিনিময় করার তাওফিক দান করুন। সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী সালামের উত্তর ও প্রচলন অব্যাহত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

আরও পড়ুন