ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ভ্যাকসিন নেওয়া প্রসঙ্গে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ০৪ আগস্ট ২০২১

ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের একটি অন্যতম উপায়। জটিল-কঠিন মহামারি ও রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ থাকার জন্য রোগের ধরণ অনুযায়ী টিকা-ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। সুস্থতার জন্য এসব টিকা গ্রহণে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?

টিকা বা ভ্যাকসিন গ্রহণ মুলত সুস্থ থাকার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের উপায়। রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ থাকতে ইসলামে চিকিৎসা গ্রহণ ও ভ্যাকসিন নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা থেকেই তা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘মৃত্যু ছাড়া এমন কোনো রোগ নেই; যার চিকিৎসা নেই।’

দুনিয়াতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যু সুনিশ্চিত। তবে কার মৃত্যু কখন হবে এটা নিশ্চিত করে কেউ জানে না। তাই হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত্যুর আগে সুস্থতার জন্য চিকিৎসা গ্রহণে ইসলামে কোনো প্রতিবন্ধকতা বা বাধা নেই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হলে নিজে চিকিৎসা নিতেন এবং অন্যদেরকেও চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করতেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে প্রমাণিত।
১. হিজামা
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, নিজেও চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বুখারিতে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাথা ব্যথা হয়েছিল। তিনি আবু তাইয়্যেবা নামে একজনকে ডেকে নিজের মাথা হিজামা করিয়েছিলেন। হিজামার বিনিময়ে তিনি তাকে দিনার অথবা খাদ্য সামগ্রী দিয়েছিলেন।’

২. কায়ী বা থেরাপি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে কায়ী করার বর্ণনা পাওয়া যায়। কায়ী বলা হয় লোহা জাতীয় বস্তু গরম করে ব্যথার জায়গায় সেক দেওয়া। বর্তমান আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটিকে থেরাপি বলা হয়।
‘থেরাপির মাধ্যমে মানুষ অনেক ব্যাধি থেকে আরাম লাভ করে থাকে। থেরাপির মাধ্যমে নিজেও চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি’।

৩. লুদুদ বা দপ দেওয়া
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বর থকে সুস্থ থাকার জন্য লুদুদ বা নামে দপ নিয়েছিলেন। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। জ্বর থেকে সুস্থতায় তিনি উম্মাহাতুল মুমিনীনদের বলেছিলেন তাকে লুদুদ করাতে। লুদুদ বলা হয় নাকে দপ দেওয়া।

৪. স্বচ্ছ পানিতে গোসল
হাদিসের এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হলে তিনি সাহাবায়ে কেরামকে এ মর্মে দিকনির্দেশনা দেন যে, ‘আমাকে একটা বরতনে (চিনা মাটির পাত্রে) বসাবে এরপর ৭ পুকুর থেকে স্বচ্ছ পানি নিয়ে এসে তা আমার শরীরে ঢালবে। সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী এমনই করেছিলেন। এর মাধ্যমে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

রোগ-মুক্তিতে এগুলো ছিল তিব্বুন নববি বা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুস্থ হয়ে ওঠার বাস্তব চিত্র। সুস্থ থাকতে হাদিসের এসব দিকনির্দেশনাই প্রমাণ করে যে, রোগ মুক্তি কিংবা রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসা বিজ্ঞানের তৈরি যে কোনো ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা গ্রহণ করা বৈধ।

এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিকিৎসা গ্রহণে মুখে আদেশ করেছেন এবং নিজের জীবনেও চিকিৎসা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করেছেন।

সুতরাং বর্তমান যুগে মহামারি করোনাসহ যাবতীয় রোগ ও রোগ নিরাময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী টিকা বা ভ্যাকসিন গ্রহণে কোনো বাধা নেই। বরং সুস্থ থাকতে টিকা-ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা গ্রহণ সরাসরি সুন্নাতের রাসুলের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আমল।

মনে রাখতে হবে
রোগ-ব্যাধি ও মহামারিতে চিকিৎসা গ্রহণ করা বিশ্বনবির নির্দেশ ও সুন্নাতি আমল। এ জন্যই সবার উচিত টিকা-ভ্যাকসিন নেওয়া ও চিকিৎসা গ্রহণ করা। এসব চিকিৎসা সুস্থ হওয়ার উপায়। মহান আল্লাহ তাআলাই বান্দাকে এসব চিকিৎসার ওসিলায় পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করবেন।

তাছাড়া বর্তমান সময়ে ভ্যাকসিন বা টিকা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি। কেননা টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়া ছাড়া ওমরাহ পালনে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণেরও সুযোগ নেই। তাই রাষ্ট্রের নিয়ম মেনে মহামারি করোনার টিকা গ্রহণ করা আবশ্যক।

হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা জরুরি। তাহলো-
১. নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিকা গ্রহণ করা।
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ টিকা গ্রহণ করা।
৩. আল্লাহ তায়ালার উপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে টিকা গ্রহণ করা।
৪. পড়া-লেখার সুবিধার্থে শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণ করা।
৫. হজ ও ওমরায় আগ্রাধিকার পেতে দেশের ওলামায়ে কেরাম, ছাত্র ও সর্বস্তরের মানুষকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা জরুরি।

এ মানসিকতা পরিহার করা জরুরি যে-
‘ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই ভ্যাকসিন নেওয়ায় উপকার কী? না; কোনোভাবে এ মানসিকতা পোষণ করা যাবে না। আবার ভ্যাকসিন নিলে তাড়াতাড়ি মৃত্যু হবে কিংবা ভ্যাকসিন-এর মাধ্যমে শরীরে কি প্রবেশ করানো হচ্ছে তা বুঝা সম্ভব নয় ইত্যাদি অজুহাত দাঁড় করানো কোনোভাবেই ঠিক নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ সবাইকে করোনার ভ্যাকসিনসহ যে কোনো রোগ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ করে সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ

আরও পড়ুন