আকস্মিক বিপদ থেকে বাঁচতে যে দোয়া ও আমল করবেন
সম্প্রতি ঢাকার মগবাজারে ঘটে গেলো ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এসব দুর্ঘটনা নিঃসন্দেহে হৃদয়বিদারক। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এমন দুর্ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটতে দেখা যায়। হঠাৎ ঘটে যাওয়া এসব বিপদ-আপদ ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতে তাওবাহ-ইসতেগফারসহ নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যায় একাধিক দোয়া ও আমল রয়েছে। তাহলো-
১. হজরত জুবাইর ইবনু আবু সুলাইমান ইবনু জুবাইর ইবনু মুত্বইম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে এ দোয়াগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন না-
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ دِيْنِيْ وَدُنْيَايَ وَأَهْلِيْ، وَمَالِيْ، اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِيْ، وَآمِنْ رَوْعَاتِيْ، اَللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْ بَينِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِيْ، وَعَنْ يَمِيْنِيْ، وَعَنْ شِمَالِيْ، وَمِنْ فَوْقِيْ، وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনী ওয়া দুনইয়াইয়া, ওয়া আহলি ওয়া মালি। আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতি ওয়া আমিন রাওআতি। আল্লাহুম্মাহফাজনি মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া শিমালি ওয়া মিন ফাওকি। ওয়া আউজু বিআজামাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাই আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন; আমার উদ্বিগ্নতাকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাজত করুন- আমার সামনের দিক থেকে, আমার পেছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের ওসিলায় আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
সুতরাং যে কোনো বিস্ফোরণ, পাহাড় ধ্বস, বজ্রপাত, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বন্যায় লঞ্চডুবির মতো যে কোনো দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকতে হাদিসের বর্ণিত এ দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত আমল করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়ার মাধ্যমেই অনাকাঙ্ক্ষিত সব বিপদাপদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
২. সকাল-সন্ধ্যার বিশেষ আমল
হজরত উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দোয়াটি ৩ বার পাঠ করবে, কোনো কিছুতেই তার অনিষ্ট/ক্ষতি হবে না-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামায়ি ওয়া হুয়াস্সামিউল আলিম।’
অর্থ : ‘ওই আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ (তিরমিজি)
৩. নিয়মিত ৪ তাসবিহ’র আমল
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একদিন এক আরব বেদুইন এসে বললেন- হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে (যে কোনো) একটি ভালো আমল শিখিয়ে দিন-
তখন এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বেদুইনের হাত ধরলেন। আর তাকে (সামনে বসিয়ে) এ শব্দগুলো শেখালেন এবং বললেন এ শব্দগুলো (৪ তাসবিহ) বেশি বেশি পড়বে-
> سُبْحَانَ الله : সুবহানাল্লাহ; আল্লাহ পবিত্র
> اَلْحَمْدُ للهِ : আলহামদুলিল্লাহ; সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য
> لَا اِلَهَ اِلَّا الله : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই
> اَللهُ اَكْبَر : আল্লাহু আকবার; আল্লাহ তাআলাই মহান (সবচেয়ে বড়)।
লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত এ কথাগুলো শুনে কোনো কিছু না বলে ওঠে চলে গেলেন। (অর্থাৎ এ আমলটির ব্যাপারে তার আগ্রহ বাড়েনি)
তারপরের ঘটনা...
কিছুদূর যাওয়ার পর লোকটি কি যেন চিন্তা করে আবারও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ফিরে আসে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁকে দেখে) মুচকি হাসলেন।
লোকটি ফিরে এসে প্রিয়নবির সামনে বসে বললেন-
(হে আল্লাহর রাসুল!) ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’- আপনি যে এ তাসবিহগুলো আমাকে শেখালেন, এ বাক্যগুলো তো আল্লাহর জন্য। এতে আমার জন্য কী রয়েছে? এগুলো পড়লে আমি কী পাবো?
এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন-
> তুমি যখন বলবে- ‘সুবহানাল্লাহ’; আল্লাহ তাআলা বলবেন- তুমি সত্য বলেছ।
> তুমি যখন বলবে- ‘আলহামদুলিল্লাহ’; আল্লাহ তাআলা বলবেন- তুমি সত্য বলেছ।
> তুমি যখন বলবে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’; আল্লাহ তাআলা বলবেন- তুমি সত্য বলেছ।
> তুমি যখন বলবে- ‘আল্লাহু আকবার। আল্লাহ তাআলা বলবেন- তুমি সত্য বলেছ।
অতঃপর জিকিরকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে নিজের (কাঙিক্ষত) চাহিদাগুলো (ধারাবাহিকভাবে যা চাইবে) তুলে ধরবে (যেমন)-
> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ) আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِىْ) ‘আল্লাহুম্মার জুক্বনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিজিক দান করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমাকে ইতিমধ্যে রিজিক দান করেছি।’
> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْحَمْنِىْ) আল্লাহুম্মার হামনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে অনুগ্রহ করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, ইতিমধ্যে তোমার প্রতি রহম করেছি।
কোনো বান্দা যদি নিয়মিত এ ৪ তাসিবহর আমল করে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করে যে কোনো দুর্ঘটনা, মহামারি ও বিপদাপদ থেকে মহান আল্লাহর কাছে রহমত বা দয়া কামনা করে; তবে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে সব বিপদাপদ, মহামারি ও আকস্মিক দুর্ঘটনা থেকে অবশ্যেই নিরাপদ রাখবেন। (ইনশাআল্লাহ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আকস্মিক যে কোনো বিপদাপদ, যাবতীয় রোগ-ব্যাধি, বজ্রপাত ও মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকতে হাদিসের এ আমলগুলো নিয়মিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ